একজিমা - Eczema in Bengali

Dr. Ayush PandeyMBBS,PG Diploma

December 29, 2018

May 03, 2023

একজিমা
একজিমা

সারাংশ

একজিমা, যার অন্য নাম হল এটোপিক ডারমাটাইটিস, একটি চর্মরোগবিশেষ। শরীরের ভিতর থেকে অথবা বাইরে থেকে কোন বস্তু যখন ত্বকের উপর প্রভাব ফেলতে থাকে, তখন দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অতি-সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ত্বকের উপরে একজিমা হয়। যে বস্তুগুলি দেহের বাইরে থেকে প্রভাব ফেলে সেগুলির মধ্যে আছে রাসায়নিক পদার্থ এবং ড্রাগস। ভিতর থেকে যেগুলি প্রভাব ফেলে সেগুলি হল বিভিন্ন এন্টিজেন (বিষাক্ত বা বাইরের বস্তু) এবং হ্যাপটেনস (এক ধরণের এন্টিজেন)। সাধারণত একজিমার উপসর্গগুলি হল চুলকানি, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, রস বার হতে থাকা এবং ছাল উঠে যাওয়া। একজিমার চিকিৎসা এবং এর আরোগ্যের সম্ভাবনা নির্ভর করে একজিমার ধরণের উপরে এবং রোগীর বয়সের উপরে।

একজিমা কি - What is Eczema in Bengali

একজিমা ত্বকের একটি সমস্যা। ত্বকে খড়খড়ে, লাল রঙের ছোপ দেখা যায়। এই ছোপগুলি ফুলে যায় এবং ফোসকা পড়ে। যার ফলে চুলকানি হয়।  তীব্র চুলকানি এবং আঁচড়ানোর জন্য কখনও কখনও রক্তক্ষরণ হতে পারে। একজিমা হলে চামড়ার মোটা পড়ত ডার্মিস ফুলে যায়। দেহের যে কোন অংশে, যে কোন বয়সে একজিমা হতে পারে। একজিমা শব্দটি এসেছে একটি গ্রীক শব্দ থেকে যার অর্থ "ফুটিয়ে তোলা"। একজিমাতে চামড়া দেখলে সত্যি মনে হয় চামড়া ফুটছে। কাজেই আগের যুগের চিকিৎসকরা সঠিক ভাবেই এই রোগের নামকরণ করেছিলেন।

Antifungal Cream
₹629  ₹699  10% OFF
BUY NOW

একজিমা এর উপসর্গ - Symptoms of Eczema in Bengali

একজিমার বিভিন্ন ধরণ আছে। এর মধ্যে কতকগুলি আছে যেগুলি হওয়ার কিছু সনাক্তযোগ্য পরিবেশগত কারণ আছে। আবার কতকগুলি আছে যেগুলি আরও জটিল। সব ধরণের একজিমার ক্লিনিকাল লক্ষণ এবং উপসর্গ একই রকমের শুধু তাদের সময়কালের তারতম্য হয়, অর্থাৎ তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী। এগুলি হচ্ছে:

