অর্জুনের ছাল কি?
টার্মিনালিয়া মহাজাতির অন্তর্গত একটি চিরহরিৎ বৃক্ষ হল অর্জুন। এরই মতন বিস্ময়কর ঔষধি বৃক্ষ হচ্ছে হরিতকী (টারমিনালিয়া চেবুলা) এবং বহেড়া (টারমিনালিয়া বেল্লেরিকা)। শোভাময় অর্জুন গাছের ঔষধি গুণ রয়েছে এর বাকলের ভিতরে, যাকে হৃদয়'এর একটি বলবর্ধক ঔষধ বলে মানা হয়। এমন কি, ঋক বেদেও অর্জুন গাছের উল্লেখ পাওয়া যায়। হৃদয়ের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নতির জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা অর্জুনের বাকল সুপারিশ করেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদয়ের বিভিন্ন রোগে যেমন হৃদরোগ (হার্ট এ্যাটাক), হৃদয় বৈকল্য (হার্ট ফেলিওর) এবং এমন কি সন্ন্যাস রোগে (স্ট্রোক) অর্জুনের বাকলের নিরাময় ক্ষমতা এবং উপকারিতা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। আপনি শুনলে হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাবেন যে বিশ্বাস করা হয় অর্জুনের বাকল রাখলে হৃদয় চক্র (মানব দেহের শক্তির কেন্দ্র) শক্তিশালী হয় এবং এর ঔষধি গুণগুলিকে তুলনা করা হয় পশ্চিমের হওথ্রন ভেষজ চিকিৎসার সাথে।
অর্জুন মূলত একটি ভারতীয় গাছ। সাধারণত নদী বা নালার ধারে এই গাছ জন্মায়। এর উচ্চতা 20 থেকে 30 মিটার পর্যন্ত হতে পারে। অর্জুনের বাকল মসৃণ এবং ধূসর, কিন্তু এরই মধ্যে কিছু সবুজ এবং লাল ছোপ আছে। অর্জুনের পাতাগুলি প্রায় আয়তাকার। গাছের শাখায় একটি পাতা অপরটির বিপরীত দিকে থাকে। মে থেকে জুলাই মাসে গাছে সাদা-ক্রিম রঙের ফুলের গুচ্ছ দেখা যায়। কাঁচা অবস্থায় অর্জুন ফল সবুজ রঙের হয়, পরে তা পরিপক্বতা পেলে রঙ বলদে কাঠের মত বাদামী রঙ হয়। ফলগুলির স্বতন্ত্র পাখা থাকে, যা অর্জুনের চিহ্নিত বৈশিষ্ট্যগুলির একটি।
আপনি কি জানতেন?
'টারমিনালিয়া' শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ 'প্রান্ত'। এটি সম্ভবত অর্জুন গাছের পাতার কথা ভেবেই এসেছে, কারণ পাতাগুলি শাখার প্রান্তে হয়। 'অর্জুন' শব্দটির অর্থ 'সাদা' বা 'উজ্জ্বল'। এর কারণ হয়তো এর ফুলগুলি সাদা রঙের অথবা এর বাকলের রঙ উজ্জ্বল সাদা।
অর্জুন গাছ সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য।
- বৈজ্ঞানিক নাম: টারমিনালিয়া অর্জুনা
- পরিবার: কমব্রিটাসিয়া
- সাধারণ নাম: অর্জুন, সাদা মারুধ
- সংস্কৃত নাম: অর্জুন, ধবলা, নদীসার্য্য
- ব্যবহৃত অংশ: বাকল
- আদি প্রাপ্তি স্থান এবং ভৌগলিক বিতরণ: অর্জুন আদিতে ভারত এবং শ্রীলংকাতে জন্মাত। এখন বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়াতেও পাওয়া যায়।
- কর্মশক্তি: অর্জুনের বাকল পিত্ত এবং কফ হ্রাস করে কিন্তু বাত বৃদ্ধি করে। কাজেই দেহে এর একটি শীতল প্রভাব আছে।