শিশুদের জ্বরের কবলে পড়া কি?
শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরে খিঁচুনি আসা বা তড়কা লাগা বিষয়টি ফিব্রাইল সিজার নামেও পরিচিত, এক্ষেত্রে প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে শিশুদের শরীরে খিঁচুনি ধরে। এই ধরণের জ্বরে 6 মাস থেকে 5 বছর বয়সের শিশুরা সাধারণত আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে, 12 থেকে 18 মাস বয়সের দুধের শিশুদের এই ধরণের খিঁচুনি ধরানো জ্বরের কবলে পড়তে দেখা যায়।
এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
শিশুদের জ্বরে খিঁচুনি আসা বা তড়কা লাগার মধ্যে যেসব উপসর্গগুলি লক্ষ্য করা যায়, তার মধ্যে রয়েছে:
- জ্ঞান হারানো
- হাত-পা থরথর করে অবিরাম কাঁপতে থাকা
সাধারণত কম দেখা যায় এমন উপসর্গ:
- শ্বাসকষ্ট
- অঙ্গ-প্রতঙ্গ শক্ত হয়ে যাওয়া
- মুখ দিয়ে ফেনা বের হওয়া
- যে কোনও একটি হাত বা পা, অথবা হাত-পায়ের একটি অংশ কাঁপতে থাকা
- চামড়া ফ্যাকাশে বা নীলচে হয়ে যাওয়া
- চোখ উল্টে যাওয়া
- গোঙানি
- তড়কা লাগা বা খিঁচুনি ধরার পর শিশুর জ্ঞান আসতে 10 থেকে 15 মিনিট লাগতে পারে। এই সময় শিশু খিটখিটে ব্যবহার করতে পারে এবং পরিচিত লোকজনের মুখ না চিনতেও পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
খিঁচুনি ধরা বা তড়কা লাগা জ্বর জিনঘটিত এবং পরিবেশগত, উভয় কারণেই হতে পারে।
সাধারণত, যে কারণগুলি এর জন্য দায়ী থাকে:
- যে কোনও কারণে জ্বর আসা
- যে কোনও রকম অসুখে আক্রান্ত হয়ে শিশুর দেহের তাপমাত্রা যদি দ্রুত প্রচণ্ড বেড়ে যায়
- শ্বাসযন্ত্রের উপরিভাগে যদি ভাইরাল সংক্রমণ হয়
- কানের সংক্রমণ
- নিউমোনিয়া
- ব্যাকটিরিয়া ঘটিত ডায়রিয়া বা পেট খারাপ
- রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ (সেপসিস)
- মস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত মেরুদণ্ড যে পাতলা পর্দা বা ঝিল্লি (মেনিনজেস) দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে, তাতে সংক্রমণ। একে মেনিনজাইটিস’ও বলা হয়।
কিভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগকে বোঝা এবং চিকিৎসা করার জন্য জ্বরের কারণ নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
চিকিৎসাজনিত ইতিহাসের ব্যাপারে ভালো করে খবর নেন ডাক্তার। রোগীর পরিবারে কারোর মৃগী আছে বা ছিল কি না, সম্প্রতি কোনও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তড়কা বা খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী ছিল, খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার পরে কি কি হয়েছে, ফ্লু’র থেকে রক্ষার জন্য কি কি টীকা দেওয়া হয়েছে এবং কি কি উপসর্গ দেখা দিয়েছে, সমস্ত ব্যাপার ডাক্তার খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করেন।
আপনার শিশুর চেতনার মাত্রা কতটা রয়েছে, ডাক্তার তা মূল্যায়ণ করে দেখবেন এবং সেই সঙ্গে চিকিৎসক এটাও দেখেন, শিশুর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে কোনোরকম সংক্রমণ হয়েছে কি না।
প্রয়োজনে আর যেসব পরীক্ষা করানোর পরমার্শ দেওয়া হতে পারে:
- লাম্বার পাংচার
- ইলেক্ট্রোএনসেফেলোগ্রাফি (ইইজি)
- নিউরোইমেজিং (সিটি এবং এমআরআই স্ক্যান)
- কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি)
শিশুদের জ্বরে খিঁচুনি ধরা বা তড়কা লাগার ক্ষেত্রে চিকিৎসায় যেসব পদ্ধতি অনসুরণ করা হয়:
- খিঁচুনি বন্ধ ও শিশুকে শান্ত করার জন্য ওষুধের প্রয়োগ। ডাক্তারের পরামর্শ দেওয়া ওষুধই একমাত্র শিশুকে দেওয়া যাবে, এরকম রোগ থাকলে।
- মাঝেমধ্যে অ্যান্টি-পাইরেটিক এজেন্টের ব্যবহার তবে, যতোটা সম্ভব এরকম ওষুধের ব্যবহার কম করাই ভালো।
এ ধরণের রোগীর পরিচর্যা ও দেখভালের জন্য যা করা উচিত:
- জ্বর আসলে এবং শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়লে সঠিক পরিচর্যা নেওয়া প্রয়োজন। গায়ে অত্যাধিক চাপা না দেওয়া, বেশি করে তরল জাতীয় খাদ্য ও পানীয় দেওয়া এবং ঠাণ্ডা জলে চান না করানো।
- শিশুর আশপাশের পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে হবে। খিঁচুনির সময় যাতে আশেপাশে কোনও সুঁচালো জিনিস না থাকে বা শিশুর শারীরিক ক্ষতি পারে, এমন কোনও জিনিস যেন তার চারপাশে না থাকে। শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনও বস্তু থাকলে, তা সরিয়ে দিতে হবে সেখান থেকে
- খিঁচুনি উঠলে বা তড়কা লাগলে শিশুকে একটি দিকে গড়িয়ে দিতে হবে।
- শিশুটির পাশে সবসময় কারোর উপস্থিত থাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
- খিঁচুনি ওঠার পর, তা কেটে গেলে শিশুকে শান্ত করা এবং আশপাশের পরিবেশের প্রতি তার মনোযোগ ফেরানোর চেষ্টা, অনেক ক্ষেত্রেই কাজে লাগে।
- যখন খিঁচুনি ধরে বা তড়কা লাগে, তখন শিশুকে ধরা বা তার মুখে কোনও কিছু দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।