অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: উৎস খাদ্য, উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - Antioxidants: Food sources, Benefits and Side effects in Bengali

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অবদান অনেক। বলি রেখা কম রাখতে এবং তাদের আগমন বিলম্বিত করতে, চামড়া কুঁচকে যাওয়া এবং বয়স বৃদ্ধির অন্যান্য চিহ্নগুলি কম রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি সাহায্য করে। কি প্রক্রিয়াতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই কাজ করে, তা জানার জন্য অনেক গবেষণা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে বাধা দিতে এবং ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে খাদ্যের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি, বিশেষত ভিটামিন ই, ভিটামিন সি এবং ক্যারোটিনয়েডগুলি, খুবই উপকারী।

ত্বকের জ্বালা নিবারণ করতে ভিটামিন ই'র প্রদাহ-বিরোধী ধর্মকে কাজে লাগানো যেতে পারে। ত্বকের উপরে ভিটামিন ই'র শীতল প্রভাব আছে, এমন কি কোলাজেন উৎপাদনেও সহায়তা করে। কোলাজেন ত্বকের প্রধান কাঠামোগত প্রোটিন যা চামড়ার স্থিতিস্থাপকতার উন্নতিতে সহায়তা করে। ক্ষতের মেরামত এবং নিরাময়েও কোলাজেন সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অবশ্যই দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে, কারণ ত্বকের স্বাস্থ্যে এদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই'র যুগ্ম ভাবে প্রভাব তাদের একক ভাবে প্রভাবের চেয়ে বেশি। কাজেই যে ত্বকের মলমে এই দুই ভিটামিন আছে, সেগুলির ব্যবহার সুপারিশ যোগ্য।

 (আরও পড়ুন: ব্রণের চিকিৎসা)

চুল প্রতি দিন ক্ষতিকারক বস্তুর সংস্পর্শে আসে, যেমন সূর্যের ইউভি রশ্মি, পরিবেশের দূষণ, রাসায়নিক এবং ধোঁয়া। সূর্যের ইউভি-এ রশ্মি ফ্রি র‍্যাডিকেলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, এবং ইউভি-বি চুলের মেলানিন'এর পরিমাণ হ্রাস করে। চুল এবং চামড়ার রঙ নির্ভর করে মেলানিন রঙ্গকের উপরে। এই দুই ইউভি'র প্রভাবে চুলের রঙ হালকা হয়ে পেকে যায়।

বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, সূর্যের অতি-বেগুনী রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব এবং বয়স জনিত কারণে চুল পেকে যাওয়া এবং চুল পড়ে যাওয়া হ্রাস করতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি। চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি এবং গঠন উন্নতও করতে পারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি। কাজেই আপনার খাদ্য-তালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অন্তর্ভুক্ত হলে বিভিন্ন ভাবে উপকার পাওয়া যাবে।

সমগ্র বিশ্বে অন্ধত্বের প্রধান কারণ হল ম্যাকুলার ক্ষয়। ভিটামিন এ'র অভাব হলে বয়স জনিত ম্যাকুলার ক্ষয়ের (এএমডি) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। গবেষকরা সুপারিশ করছেন যে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন গ্রহণ করলে এএমডি এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ অথবা বিলম্বিত করা যায়।

দেখা গিয়েছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি এএমডি'র ঝুঁকি 25% হ্রাস করে। সুপারিশ করা হয়েছে যে প্রতি দিনের ভোজনের তালিকায় পাঁচ প্রকারের ফল এবং সবজি এবং দুই প্রকারের বাদাম অন্তর্ভুক্ত করতে, যাতে এই ঝুঁকি হ্রাস করা যায়। এতে চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনাও কম থাকবে। বয়স্কদের অন্ধত্বের অন্যতম কারণ হল ছানি পড়া।

ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলি মস্তিষ্কের মত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গেরও ক্ষতি করতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহে ফ্রি র‍্যাডিকেল জমার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফ্রি র‍্যাডিকেল মস্তিষ্কের সাথে আক্রমণাত্মক ভাবে ক্রিয়া করে। ফলে৩, স্মৃতি এবং চেতনা সহ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

