এস সিনড্রোম কি?
এস সিনড্রোম বিরল রোগগুলির মধ্যে একটি, যে রোগে একজন ব্যক্তি অনেকগুলি রোগ বা রোগের স্পেকট্রামে (বর্ণালী) ভোগেন, যেমন অ্যানিমিয়া বা তার পাশাপাশি জয়েন্ট (অস্থির সংযোগস্থল) এবং স্কেলিটাল বা কঙ্কাল কাঠামোর কিছু নির্দিষ্ট বিকৃতি। এছাড়া এটিকে এস-স্মিথ সিনড্রোম এবং হাইপোপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (রক্তাল্পতা) - ট্রাইফ্যালাঙ্গিয়াল থাম্ব সিনড্রোমও বলা হয়ে থাকে।
এস সিনড্রোমের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এস সিনড্রোমের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:
- আঙুলের জয়েন্টগুলিতে ত্বকের অভাব বা চামড়া কম থাকার ফলে ভাঁজ পড়ে যাওয়া।
- বাচ্চাদের মধ্যে দেরীতে বিকাশ ঘটা।
- সংকীর্ণ বা সরু কাঁধ।
- ফ্যাকাশে চামড়া।
- কানের বিকৃতি।
- ছোট আঙুলের গাঁট।
- জয়েন্টগুলিকে পুরোপুরি প্রসারিত না করতে পারা।
- বৃদ্ধাঙ্গুলের তিনটি-জয়েন্ট থাকা (বৃদ্ধাঙ্গুলে তিনটি হাড় থাকা)।
এই লক্ষণগুলির সাথে, ব্যক্তিটি হাইপোপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়াতেও ভোগেন, যা জন্মের সময় থেকে হাড়ের বা অস্থিমজ্জার নির্দিষ্ট অস্বাভাবিকতার কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে কম লাল রক্তকোষ বা লোহিত রক্ত কণিকার গণনাকে বোঝায়।
এই লক্ষণগুলি সাধারণত জন্মের সময় থেকে দেখা যায় এবং পরে আরও লক্ষণীয় হয়ে ওঠে।
এস সিনড্রোমের প্রধান কারণগুলি কি কি?
এস সিনড্রোমের প্রাথমিক বা মূল কারণটি এখনো জানা যায়নি। যেহেতু এই সিন্ড্রোমের উপসর্গগুলি জন্মের সময় থেকেই উপস্থিত থাকে, তাই অধিকাংশ লোকই এটিকে একটি উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া রোগ হিসেবে সন্দেহ করবে। যদিও, এস সিনড্রোমের অনেকগুলি কেস এটিকে উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া রোগ হিসেবে দেখায় না। এই রোগটি প্রায় 45% কেসের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বলে জানা যায়।
পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই সমানভাবে এস সিনড্রোমের শিকার হয়ে থাকেন। যদিও বেশিরভাগ এস সিনড্রোমের কেসের রিপোর্টগুলির ক্ষেত্রে জেনেটিক বা জিনগত কোন ভিত্তি নেই, তবে একটি ইতিবাচক বা পজিটিভ পারিবারিক ইতিহাস অবশ্যই এই ঝুঁকিটিকে বাড়ায়।
এস সিন্ড্রোমে অ্যানিমিয়া অস্থিমজ্জার দুর্বল বিকাশের ফলে হয়ে থাকে, যে কারণে রক্তের লোহিত কণিকার সংখ্যার পরিমাণ কমতে থাকে।
এস সিনড্রোমকে কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রাপ্ত পারিবারিক ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে এস সিনড্রোমকে প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা হয়।
সেকেন্ডারি বা পরবর্তী কিছু নির্ণায়ক (ডায়াগনস্টিক) পরীক্ষা রয়েছে, যেগুলি এস সিনড্রোমকে নিশ্চিত করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে, এগুলি হল:
- এক্সরে যেগুলি হাড়ের কোন বিকৃতি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
- কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট বা সম্পূর্ণ রক্তের গণনা, যা রক্তের লোহিত কণিকার কমে যাওয়াকে (অ্যানিমিয়া) দেখাতে সাহায্য করে।
- হৃদয়ের কোনো ধরনের ত্রুটি, বিশেষত এস সিনড্রোমের ক্ষেত্রে একটি সবচেয়ে সাধারণ ত্রুটি হল ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট, সেটা নির্ণয়ের জন্য ইকোকার্ডিওগ্রামের ব্যবহার করা হয়।
- অস্থিমজ্জার বা বোনমেরোর বায়োপসি টেস্ট যা অস্থিমজ্জার বিকাশে অস্বাভাবিকতা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
সবচেয়ে দুর্বল বা অসুরক্ষিত ধাপে জীবিত থাকার জন্য জীবনের প্রথম বছরে অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য রক্তের পরিসঞ্চালন (একজন ব্যক্তির দেহের সমস্ত রক্ত পরিবর্তন করার পদ্ধতি) পদ্ধতির ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও এস সিন্ড্রোমে অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। যদি এই চিকিৎসাগুলিতে কোন উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হয়, সেক্ষেত্রে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা যেতে পারে।