দারুচিনি একটা সুগন্ধযুক্ত মশলা হিসাবে প্রায় প্রতিটা রান্নাঘরে দেখতে পাওয়া যায়। দারুচিনির জোরালো সুগন্ধ এবং স্বাদ একে মিষ্টি এবং মশলাদার বিনোদনের একটা খাঁটি ফোড়ন হিসাবে উপস্থিত করে। কিন্তু এই মশলা শুধুমাত্র রান্নাঘরের আলমারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আয়ুর্বেদীয় এবং ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন-এ (TMC) বহুদিন যাবত দারুচিনি এর নিরাময় করার উপযোগিতার জন্য উঁচুদরের মান্যতা পেয়ে আসছে। পরম্পতাগত পশ্চিমী ঔষধ পদ্ধতিও এই মশলাকে উচ্চস্তরের মান্যতা দেয়। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলি অনুযায়ী, লবঙ্গের পরেই দারুচিনি হল সর্বোত্তম অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। এটা জানতে পেরে আপনাকে আগ্রহী করে তুলতে পারে যে এই মশলার একটা দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। দারুচিনির প্রাচীনতম ব্যবহার প্রায় 2000-2500 BC আগেকার সময়ের। ইহুদী (Jewish) বাইবেলে দারুচিনি একটা প্রলেপ লাগাবার মাধ্যম হিসাবে উল্লিখিত আছে এবং এটা মিশরীয়দের (Egyptians) দ্বারা তাঁদের শবদেহকে মমিতে পরিণত করার কাজেও ব্যবহৃত হ’ত। রোমে, শবদেহের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে দারুচিনি থাকতো। বস্তুত:, রোমে এই মশলা এতোটা উচ্চ মূল্যবান ছিল যে এটা শুধু ধনী ব্যক্তিদের একটা পণ্য হিসাবে থাকতো।
আপনি কি জানতেন?
কিছু ইতিহাসবিদের মতে, ভাস্কো ডা গামা এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাস মশলাপাতি এবং ভেষজ ঔষধি, বিশেষত: দারুচিনির সন্ধানে মূলত: তাঁদের সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন। এটা সত্যি, শ্রীলঙ্কার দেশজ দারুচিনি আদিতে পর্তুগিজদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল এবং আজ পর্যন্ত তা অত্যন্ত মূল্যবান রয়েছে। তাসত্ত্বেও, সারা বিশ্ব জুড়ে শেফ এবং বেকারদের (রুটি/কেক প্রস্তুতকারী) কাছে এটা অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রিয় মশলা। দারুচিনি গাছের ভিতরের বাকল (ছাল) থেকে দারুচিনি পাওয়া যায়। এটা একটা চিরহরিৎ গাছ (দীর্ঘ সময় বাঁচে) যা বিশ্বের গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলিতে প্রধানত: দেখতে পাওয়া যায়। দারুচিনি গাছ 18 m উচ্চতা পর্যন্ত বাড়তে পারে কিন্তু চাষ করে জাত গাছগুলি 2-3 m থেকে যেকোন উচ্চতায় বাড়তে পারে। এর সমান্তরাল শিরাসহ সুস্পষ্ট শক্ত পাতা আছে যা উভয় প্রান্তে যুক্ত থাকে (বে লিভস বা তেজপাতার মত) । দারুচিনির ফুলগুলি অপূর্ব সুন্দর হলুদ গুচ্ছরূপে জন্মায় এবং দারুচিনি ফল হচ্ছে এক ধরণের জাম (berry) যা পাকলে কালো হয়ে যায়।
দারুচিনির ব্যাপারে কয়েকটা মূল তথ্য:
- উদ্ভিদবিজ্ঞানসম্মত নাম: সিনামোমাম ভেরাম/সিনামোমাম জাইলেনিকাম
- জাতি: লরেসিয়াই
- প্রচলিত নাম: সিনামন,ডালচিনি
- সংস্কৃত নাম: দারুসীতা
- ব্যবহৃত অংশ: বাকল (ছাল)
- দেশীয় অঞ্চল এবং ভৌগোলিক বিস্তৃতি: দারুচিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশজ কিন্তু এটা পৃথিবীর অধিকাংশ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে চালু আছে। আসল দারুচিনির বেশিরভাগ শ্রীলঙ্কা, মালাগাসি রিপাবলিক এবং সেশেলস দ্বীপে পাওয়া যায়। ভারতে, কেরালায় আসল দারুচিনি চাষ করা হয়।
- শক্তিসমূহ: উষ্ণ। বাত এবং কফদোষগুলি প্রশমিত করে কিন্তু পিত্ত দোষ বাড়ায়।