মৌরি বীজ একটি সুস্বাদু মসলা যা জিরের বীজের মত দেখতে কিন্তু তার চেয়ে একটু বেশি মিষ্টি। মৌরি গাছ থেকে এই বীজ পাওয়া যায়। মৌরি গাছ আর গাজর একই পরিবারের গাছ। ভারতবর্ষে এমন কোন পরিবার নেই যারা এর সুগন্ধ জানেন না। মৌরির একটি উষ্ণ সুগন্ধ আছে এবং সাধারণত সবুজ বা বাদামী রঙের হয়। প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে মৌরি ব্যবহার করা হয়। শুকনো ভাজা মৌরি মুখশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ভোজনের পর ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতে মৌরির জলকে হজমের পক্ষে উপকারী বলে মানা হয়। পূর্ব ভারতে, পাঁচ ফোড়ন মশলার একটি প্রধান উপাদান। উত্তর ভারতে, বিশেষত কাশ্মীর এবং গুজরাটে এর ব্যবহার আছে।
মৌরির আদি বাসস্থান ভূমধ্য সাগর অঞ্চল। প্রথমে গ্রীকরা এর চাষ করতেন এবং তারপরে সমগ্র ইউরোপ মহাদেশে এটির ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। আরও পরে, এর ঔষধি গুণের জন্য পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও এটি ছড়িয়ে যায়। বর্তমানে ভারতে এর চাষ সর্বাধিক। অন্যান্য দেশ, যেখানে এর চাষ হয়, সেগুলি হল রাশিয়া, রোমানিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্স।
রন্ধনে উৎসাহী ব্যক্তিরা মৌরির ব্যবহার ভাল করেই জানেন। কিন্তু তারা জানেন না যে সমগ্র মৌরি গাছটিই বিভিন্ন উদ্দেশ্য ব্যবহার করা যায়। খাদ্য সাজানোতে এর ফুল এবং পাতা ব্যবহার করা হয়। পাতা আর ডাল দিয়ে স্যালাড হয় এবং পিৎজার উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শুখনো মৌরি বীজ চিবিয়ে খেলে মুখে লালার সৃষ্টি হয়। এ'ছাড়াও মদ, সুপ, সস, মাংস এবং পেস্ট্রিতে এটি সুগন্ধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
যদি আপনি মনে করে থাকেন যে এই হল সব, তাহলে জেনে নিন যে মৌরির ঔষধি গুণ আছে। মৌরি বীজ মুখ্যত অ্যান্টাসিড এবং মুখশুদ্ধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। সিদ্ধ করা মৌরি বীজ এবং তার জল পেট ফাঁপা কমায় এবং ওজন হ্রাসেও সহায়তা করে। মৌরি বীজ বেদনা নাশক এবং ফোলা কমাতে ব্যবহার করা হয়। অধিকন্তু, মৌরিকে চোখের পক্ষে উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়।
মৌরির এই ছোট্ট বীজগুলির পুষ্টি এবং নিরাময় করার গুণগুলি জেনে নেওয়া যাক।
মৌরি বীজ সম্বন্ধে কিছু মৌলিক তথ্য:
- বৈজ্ঞানিক নাম: ফিনিকুলাম ভালগারে
- পরিবার: এপিয়েসি
- সাধারণ নাম: স্নফ, মৌরি
- সংস্কৃত নাম: মধুরিকা
- যে অংশ ব্যবহার করা হয়: বীজ, ডাল, পাতা, ফুল, বাল্ব
- আদি প্রাপ্তিস্থান এবং ভৌগলিক বিস্তার: সারা পৃথিবীতেই মৌরির চাষ হয়। সমগ্র বিশ্বের মোট উৎপাদনের 60% হয় ভারতবর্ষে। ভারতবর্ষের যে রাজ্যগুলিতে মৌরির চাষ হয় সেগুলি হল রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ এবং হরিয়ানা।
- আকর্ষণীয় তথ্য: মৌরিকে 'মিটিং সিডস'ও বলা হয়, কারণ অনেক আগে মানুষজন মৌরি সাথে নিতেন গির্জায় প্রার্থনা করার সময় চর্বণ করার জন্য।