  • এটোপিক একজিমা বাচ্চাদের মুখমণ্ডল এবং মধ্য-শরীরে হয়। যেহেতু বাচ্চারা প্রভাবিত জায়গায় আঁচড়াতে থাকে তাই চামড়া উঠে যায় এবং লাল হয়ে যায়। এটোপিক একজিমাতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। সর্ব প্রথম গালে হয়। যেখানে ডায়াপার পড়ানো হয় সেই জায়গাগুলি সাধারণত প্রভাবিত হয় না। বাচ্চাদের ফুসকুড়ি গুলি দেখা যায় হাঁটুর পিছনে, কনুইয়ের সামনে, কব্জিতে এবং গোড়ালিতে। এটোপিক একজিমা কখনও কখনও জননেন্দ্রিয়তেও হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে, একটি হাল্কা ধরণ লক্ষ্য করা যায় এবং চামড়া শুষ্ক হয়ে ছাল ওঠে; এগুলি হয় হাতে, চোখে, শরীরের ভাজে এবং স্তনাগ্রে।
  • সেবোরোহিক একজিমা হলে ছোট ছোট চামড়ার স্তর দেখা যায়। এগুলি দেখা যায় মাথায়, মুখমণ্ডলে এবং দেহের ঊর্ধ্বাংশে। বাচ্চাদের এই রোগ হলে ক্র্যাডেল ক্যাপ (মাথায় হালকা এবং চটচটে চামড়া ওঠা) হয় এবং বগলে ও কুঁচকিতে ফুসকুড়ি হয়। এই ফুসকুড়িগুলি গোলাপি রঙের হয় এবং সাধারণত কম চুলকানি হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত ব্লেফারাইটিস (চোখের পাতার সীমানায় লাল চামড়ার স্তর হওয়া) দেখা যায়। বয়স্কদের প্রভাবিত জায়গাগুলিতে চুলকানি কম হয়, এবং একজিমা সাধারণত শীতকালে হয়।
  • ডিসকয়েড একজিমা দুই ধরণের হয়। একটি ধরণ হচ্ছে তীব্র ধরণের, তার থেকে রস বার হতে থাকে। আর একটি শুখনো ধরণের। দুই ধরণই শরীরের উপরের অংশে হয়। ডিসকয়েড একজিমাতে পরিষ্কার গোল বা ডিম্বাকৃতি লালচে ক্ষত দেখা যায়। এই ক্ষতগুলিতে ব্যথা হয়।
  • যন্ত্রণাদায়ক কন্টাক্ট একজিমাতে, প্রথম দিকে ক্ষত শুধু সেই জায়গাতেই হয় যে জায়গাটাতে রোগের প্রাথমিক স্পর্শ লেগেছিল। ক্ষত লাল রঙের হয়, তাতে ফোসকা হয় এবং ত্বকের খোসা পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে জায়গাটি শুখিয়ে যায় এবং চামড়া ফেটে যায়।
  • অ্যালার্জি হয় এমন বস্তুর ছোঁয়া যেখানে লেগেছিল সেই জায়গায় অ্যালার্জিক কন্টাক্ট একজিমা হয়। যদি যত্ন না নেওয়া হয়, তাহলে এটি অন্য জায়গাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এলার্জেনের থেকে যদি কয়েক দিন দূরে থাকা যায়, তা হলে ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়। ত্বকের রঙ লাল হয়, চুলকানি হয়, ফুলে যায় বা শুখনো হয়ে যায়। এই রোগ নিকেল ধাতুর (গয়নাতে থাকে) ছোঁয়া লেগে কানের লতিতে এবং কব্জির কাছে হয়।
  • এস্টিয়াটটিক একজিমা সাধারণত পায়ের নিচের অংশে হয়। ত্বক লালচে রঙের হয়। ত্বকে সূক্ষ্ম ফাটা থাকে এবং উঁচু নিচু হয়। ক্ষতগুলি হীরার আকৃতির হয় আর লাল রঙের ব্যান্ডের মত নেটওয়ার্ক থাকে। গুরুতর অবস্থায় ফুলে যায় এবং ফোসকা পড়ে।
  • স্ট্যাটিস একজিমা কে শিরার একজিমাও বলা হয় কারণ শিরার ত্রুটির জন্যই এটি হয়। এর উপসর্গগুলি হল ফুসকুড়ি, ফোস্কা, গাঢ় ত্বক, পায়ে পুরু চামড়া, শুষ্ক ত্বক, আলসার প্রভৃতি। ক্ষত অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং চুলকানি দায়ক হতে পারে।
  • লিচেন সিম্পলেক্স একজিমা বেশির ভাগ সময়ে ঘাড়ে, পায়ের নিচের দিক এবং পায়ু-জননেন্দ্রিয় এলাকায় হয়। এটি দেখতে একটি লম্বা বা ডিম্বাকৃতির ফলকের মত। এতে তীব্র চুলকানি হয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে ঘায়ে রঙ দেখা যায়। চুলকানির জন্য আঁচড়ের দাগও থাকে।
  • পমফোলিক্স হাতের তালু আর পায়ের তালুতে হয়। ক্ষতে অনেকগুলি গুটিকা এবং বুদবুদ দেখা যায়। এই ক্ষতে তীব্র থেকে তীব্রতর চুলকানি হতে পারে, সাথে জ্বালাও হবে। ফোসকা ফেটে গেলে ত্বক শুষ্ক এবং লালচে হয়ে যাবে যাতে অনেক ফাটা থাকবে এবং বেদনাদায়ক হবে।

একজিমা এর চিকিৎসা - Treatment of Eczema in Bengali

যেহেতু একজিমা হওয়ার কারণ জানা যায় না তাই এর কোন চিকিৎসা নেই। এর চুলকানির মত উপসর্গগুলি এবং ক্ষতগুলিতে সংক্রমণ রোধ করাই এর বুনিয়াদি চিকিৎসা। কিছু সাধারণ পদক্ষেপ যা নেওয়া যেতে পারে:

  • ব্যাখ্যা, আশ্বাস, এবং উৎসাহ দেওয়া।
  • যা থেকে একজিমা হতে পারে তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
  • নিয়মিত তেলতেলে প্রলেপ ব্যবহার।
  • উপযুক্ত ভাবে কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম এবং লোশন ব্যবহার।

এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের একজিমার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সেগুলি হল:

