শ্বাস কষ্ট কাকে বলে?
কারওর যখন তার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গ্রহণে কষ্ট বা অসুবিধা দেখা যায়, তখন সেই ব্যাক্তির শ্বাস কষ্ট বা নিঃশ্বাসের সমস্যা রয়েছে বলা হয়। এটা লঘু সমস্যা হতে পারে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় অথবা সমস্যা ভয়াবহও হতে পারে নিউমোনিয়ার মতো ক্ষেত্রে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ শ্বাস কষ্টের সাথে জড়িত ও বিপজ্জনক, সেগুলি হল:
- সোজা হয়ে শুলে শ্বাসের সমস্যা হওয়া বা ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে টেনে টেনে নিঃশ্বাস নেওয়া অথবা ইনহেলার নেওয়া সত্ত্বেও আগে থেকে দেখা দেওয়া উপসর্গ আরো সঙ্গীন অবস্থায় পৌঁছানো।
- শ্বাস গ্রহণ বা ত্যাগের সময় সাঁইসাঁই শব্দ (হুইজিং)
- খুব জ্বর, সাথে হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া এবং কাশি।
- আঙ্গুলের মাথা ও ঠোঁট নীলচে হয়ে যাওয়া।
- নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় জোরে শব্দ হওয়া, যাকে স্ট্রাইডর বলে।
- সংজ্ঞানাশ।
- পায়ে ও গোঁড়ালিতে ফোলাভাব।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
শ্বাস কষ্টের প্রধান কারণগুলি হল:
- উদ্বেগ এবং প্যানিক অ্যাটাক
- শ্বাসনালী ও শ্বাসনালীর দু’টি শাখা সহ অক্সিজেন সরবরাহের নির্দিষ্ট পথে সমস্যা
- অ্যালার্জি
- রক্তাল্পতা
- Low fitness level
- কম শারীরিক যোগ্যতা
- ফুসফুসের বিভিন্ন অবস্থা, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, প্রভৃতি।
- হৃদরোগ, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে যেসব ব্যক্তির হৃদযন্ত্র পরিমাণ মতো রক্ত পাম্প করতে পারে না অক্সিজেন সররবরাহের জন্য।
এর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কিভাবে হয়?
প্রাথমিক ভাবে, আপনার চিকিৎসক আপনার অবস্থার সম্পূর্ণ চিকিৎসাগত ইতিহাস ও উপসর্গগুলি জানতে চাইতে পারেন। এরপর শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়। চিকিৎসাগত ইতিহাস, ব্যক্তির বয়স, এবং শারীরিক পরীক্ষার ফলাফল প্রভৃতি বিচার করে চিকিৎসক টেস্ট করতে দিতে পারেন, যার মধ্যে আছে:
- রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রক্ত-অক্সিজেন মাত্রা দেখা
- অ্যালার্জি টেস্ট
- বুকের এক্স-রে
- থ্রোট সোয়াব ( গলার পিছন থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা সংক্রমণের টেস্টের জন্য পাঠানো)
- বডি প্লেথিসমোগ্রাফি
- ডিফিউশন টেস্ট
- পালমোনারি ফাংশন টেস্ট
অভ্যন্তরীণ কারণগুলির তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এরমধ্যে আছে অ্যান্টিবায়োটিক, ডায়ইউরেটিক, প্রদাহ উপশমকারী ওষুধ, স্টেরোয়েড, প্রভৃতি।
শ্বাস কষ্টের চিকিৎসার জন্য অন্যান্য উপায়গুলি হল:
- ঠোঁট-কুঁচকে শ্বাস নেওয়া
এই পদ্ধতিতে, একজন ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নাক বা মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিতে, ঠোঁট এমন অবস্থায় রেখে যাতে মনে হয় শিস দেওয়া (ঠোঁট-কুঁচকে রেখে) হচ্ছে, একই ভাবে শ্বাস ছাড়া হয় যাতে ফুসফুসে বাতাস ভরা যায়।
- পজিশনিং
এই পদ্ধতি সাধারণত ব্যবহার করা হয় যদি শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, কারণ পেশীগুলি যখন বিশ্রামে থাকে তখন শ্বাস নিতে সুবিধা হয়। এটা সাধারণত সিঁড়ি চড়ার সময় করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে,যা করা হয়ে থাকে:
দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পর, আপনাকে সামনের দিকে ঝুঁকতে হবে হাত উরুর ওপর রেখে, এতে আপনার বুক ও কাঁধের বিশ্রাম হবে। এভাবে, সেগুলি বিশ্রামে থাকা অবস্থায়, আপনার শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। ঠোঁট-কুঁচকে শ্বাস নেওয়া যেতে পারে তখন।
- আস্তে আস্তে শ্বাস নেওয়া
এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যখন আপনি হাঁটেন বা হালকা ভার বহন করেন, কারণ এতে শ্বাস কষ্টের সমস্যা কমে বা ঠিক হয়ে যায়।
- হাঁটার জন্য: একজন ব্যক্তিকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তারপর নিঃশ্বাস নিতে হয়, আবার কিছুটা হেঁটে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হয়। তারপর বিশ্রাম ও পুনরাবৃত্তি।
- উত্তোলনের জন্য: যখন কোনও ব্যক্তি ভার বহন করেন, তখন হাঁটার সময় ভার শরীরের কাছাকাছি রাখা উচিত, তাতে শক্তির ব্যবহার কম করতে হয় এবং ভার উত্তোলনের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গভীর শ্বাস গ্রহণ করা উচিত।
- ডিসেনসিটিজেশন বা সংবেদনশীলতার অভাব
এই পদ্ধতি আপনাকে সাহায্য করবে ভয়-ভীতি ছাড়াই শ্বাস কষ্টের মোকাবিলা করতে। এর মধ্যে আছে: পজিশনিং,ঠোঁট-কুঁচকে শ্বাস নেওয়া, এবং আস্তে আস্তে শ্বাস নেওয়া প্রাত্যহিকভাবে অভ্যাস করতে হবে যাতে আপনার আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে। আপনার চারপাশের মানুষজনকে আপনার অবস্থা সম্বন্ধে অবগত করতে হবে।