মেনিনজিওমা কাকে বলে?
মস্তিস্ক এবং সুষুম্নাকান্ডের আবরণী মেনিনজেসের টিউমারকে মেনিনজিওমা বলে। মেনিনজিওমা থেকে সাধারণত ক্যান্সার হয় না, এবং অতি ধীরে এর বিস্তার ঘটে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গ কি কি?
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)-এর শ্রেণীবিভাগ অনুসারে মেনিনজিওমাকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় তার অবস্থান এবং মানের ভিত্তিতে । কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে টিউমার অনেক বড় এবং চিকিৎসার অযোগ্য হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোন উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায় না। মেনিনজিওমার সবথেকে পরিচিত উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হলো:
- দীর্ঘস্থায়ী মাথা যন্ত্রণা।
- আকস্মিক সিজার বা মস্তিষ্কে আকস্মিক বৈদ্যুতিক প্রবাহ হওয়া (খিঁচুনি)।
- শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া বা কানে তালা ধরা।
- বমিভাব।
- প্রত্যঙ্গের দুর্বলতা।
- স্মৃতিশক্তি হারানো।
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কি?
মস্তিষ্কে টিউমারের সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, তবে ক্রোমোজোম 22-এর পরিবর্তন এর সবথেকে সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করা হয়। এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে মাথায় রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োগ হয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার সম্ভাবনা বেশী। বর্তমান বিশ্বে হরমোন ও মেনিনজিওমার মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগের সন্ধান চলছে।
এছাড়া, নিউরোফাইব্রোমাটোসিস টাইপ 2 নামক জিনঘটিত রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মেনিনজিওমা দেখা যেতে পারে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হবে এবং এর চিকিৎসা কি?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেনিনজিওমার উপসর্গগুলি দেখা দেয় রোগের অগ্রসর পর্যায়ে। সাধারণত অন্য কোন সমস্যার জন্য সিটি স্ক্যান বা এম.আর.আই. করা হলে তখন এই টিউমার ধরা পড়ে।
মেনিনজিওমার নিশ্চিত নির্ণয়করণের জন্য চিকিৎসক পুঙ্খানুপুঙ্খ পারিবারিক ও চিকিৎসার ইতিহাস সংগ্রহ করেন, নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষাসহ কিছু শারীরিক পরীক্ষা ও স্ক্যানের নির্দেশ দেন। মেনিনজিওমার সঠিক অবস্থান ও আকৃতি জানতে এম.আর.আই. বা সিটি স্ক্যান করা হয়ে থাকে। আরো অগ্রসর পর্যায়ে রক্তবাহের এঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে এই রোগের নির্ণয় নিশ্চিত করা সম্ভব।
মেনিনজিওমার বৃদ্ধি থামাতে এবং উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ও চিকিৎসাপ্রণালী ব্যবহার করা হয়। এই চিকিৎসা প্রণালীগুলি নিচে উল্লেখ করা হল:
- পর্যবেক্ষণ - মেনিনজিওমার বৃদ্ধি অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতি ধীরগতি হয় যে রোগীদের মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা যায়না, বা যাদের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক উপসর্গ দেখা যায়, তাদের চিকিৎসা করার পরিবর্তে টিউমারের বৃদ্ধি ও উপসর্গের পরিবর্তনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
- অস্ত্রপচার - মস্তিষ্কের টিউমার চিকিৎসার একমাত্র উপায় হল অস্ত্রপচারের সাহায্যে টিউমার ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অপসারণ করে রোগের বৃদ্ধি বন্ধ করা।
- রেডিয়েশন - যে অঞ্চলে অস্ত্রপচার সম্ভব নয় সেখানে রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।কোন ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে নির্দিষ্ট এলাকায় রেডিয়েশন ব্যবহার করে টিউমারটি ধ্বংস করা হয় এবং রোগের বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়।
- কেমোথেরাপি - মেনিনজিওমার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি বিশেষ সাহায্য করে না। তবুও, অস্ত্রপচার ও রেডিওথেরাপি যদি বিফল হয় সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপিকে মেনিনজিওমা বা যেকোনও টিউমার চিকিৎসার সর্বশেষ অবলম্বন হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে।