গ্রীষ্মপ্রধান এবং প্রায় গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলিতে পেঁপে হচ্ছে একটা প্রধান ফল। আপনি কি কখনও ভেবেছেন পেঁপে ফল কোথায় প্রথম উৎপন্ন হয়েছিল? ক্রান্তীয় (গ্রীষ্মমণ্ডলীয়) আমেরিকার দেশজ হচ্ছে পেঁপে ফল এবং মেক্সিকোতে প্রথম জন্মেছিল। পর্তুগীজরা ভারতে পেঁপের সূচনা করেছিল। ক্রিস্টোফার কলম্বাস দ্বারা একে “দেবদূতদের ফল” বলে অভিহিত করা হয়েছিল। পেঁপে “প-প” হিসাবেও পরিচিত।
পেঁপের স্বাদ প্রায়ই ফুটি বা কাঁকুড়ের সাথে তুলনা করা হয়, কিন্তু কম মিষ্টি। পেঁপের আসল স্বাদ বোঝা যায় যখন এটা সম্পূর্ণভাবে পাকে। পেঁপের রং সবুজ হয় যখন এটা কাঁচা থাকে। যখন এটা আধা পাকা হয়, এটা আধা সবুজ এবং আধা হলুদ হয়। যখন এটা সম্পূর্ণ পাকা হয়, পেঁপের রং হলুদ থেকে কমলা পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। এই ফলের স্বাস্থ্য উপযোগিতার একটা ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে। পেঁপের স্বাদ এবং এর স্বাস্থ্য উপযোগিতার ব্যাপক ব্যাপ্তি একে একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং উপভোগ্য ফল হিসাবে পরিণত করে। এটা প্রায় সারা বৎসর ধরে পাওয়া যায়। লোকে এই ফলটাকে সাধারণতঃ তাঁদের জলখাবার এবং ফলের স্যালাডে সামিল করে।
পেঁপে একটা আদর্শ ফল যা সহজেই আমাদের বাড়ির বাগানে এবং বাড়ির পিছনের উঠোনে ফলানো যেতে পারে। এটা দ্রুত বাড়ে এবং এটা পোঁতার 8 থেকে 10 মাস পরেই ফল ধরতে শুরু করে। এটা একটা সতেজকারক এবং সুস্বাদু ফল। এটা ভিটামিনে ভরা। এটা লবণ এবং গোলমরিচ আবার চিনি এবং লেবু দিয়েও একটা ফল হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। অপক্ক ফল একটা তরকারি হিসাবে খাওয়া যায়। আমরা এটা থেকে আচারও বানাতে পারি।
পেঁপে ফলে প্যাপাইন বা প্যাপেন নামে একটা এনজাইম থাকে এবং এটা প্রসাধনী দ্রব্য, চিউয়িং গাম তৈরি করতে, ঔষধ প্রস্তুতকারক শিল্প, আঠালো বস্তু, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। এটা মনে করা হয় যে বিশ্বব্যাপী প্রায় 40 ধরণের পেঁপে চাষ করা হয়। এগুলো নাশপাতি-আকৃতির ফল যা 20 ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পেঁপের শত শত নরম, কালো জেলির মত আঠালো বীজ থাকে। প্রতিটা গোটা ফল 0.49 kg থেকে 1 kg-র মত ওজন হতে পারে। বাজারে সাধারণভাবে দেখা ফলগুলি সাধারণতঃ প্রায় 7 ইঞ্চি লম্বা এবং ওজনে প্রায় 1 kg দেখা যায়। এটা আরাঁধা অবস্থায় একটা ফল হিসাবে খাওয়া যেতে পারে, একটা ঘন মসৃণ তরলীকৃত পানীয় অথবা এমনকি একটা মিল্কশেক বানানো যেতে পারে। এতে প্রাকৃতিক ফাইবার, ক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আছে। শিকড়, বাকল, খোসা, বীজ, এবং কোমল মজ্জা সহ সমগ্র পেঁপে গাছ ঔষধি গুণসম্পন্ন বলেও জ্ঞাত।
ভারতে, দেশের নানা প্রান্তে পেঁপে ফলানো হয়। এই ফলের প্রধান উৎপাদনকারীদের মধ্যে আছে দক্ষিণে অন্ধ্র প্রদেশ, কর্ণাটক, এবং কেরালা, পূর্বে পশ্চিম বঙ্গ, আসাম এবং ওড়িশা এবং পশ্চিম এবং মধ্য ভারতে গুজরাট, মহারাষ্ট্র এবং মধ্য প্রদেশ। বিশ্বে ভারত হচ্ছে পেঁপের বৃহত্তম উৎপাদক। এই দেশ প্রায় 3 মিলিয়ন টন পেঁপে উৎপাদন করে যা পেঁপের সমগ্র বিশ্বে উৎপাদনের অর্ধেক। ভারত এর প্রতিবেশী দেশগুলি যেমন বাহরিন, সৌদি আরব, ইউএই (UAE), কুয়েত, কাতার, এবং নেদারল্যান্ডস-এও পেঁপে রপ্তানি করে।
পেঁপের সম্বন্ধে কিছু মৌলিক তথ্য:
- উদ্ভিদবিজ্ঞানগত নাম: ক্যারিকা প্যাপায়া।
- জাতি: ক্যারিকাসিয়ি
- প্রচলিত নাম: পেঁপেকে সাধারণভাবে পা-প বা প-প বলা হয়। একে কখনও কখনও “গাছ ফুটি” হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।
- সংস্কৃত নাম: এরন্ড কর্কটী
- ব্যবহৃত অংশ: ফল, পাতা, ফুল, ডাঁটা বা কাণ্ড, শিকড়, এবং বীজ সবকটা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।
- উৎস: এটা মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর অংশের দেশজ। কিন্তু এখন এগুলো বিশ্বের প্রায় সব ক্রান্তীয় (গ্রীষ্মমণ্ডলীয়) এলাকায় ফলে।
- কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য: জুন মাসকে জাতীয় পেঁপে মাস গণ্য করা হয়।