এনজিওগ্রাফি কি?
এনজিওগ্রাফি একটি এক্স-রে প্রক্রিয়া যাতে ডাই বা রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, এতে যে ধমনী হৃদয়ে রক্ত পৌঁছায় তাতে ইনজেকশনের মাধ্যমে রঞ্জক প্রবেশ করানো হয়। যেহেতু ধমনীগুলি সাধারণ এক্স-রেতে দেখা যায় না, তাই বিশেষ একটি রঞ্জক ঢুকিয়ে দিয়ে হৃদযন্ত্রের দিকে ও হৃদযন্ত্রে রক্তের প্রবাহ লক্ষ্য করা হয় এবং ধমনীগুলিতে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা তা দেখা হয়।এনজিওগ্রাফির সময় রঞ্জকের গতি রেকর্ড করা হয় যাকে এনজিওগ্রাম বলে এবং একটি টেলিভিশন মনিটরে সমস্ত ঘটনাটি দেখা যায়।
এনজিওগ্রাফি কেন করা হয়?
এনজিওগ্রাফি কোনো অঙ্গে রক্তের প্রবাহকে নিরীক্ষণের জন্য করা হয়। ধমনীগুলি স্বাস্থ্যকর আছে কিনা এবং এর মধ্য দিয়ে কিভাবে রক্ত বাহিত হচ্ছে তা জানার জন্য এটি করা হয়। এটি রক্ত প্রবাহী ধমনীগুলির অবস্থা নিরূপণে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে রক্ত বাহিকার সম্বন্ধীয় রোগ, যেমন অ্যাথেরোস্কলেরোসিস, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ বা রোগ, ব্রেন অ্যানিউরিজম, অ্যানজিনা, রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, পালমোনারি এম্বোলিজমের ক্ষেত্রে অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহনে সাহায্য হয়। খুব সাধারণভাবে, হৃদযন্ত্র ও মস্তিস্কের রক্ত প্রবাহী ধমনীগুলির মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা তা জানতে এনজিওগ্রাফি সাহায্য করে।
কোন ব্যক্তির এনজিওগ্রাফি করার দরকার পড়ে?
অনেকক্ষেত্রে এনজিওগ্রাফি করার দরকার হয় যার মধ্যে নিচে কিছু উল্লেখ করা হলো:
- যে ব্যক্তির অ্যানজিনা আছে - যদি একজন ব্যক্তি বুকে অস্বাভাবিক ব্যথা বা চাপ অনুভব করেন, যেটা কাঁধে, হাতে, গলায়, চোয়ালে অথবা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে এনজিওগ্রাফি করতে বলা হয়।
- যে ব্যক্তির কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে - যদি কোনো ব্যক্তির হৃদস্পন্দন হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পরিস্থিতি বোঝার জন্যে এনজিওগ্রাফি করা হতে পারে।
- যদি ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, এক্সারসাইস স্ট্রেস টেস্ট এবং অন্য পরীক্ষাতে দেখা যায় যে কোনো ব্যক্তির হৃদরোগ আছে, তাহলে অবশ্যই এনজিওগ্রাফি করতে হবে।
- যদি একজন ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হন, জরুরী ভিত্তিতে করোনারি এনজিওগ্রাফি করা হয়।
এনজিওগ্রাফি কিভাবে করা হয়?
এনজিওগ্রাফি সাধারন ভাবে একটি নিরাপদ পদ্ধতি। এটি সাধারণত হাসপাতালের এক্স-রে বা রেডিওলজি বিভাগে করা হয়। এটি করতে 30 মিনিট থেকে 2 ঘন্টা পর্যন্ত লাগতে পারে। রোগী ওই দিনেই হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারেন। এটি করার সময় ব্যক্তিটি সাধারণত জেগে থাকেন, কিন্তু যাতে বিশ্রামে থাকতে পারেন সেই জন্য আচ্ছন্ন করার ওষুধ দেওয়া হয়। কখনো কখনো, সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হয় যাতে রোগীকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়। আপনাকে একটি টেবিলে শুইয়ে দেওয়া হয়। কুঁচকি অথবা কব্জির নিকট অঞ্চল পরিষ্কার করা হয় এবং লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে অবশ করা হয়। একটা ছিদ্র করা হয় এবং একটা ছোটো পাতলা নল ধমনীতে ঢোকানো হয়, যাকে ক্যাথিটার বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা সাবধানতার সাথে এই নলটি যার পরীক্ষা করতে হবে সেই অঙ্গের দিকে নিয়ে যান। ক্যাথিটারের অবস্থান জানার জন্যে এক্স-রে দ্বারা ছবি নেওয়া হয়। ক্যাথিটারে সিরিঞ্জ দিয়ে রঞ্জক পদার্থ ঢোকানো হয় এবং যখন ডাই বা রঞ্জক রক্তের মাধ্যমে ধমনীতে বহমান হয় তখন এক্স-রে দিয়ে অনেকগুলি ছবি তোলা হয়। এর ফলে ধমনীতে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা আছে কিনা তা জানা যায়।