মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম কি?
শরীরের কিছু হাড়ের ভিতরে স্পঞ্জের মতো টিস্যু বা শরীরকলা থাকে যাকে বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা বলা হয় , যার মধ্যে স্টেম সেল থাকে। এই স্টেম সেল বা কোষগুলি হল অপরিণত কোষ যা লোহিত রক্ত কণিকায় (আরবিসি) , শ্বেত রক্ত কণিকায় (ডাব্ললুবিসি) এবং প্লেটলেটস বা অনুচক্রিকার বিকশিত হয়। আরবিসি হল অক্সিজেনের বাহক, ডাব্ললুবিসি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং প্লেটলেটস রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। যখন মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম (এমডিএস) বা মাইলোডিসপ্লাশিয়া হয়, তখন স্টেম সেলগুলি প্রয়োজনীয় রক্ত কোষে পরিণত হয় না এবং অস্থিমজ্জার ভিতরেই মারা যায়। স্বাস্থ্যকর রক্ত কোষ বা কণিকার অভাবে রক্তাল্পতা, সংক্রমণ বা রক্তপাত ঘটাতে পারে, সেই ভিত্তিতে ঘাটতি পূরণ করতে প্রয়োজনীয় ধরণের কোষের উৎপাদন হয়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এই রোগের কোনো প্রাথমিক উপসর্গ নেই, কিন্তু নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে, যেমন
- অবসাদ।
- দুর্বলতা।
- সংক্রমণের হার বৃদ্ধি।
- জ্বর।
- বিবর্ণ ত্বক।
- শ্বাসকষ্ট।
- সহজেই রক্তপাত।
- হাড়ে ব্যথা।
- ওজন কমে যাওয়া।
- ক্ষুধামান্দ্য।
- রক্তপাতের কারণে ত্বকের নিচে দাগ দেখা দেওয়া।
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
এমডিএসকে কারণের ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত দুই প্রকারে ভাগ করা যেতে পারে, যেমন:
- প্রাথমিক এমডিএস: এর কারণ এখনও অজানা। এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের এমডিএস।
- মধ্যম প্রকারের এমডিএস: এই ধরণের এমডিএসের কারণ চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন কেমোথেরাপি। এটিকে চিকিৎসা-সম্পর্কিত এমডিএসও বলা হয়।
এমডিএস কোন জিনগত রোগ নয় এটি পারিবারিকভাবে দেখা যায় না, কিন্তু কিছু বিরল ক্ষেত্রে, এটি বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিশুর দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে।
এই রোগ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
এমডিএসের নির্ণয় করার জন্য নিম্নলিখিত শারীরিক পরীক্ষাগুলি করা হয়, যেমন:
- রক্ত পরীক্ষা: রক্ত গণনায় পরিবর্তন এবং রক্তে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক কোষের উপস্থিতি সনাক্ত করার জন্য।
- অস্থিমজ্জার পরীক্ষা: স্থানীয় অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে হাড়ের মজ্জার একটি নমুনা সংগ্রহ করা হয় সুঁচ ব্যবহার করে, এবং এটি স্টেম সেলের অভাব আছে কিনা তা জানার জন্য করা হয়।
- সাইটোজেনেটিক পরীক্ষা: রোগের ধরণটি সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যের সাধারণ বিষয়গুলি নির্ধারণ করার জন্য অন্যান্য পরীক্ষা যেমন এক্স-রে, ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম করা হয়।
সঠিক চিকিৎসা বিভিন্ন কারণগুলির উপর নির্ভর করে যেমন এমডিএস, বয়স , সাধারণ স্বাস্থ্যের বিষয়গুলি, ইত্যাদি। নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি এমডিএসের জন্য ব্যবহৃত হয় যেমন:
- কেমোথেরাপি: একটি রাসয়নিক চিকিৎসা যার লক্ষ্য অস্থিমজ্জায় অস্বাভাবিক কোষগুলির সংখ্যা হ্রাস করা।
- স্টেম সেল প্রতিস্থাপন: উপযুক্তভাবে মিল পাওয়া গেলে সেই দাতার স্টেম সেল রোগীর মজ্জায় প্রতিস্থাপন করা হয় কিন্তু্ কিছু রোগীর ক্ষেত্রেই উপযুক্ত হয় এই পদ্ধতি।
- ওষুধপত্র: এর মধ্যে আছে বিভিন্ন ওষুধ যেমন ইমিউন বুস্টার, বায়োলজিক্যাল মডিফায়ার, কেমোথেরাপির ওষুধ, ইত্যাদি।
- সহায়তামূলক চিকিৎসা: জীবনের গুণমানের সামগ্রিক উন্নতি এই চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্দেশ্য।