গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস কি?
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস একরকমের কিডনির রোগ যার ফলে গ্লোমেরুলির (ছোট ফিল্টারের মতো যা কিডনির ভিতরে থাকে এবং রক্তের তরল ও বর্জ্য পদার্থগুলিকে ফিল্টার বা পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে) ক্ষতি হয়। এটা সাধারণত, রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার কিডনির সুস্থ টিস্যুগুলিকে আক্রমণের কারণে হয়।
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলি কি কি?
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের সঙ্গে যুক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি হলো:
- ক্লান্তিভাব
- শ্বাস কষ্ট
- পায়ে অথবা শরীরের অনন্য জায়গা ফোলাভাব (ইডিমা)
- উচ্চ রক্তচাপ
- হাড়ের সন্ধিতে ব্যথা
- ফুসকুড়ি
- মূত্রে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন নির্গত হওয়া
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের প্রধান কারণগুলি হল:
- রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যা যেমন ভ্যাস্কুলাইটিস এবং সিস্টেম্যাটিক লুপাস এরিথিমেটোসাস (এসএলই)
- কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট কিছু সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অস্বাভিকতাকে জাগিয়ে তোলে, যেমন:
- এন্ডোকার্ডিটিস, যেটি হার্ট বা হৃদযন্ত্রের ভালভের সংক্রমণ
- লিভারের ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ যেমন হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি
- হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি)
- সাম্ভাব্য বংশগত কারণ
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস কিভাবে নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
উপসর্গগুলির ইতিহাস জানার পর, চিকিৎসক এই পরীক্ষাগুলির পরামর্শ দিতে পারেন:
- রক্ত পরীক্ষা:
- ক্রিয়েটিনাইনের মাত্রা, যার পরিমান কিডনি রোগীদের মধ্যে উচ্চ থাকে।
- এস্টিমেটেড গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন রেট (ইজিএফআর), যা কম থাকে কিডনির সমস্যা থাকলে।
- অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া জেগে উঠতে পারে বিভিন্ন পদার্থের কারণে এন্টিবডির প্রভাবে।
- মুত্র পরীক্ষা: মুত্রে রক্ত অথবা প্রোটিন আছে কিনা সেটা জানার জন্য।
- আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান: কিডনিতে কোনো সমস্যা আছে কিনা, যেমন কিডনির আকার এবং কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা সেটা জানার জন্য।
- বায়োপসি: কিডনির টিস্যু বা শরীরকলার একটি নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করা হয়।
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের চিকিৎসা রোগের তীব্রতা এবং উপসর্গগুলির উপর নির্ভর করে করা হয়। সামান্য মাত্রায় গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস থাকলে, কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না।
বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেসব খাদ্যে ও পানীয়ের মধ্যে নূন, পটাসিয়াম এবং তরলের মাত্রা বেশি সেইসব খাবার না খাওয়াই উচিত।
- ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়, কারন এটি গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসকে আরও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
- এর ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
- রক্তচাপ হ্রাসকারী ওষুধ যেমন এঞ্জিওটেনসিন রিসেপ্টর ব্লকারস (এআরবি), এঞ্জিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (এসিই) ইনহিবিটর্স, ডাইরেটিকস এবং অন্যান্যগুলি।
- কর্টিকোস্টেরয়েডসের (প্রেডনিসন) পরামর্শ দেওয়া হয় ফোলাভাব এবং রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিকে দমন করার জন্য।
- যখন রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিতে সমস্যা হয় তখন ইমিউনোসাপ্রেসেন্টস যেমন ট্যাক্রোলিমাস, সাইক্লোস্পোরিন, এজাথিওপ্রিন, রিটাক্সিম্যাব অথবা মাইকোফিনোলেট মোফেটিলের পরামর্শ দেওয়া হয়।
- কম মাত্রায় সাইক্লোফোসফ্যামাইড টি ইমিউনোস্প্রেসেন্ট হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া হয়।
- গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীর কলেস্টেরলের মাত্রা উচ্চ থাকে, তাই কলেস্টেরল হ্রাসকারী ওষুধ দেওয়া হয়।
- গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে প্লাসমা এক্সচেঞ্জ বা রক্তরস পরিবর্তন করা হতে পারে।