ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহের খনিজ অসমতা) কি?
হোমিওস্ট্যাসিস বা বিভিন্ন শারীরিক ক্রিয়াকলাপে সমতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন খনিজ বা ইলেক্ট্রোলাইট দরকার পড়ে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটগুলির ভারসাম্য ঠিক না থাকলে স্নায়ু, হরমোন এবং শরীরের তরল পদার্থের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজ অসমতা) মানে হলো শরীরে সোডিয়াম, ক্লোরিন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো এক বা একাধিক ইলেক্ট্রোলাইট বা খনিজের মাত্রারিক্ত উপস্থিতি অথবা ঘাটতি।
এর প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলো কি কি?
কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ, যার থেকে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধি হয়, সেগুলি হলো:
- জলের অভাব
- দূর্বলতা এবং পেশীতে খিঁচ ধরা
- মাথাব্যথা, মাথাঘোরা এবং ঝিমুনি
- বিভ্রান্তি বোধ
- খিঁচুনি
- মানসিক অবসাদ
- রক্তচাপে পরিবর্তন
- হৃদস্পন্দনে অসুবিধা
- গোটা শরীরে ফোলাভাব
- হাড়ের সমস্যা
- মূত্র উৎপাদনে পরিবর্তন
ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা)-র প্রধান কারণ কি কি?
ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা)-এর প্রধান কারণগুলি হলো:
- ডায়রিয়া, বমি, অত্যধিক ঘাম, গুরুতর সংক্রমণ, অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমোনের সমস্যা ইত্যাদির কারণে শরীরে জলের অভাব।
- অ্যাল্ডোস্টেরন (অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত) এবং প্যরাথাইরয়েড হরমোনের কাজকর্মে বিকার, এই দু’টির সঙ্গেই শরীরে সোডিয়াম ও ক্যালসিয়ামের যোগ রয়েছে।
- কিডনি কাজকর্মে বিকৃতি হলে তার থেকে শরীরে থাকা ইলেক্ট্রোলাইটগুলি অস্বাভাবিক মাত্রায় বেরিয়ে যায় অথবা জমা হয়।
- রক্তচাপের (ডাইইউরেটিক) চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ।
- কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর, ফুসফুসে সমস্যা ইত্যাদি।
ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা) কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসক ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা) ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে নির্ণয় করেন।
- রক্ত পরীক্ষা
- রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট বেড়েছে না কমেছে, রক্তের pH মাত্রা, কিডনির কাজকর্ম ইত্যাদি সনাক্ত করার জন্য সিরাম বা রক্তরসে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পরিমাপ করতে বেসিক মেটাবলিক প্যানেল ব্যবহার করা হয়।
- প্রস্রাব পরীক্ষা
- এটা ব্যবহার করা হয় প্রস্রাবে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহের খনিজ অসমতা)-এর মাত্রা পরিমাপ করতে।
- অন্যান্য পরীক্ষা - এগুলো করা হয় ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহের খনিজ অসমতা)-এর কারণের উপর নির্ভর করে
- সিরাম ক্রিয়েটিনিন, রক্তে ইউরিয়া নাইট্রোজেন
- প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা
- হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যার জন্য ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, 2ডি ইকো, এক্স-রে চেস্ট ইত্যাদি করা হয়।
ভারসাম্যের অভাব ঠিক করার জন্য নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলি করা হয়:
- ইঞ্জেকশন অথবা খাওয়ার ওষুধের মাধ্যমে ইলেক্ট্রোলাইট সম্পূরক দেওয়া হয়।
- পটাসিয়ামের মতো ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ তাজা ফল।
- পেশীতে খিঁচ, মাথাব্যথা, বমিভাব, ইত্যাদি থেকে উপশমের জন্য উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা।
- ওডেমা বা শরীর ফোলার ক্ষেত্রে জল খাওয়ার পরিমান কম করা হয়।
- ওডেমা কমাতে ডাইইউরেটিকের মতো ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
- কর্টিকস্টেরয়েডস অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি সম্পর্কিত অসুখের কারণে ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজের অসমতা) হয়।