শল্য চিকিৎসা
হার্ণীয়ার ভাল চিকিৎসা হল শল্য চিকিৎসা। অস্ত্রোপচারের সময়ে হার্ণীয়ার বস্তুগুলিকে ঠেলে উদরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় বা কেটে বাদ দিয়ে জায়গাটা সেলাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে দুর্বল টিস্যু এবং পেশীগুলি ভেদ করে বস্তু বেড়িয়ে এসেছিল, সেগুলিকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখার জন্য একটি জাল (কৃত্রিম বা পশুজাত) ব্যবহার করা হয়।
অস্ত্রোপচার দুই ভাবে করা যায়: উন্মুক্ত করে বা প্রথাগত ভাবে এবং অল্প ক্ষত করে ল্যাপারস্কোপিক শল্য চিকিৎসা করে। উন্মুক্ত অস্ত্রোপচারে হার্ণীয়ার জায়গায় একটি বড় ও লম্বা গর্ত কাটা হয় এবং দুর্বল পেশীগুলিকে মেরামত করা হয়। ল্যাপারস্কোপিক বা কী-হোল শল্য চিকিৎসায় একাধিক ফুটো করা হয় এবং সরু নলের মত যন্ত্র দিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। নলের মাথায় একটি ক্যামেরা লাগানো থাকে যাতে শরীরের ভিতরের ছবি শরীরের বাইরে একটি মনিটারে দেখে কাজ করা যায়।
ইঙ্গুইনাল হার্ণীয়াতে হার্ণীয়োটমি, হার্ণীয়োর্হাফি বা হার্ণীয়োপ্লাস্টি'র মতন বিশেষ পদ্ধতির সুবিধা নেওয়া হয়। ইঙ্গুইনাল হার্ণীয়ার অন্যান্য চিকিৎসাগুলি হল কুন্ট'জ অস্ত্রোপচার, এন্ড্রিউ'জ ইম্ব্রিকেশানস বা ম্যাকভে বা নিহাস মেরামত, এবং তা নির্ভর করে কি ধরনের মেরামতি দরকার। অস্ত্রোপচারকারী ডাক্তার এই বিষয়ে নির্ণয় নেন। বিভিন্ন প্রকারের হার্নীয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচার করা হয়।
অস্ত্রোপচার সব সময় হার্ণীয়ার একমাত্র চিকিৎসা নয়। এর দরকার হয় না যদি আপনার হার্ণীয়া, যে ধরনেরই হোক না কেন, কোন স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বড় সমস্যা না হয়। উপরন্তু, বয়স্কদের ক্ষেত্রে এবং যারা গুরুতর অসুস্থ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার এড়িয়ে যাওয়া হয়।
ওষুধপত্র
হিয়াটাল হার্ণীয়ার ক্ষেত্রে, কখনও কখনও বাজার চলতি ওষুধ দেওয়া হয় যাতে পাকস্থলীর অম্বল কম হয়। এতে অস্বস্তি এবং অন্যান্য উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই ওষুধগুলির মধ্যে কতকগুলি হল ব্যথা কমানোর, কিছু হল এইচ-২ ব্লকারস যা হিস্টামিনের বিরুদ্ধে কাজ করে, কিছু হল পেটের এসিড কমানোর জন্য আর আছে প্রোটন পাম্প ইনহিবিটারস (যে ওষুধগুলি পেটে এসিড তৈরি বন্ধ করে)।
জীবনধারার নিয়ন্ত্রণ
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে হিয়াটাল হার্ণীয়ার উপসর্গ কম করা যায় কিছু সারানো যায় না। একবারে অনেকটা ভারী (গুনে ও পরিমাণে) খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। ভোজনের পরেই শুয়ে পড়া অথবা শ্রমসাধ্য শারীরিক পরিশ্রম করা বন্ধ করতে হবে। যে খাবারগুলি অম্বলের কারণ হয় সেই মশলাদার বা টক খাদ্য পরিহার করে হিয়াটাল হার্ণীয়ার রোগীরা অম্বল থেকে মুক্তি পাবেন। যত দিন উপসর্গ থাকে তত দিন ধূমপান বন্ধ রাখুন। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে আপনার উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্য রাখুন।
কিছু কিছু ব্যায়াম হার্ণীয়ার অঞ্চলের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। এতে কিছু উপসর্গ কম হবে। তবে অত্যধিক ব্যায়াম করা বা ডাক্তারবাবুর পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম করলে হিতে বিপরীত হবে। ভাল হয় যদি একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ব্যায়ামগুলি করেন।
যদি প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা মেনে চলার পরও উপসর্গগুলি না যায় তাহলে অস্ত্রোপচার করেই হার্ণীয়াকে ঠিক করতে হবে।