খাদ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির, বিশেষত ভিটামিন ই'র অভাব হলে অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ে। এতে বয়স্কদের স্মৃতি বিভ্রম হয়। জানা আছে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি এই ক্রিয়াশীল অক্সিজেনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটায়, এমন কি মস্তিষ্কের ক্ষতিরও পুনরুদ্ধার করতে পারে। এতে স্মৃতি বিভ্রম হ্রাস কিম্বা প্রতিরোধ হতে পারে।

আল্জ্হেইমের রোগের কারণ হল বিটা-এমাইলয়েড। কয়েকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটা-এমাইলয়েডের মাত্রা কমাতে পারে। কাজেই সুপারিশ করা হচ্ছে যে খাদ্যে, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সাথে সাথে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।

এ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস এবং অন্যান্য হৃদযন্ত্রের রোগের অন্যতম মুখ্য কারণ হল অক্সিডেটিভ চাপ। প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খেলে এই চাপ বৃদ্ধি পায়, যা হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। খাদ্যের সাথে ভিটামিন ই এবং সি যোগ করলে করোনারি হার্ট'এর অসুখ রোধ করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই তথ্যগুলিকে নিশ্চিত ভাবে সত্য বলে বিবেচনার আগে বিস্তারিত গবেষণের প্রয়োজন আছে।

ফ্রি র‍্যাডিকেলগুলির কোষের ক্ষতি করতে পারে, এমন কি ডিএনএ'র ও পরিবর্তন করতে পারে। দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমগুলি ফ্রি র‍্যাডিকেল জনিত অত্যধিক ক্ষতির প্রতিরোধ করে। দেখা গিয়েছে যে প্রবীণ ব্যক্তিদের শরীরে ফ্রি র‍্যাডিকেলের পরিমাণ বেশি থাকে।

এর কারণ হয়তো বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রক্ষাকারী এনজাইম কমে যায় এবং শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজেই খাদ্যের সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তাহলে হয়তো ইতিবাচক প্রভাব দেখে যেতে পারে, যেমন বয়স জনিত কারণে ত্বকের কুঁচকে যাওয়া হ্রাস পেতে পারে।

ফ্রি র‍্যাডিকেলের কারণে যে অক্সিডেটিভ ক্ষতি হয়, তা হ্রাস করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন, যথা ফ্রি র‍্যাডিকেলের জন্য অনেক প্রকারের অসুখ হয়। যেমন ত্বক ক্যান্সার, মূত্র-থলির, মস্তিষ্কের, যকৃতের এবং মুখের কর্কট রোগ এবং লিউকেমিয়া। এই ধরনের প্রতিটি কর্কট রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ভিন্ন। তবে সুস্থ একটি কোষের টিউমার কোষে পরিবর্তিত হওয়ার পিছনে অক্সিডেটিভ চাপ জড়িত থাকে।

যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেনের মাত্রা কম করে, তাই কর্কট রোগের সম্ভাবনাকে হ্রাস করার পিছনেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির ভূমিকা থাকে। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে যে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই'র মত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির কর্কট রোগ প্রতিরোধী ধর্ম আছে। তবে মিশ্র ফলাফল পাওয়ার কারণে সঠিক ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তা হলেও খাদ্য-তালিকায় তাজা ফল এবং সবজি যোগ করা ভাল কারণ সাধারণ ভাবে এ'গুলি কর্কট রোগ প্রতিরোধ করে।

স্থূলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা; ভারতবর্ষের জনসংখ্যার 5% এই সমস্যায় জর্জরিত। স্থূলতার অন্যতম মূল কারণ হল অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা। স্থূলতা নিজেই একটি সমস্যা, আবার এর কারণে অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যেমন নানা প্রকারের কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার অসুখ এবং মধুমেহ।

দেখা গিয়েছে যে কয়েক প্রকারের খাদ্য, যাতে ভিটামিন সি জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেগুলি চর্বির বিপাকে সহায়তা করে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। এই খাদ্যগুলি বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ওজন হ্রাস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত হয়।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্য ছাড়াও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি, যেমন ভিটামিন ই, গ্রিন টি, দারচিনি, ওজন হ্রাসে বেশ কার্যকরী। খাদ্যে এই গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে সুষম আহার করলে এবং সাথে পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম করলে আপনার প্রার্থিত ওজন পেতে পারেন।

 (আরও পড়ুন: ওজন হ্রাসের খাদ্য সারণী) ।