বেশ কিছু খাদ্য সংক্রান্ত ও জীবনধারা সম্পর্কিত পরিবর্তন করলে স্ফীতভাব এড়ানো সম্ভব ও একটি সুস্থ সমতল পেট পাওয়া সম্ভব। নিম্নলিখিত গুলি হল এমন কিছু ব্যপারের তালিকা যেগুলি আপনার ভুঁড়ি হওয়া আটকাবে।
ধূমপান বন্ধ করুন
ধূমপান ও তার পাকতন্ত্রজনিত রোগের ওপর প্রভাবের ওপর করা একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে ধূমপানের সাথে স্ফীতভাব ছাড়াও পেট ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যের যোগাযোগ রয়েছে। সুতরাং আপনার সিগারেটটি নামিয়ে রেখে সুস্থ জীবন ও স্বাস্থ্যবান পেট বেছে নেওয়া উচিৎ।
সীমিত মদ্যপান
“ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ওব অ্যলকোহলিজিম অ্যন্ড অ্যলকোহল অ্যবিউজ” দ্বারা প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে মদ যকৃৎ ও অগ্নাশয় সহ হজম এবং অন্যান্য বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করে। ফলত, খাবার ঠিকভাবে হজম হয়না এবং ঝুঁকি থেকেই যায় যকৃতের ভেতরে ও বাইরে চর্বি জমার ও স্ফীতভাবের সাথে সাথে আরও গুরুতর অবস্থা আসার। সেহেতু দুঃখিত হওয়ার চেয়ে নিরাপদ থাকা ভাল এবং সীমিত পরিমাণে মদ্যপান করলে আপনি নিজেকে শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
তৈলাক্ত ও ফ্যাট জাতীয় খাবার সীমিত রাখুন
তৈলাক্ত খাবারে অনেক ধরণের অস্বাস্থ্যকর উপকরণ থাকে যেমন ট্রান্স-ফ্যাট, সংরক্ষক, কৃত্রিম অ্যাডিটিভ, চিনি ইত্যাদি যেগুলি উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন হওয়ার কারণে হজম হতে সময় লাগে এবং তার চেয়েও বেশি সময় লাগে শরীর থেকে তা নিষ্কাসিত হতে। সুতরাং যতটা সম্ভব বাইরের ভাজাভুজি ও তৈলাক্ত খাবারের থেকে দূরে থাকা যায় ততটাই দূরে থাকা যাবে স্ফীতভাবের থেকে।
চর্বিযাত খাবার বেশিরভাগ সময় পেটের জায়গায় চর্বি জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায় বিশেষত বনস্পতি তেল থেকে তৈরি হওয়া খাবার। সেহেতু চর্বিজাতীয় খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকলে স্ফীতভাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।
খাবার খাওয়ার সময় জল খাওয়া এড়িয়ে চলুন
খাবার খাওয়ার সময় স্বল্প পরিমাণে জলে চুমুক দেওয়া বিশেষ উদ্বেগের কারণ নয় তবে এক বা দুই গ্লাস জল এই সময় খেলে তা হজমের প্রক্রিয়াতে বাধা দেয় এবং স্ফীতভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং এই সময়ে জল খাওয়া থেকে বিরত থাকলে হজম করার পাচক রসগুলি লঘু হওয়া থেকে আটকানো যাবে।
দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন
অনেক লোকেই জানেনা যে তারা ল্যাকটোজে অসহিষ্ণু হয়ে থাকতে পারে, যার মানে হল তাদের দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য হজম করতে অসুবিধা হয়। এটি স্ফীতভাব আসার অন্তর্নিহিত কারণ। সুতরাং দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়ার পর লক্ষ্য করুন আপনার পেটে কিরকম অনুভব করছেন। কিছু সপ্তাহের জন্য খাদ্যতালিকা থেকে এগুলি বাদ দিয়ে লক্ষ্য করুন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন কি না।
ধকলমুক্ত হন
উপরুক্ত অনুযায়ী, স্ফীতভাব সহ অন্ত্রের বহু সমস্যার সাথে ধকলের যোগাযোগ পাওয়া গেছে। সুতরাং আপনার সময়সূচি থেকে খানিকটা সময় বের করুন এবং মনকে স্থির করুন। সুস্থ শরীর ও প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার পেছনে একটি সুস্থ মনের অবদান বিশাল। খুশি থাকুন ও স্ফীতভাব দূরে রাখুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
স্বাস্থ্যকর ওজন এবং উন্নত রক্ত সঞ্চালনের জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা যে চিরকালই সহায়ক টা বলাই বাহুল্য। সুতরাং স্ফীতভাবের থেকে দূরে থাকতে আপনার উচিৎ শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং ওই পেশীগুলিকে সচ্ছল রাখা।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান
যেমন আমরা আগে বলেছি, জলের বিষাক্ত পদার্থ, অতিরিক্ত চিনি, অতিরিক্ত নুন শরীর থেকে বের করে দেয় এবং পেটে চর্বি জমা প্রতিরোধ করে। সুতরাং জলের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখুন এবং নিশ্চিতভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে খান যাতে আপনার পেট সুস্থ ও ত্বক দীপ্তিময় থাকে।
নুন ও চিনির পরিমাণে হ্রাস টানুন
নুন ও চিনিতে হ্রাস টানলে শুধুমাত্র শরীরের জল ধরে রাখার থেকে বা স্ফীতভাব থেকেই মুক্তি পাবেন তা নয়, দীর্ঘকালের কথা ভাবলে, আপনার শরীরের সার্বিক ভাল স্বাস্থ্যের উদ্দেশে এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত হবে।
কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
স্বাদযুক্ত সোডা ও বিয়ারের মত কার্বনেটেড পানীয়তে কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে যেটি আপনার অন্ত্র ও মলাশয়ে জমতে থাকে এবং আপনার পেটের স্ফীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে চিনি ও মাদক মেশানো থাকে(বিয়ার) যেগুলি সীমিত পরিমাণে সেবন করতে বলা হয় স্ফীতভাব এড়াতে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার অন্ত্রকে সুখি ও স্বাস্থ্যকর রাখে। সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ফাইবারে সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খান, তৈলাক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন, ফল ও সবজির রস খান, সবুজ শাকসবজি খান, দুধের চেয়ে দুগ্ধজাত দ্রব্য, যেমন দই ইত্যাদি খান বেশি, কারণ এতে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া থাকে।
অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন
অনেক সময়ে আমদের যতক্ষণ না মন ভরছে আমরা খেয়েই যাই, যা আমাদের পাকস্থলীর ধারন করার ক্ষমতা অতিক্রম করে যায়। এই ব্যপারটিকেই আমরা অতিরিক্ত খাওয়া বলে থাকি। অতিরিক্ত খাওয়া নিশ্চিতভাবেই আপনার অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, এবং কিছু সময়ের জন্য চলতে থাকলে স্ফীত পেটের কারণ হয়েও দাঁড়াবে। সেহেতু আহার হওয়া উচিৎ ছোট এবং ঘন ঘন।