  • এটোপিক একজিমা
    রোগীকে ব্যাখ্যা এবং সাহায্য দিতে হবে। নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা এবং যত কম সম্ভব স্থানীয় ভাবে লাগানোর জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করতে হবে। 'ওয়েট র‍্যাপস', টার এবং ইছথাম্মল পেস্ট দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে। ক্ষতে সংক্রমণ হলে এন্টিহিস্টামিনসের মত ওষুধ এবং ক্ষতের জায়গায় এন্টিসেপটিক লাগিয়ে রাখতে হবে।
  • সেবোরোহিক একজিমা  
    কেটোকোনাজোল শ্যাম্পু এবং ক্রিমের মত জিনিসগুলি এই একজিমার চিকিৎসার বুনিয়াদ। এর সাথে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে অতি অল্প কর্টিকোস্টেরয়েডস দেওয়া হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসার  পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
  • ইরিট্যান্ট কন্ট্যাক্ট একজিমা এবং অ্যালার্জিক কন্ট্যাক্ট একজিমা
    ইরিটান্টস এবং অ্যালার্জেনগুলির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জীবনধারার পরিবর্তন করুন।
  • স্ট্যাটিস একজিমা
    যেখানে একজিমা হয়েছে সেখানে লাগানোর জন্য এই ওষুধগুলি ব্যবহার করা হয়:  কর্টিকোস্টেরয়েডস যেমন 1% হাইড্রোকর্টিজোন অথবা 0.05% ক্লোবিটাজোন বিউটাইরেট অথবা 30 গ্রাম ক্ষমতাশালী কর্টিকোস্টেরয়েডস যেমন 0.1% বিটামিথাজোন ভ্যালেরেট, 0.1% মোমেটাজোনে ফিউরোয়েট। ঘা থাকলে সেখানে এই ওষুধগুলি লাগান নিষেধ। আশে পাশে ফোলা থাকলে পা উঁচুতে তুলে রাখতে হবে এবং গ্রেডেড কমপ্রেশান ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে।
  • এস্টিয়াটটিক একজিমা
    ত্বক শুষ্ক হতে দেবেন না; ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। ঘন ঘন স্নান করবেন না। উপসর্গগুলি হ্রাস করতে করটিকোস্টেরয়েডস লাগাবেন।
  • লিচেন সিম্পলেক্স একজিমা
    প্লাকের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ভাবে স্টেরয়েডস লাগাতে হবে। প্রতি 4-6 সপ্তাহ অন্তর স্টেরয়েড ইনজেকশান নিতে হবে। ময়েশ্চারাইজার এবং জ্বালা ঠাণ্ডা হওয়ার ক্রিম লাগাতে হবে। এন্টিহিস্টামিন্স অথবা এন্টিডিপ্রেসান্টস ব্যবহার করা যাবে।
  • পমফোলিক্স একজিমা
    এই একজিমার প্রভাবিত জায়গাগুলি হল হাতের তালু এবং পায়ের পাতা। পটাশিয়াম পারম্যঙ্গানেট দ্রবণে ভেজান কাপড় দিয়ে জায়গাগুলি ঢেকে রাখতে হবে। মোজা সমেত আরাম দায়ক জুতো, এন্টিপার্স্পির‍্যান্ট (অধিক ঘামের ব্যবস্থাপনার জন্য), স্থানীয় ভাবে লাগানোর জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড ক্রিম, সিস্টেম্যাটিক কর্টিকোস্টেরয়েডগু৪লি ব্যবহার করা হয়।

জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

একজিমার প্রতিরোধ করা অথবা ভবিষ্যতে আরেকবার হওয়া থেকে প্রতিরোধ করার কয়েকটি পদ্ধতি আছে। নিচে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শগুলি মনে রাখতে হবে:

  • সর্বদা আপনার ত্বক আর্দ্র রাখবেন।
  • যা থেকে একজিমা হতে পারে তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
  • তাপমাত্রা ওঠানামা সীমাবদ্ধ রাখুন।
  • ধ্যান এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে চাপ এবং মেজাজের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
  • সঠিক ওজন বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস করুন।

ত্বকে একজিমা হলে আঁচড়াবেন না। অতএব, আপনার নখ ঘন ঘন কাটাই ভাল।

Skin Infection Tablet
₹719  ₹799  10% OFF
BUY NOW


তথ্যসূত্র

  1. Harsh Mohan: Textbook of Pathology [Internet]
  2. Stuart Ralston Ian Penman Mark Strachan Richard Hobson. Davidson's Principles and Practice of Medicine. 23rd Edition: Elsevier; 23rd April 2018. Page Count: 1440
  3. American Academy of Dermatology. Rosemont (IL), US; Stasis dermatitis
  4. National Health Service [Internet]. UK; Atopic eczema.
  5. International Eczema-Psoriasis Foundation [Internet]; Eczema Rashes: Definitions, Types, Symptoms & Best Treatments

একজিমা জন্য ঔষধ

Medicines listed below are available for একজিমা. Please note that you should not take any medicines without doctor consultation. Taking any medicine without doctor's consultation can cause serious problems.