যদিও আলসারেটিভ কোলাইটিস-এর কোনও নিরাময় নেই, চিকিৎসার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। আলসারেটিভ কোলাইটিস একজন ব্যক্তির জীবনের গুণমান প্রভাবিত করতে পারে। চিকিৎসা রীতিগুলির একটা সংমিশ্রণ হঠাৎ জ্বলে-ওঠা কমাতে এবং উপসর্গগুলি নিয়ন্ত্রণ করায় সাহায্য করতে পারে।
ওষুধ
আলসারেটিভ কোলাইটিস-এর চিকিৎসার জন্য বিধান দেওয়া ওষুধগুলি কোলনের প্রদাহ কমানোর দ্বারা এবং টিস্যুগুলিকে স্বাভাবিকভাবে আরোগ্য হতে দিয়ে কাজ করে। ঘন ঘন মলত্যাগ, ব্যথা, এবং রক্তপাতের মত অন্যান্য উপসর্গগুলিও ওষুধের সাহায্যে দমিত রাখা যেতে পারে। ওষুধগুলি হঠাৎ জ্বলে-ওঠার সংখ্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে যা অন্ত্রকে স্বাভাবিকভাবে সেরে উঠতে সময় দেবে। ওষুধগুলি শুধু উপশম ঘটাতে এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে তাই নয়, এইসমস্ত মানুষগুলির জীবনের গুণমান উন্নত করতেও সাহায্য করে।
এইসমস্ত ওষুধগুলির অন্তর্ভুক্তঃ
- অ্যামিনোস্যালিসিলেট
এগুলো হচ্ছে সেইসমস্ত ওষুধ যা প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এগুলো হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য বিধান দেওয়া হয়। অ্যামিনোস্যালিসিলেট হচ্ছে মৌখিক ওষুধ এবং ভালোভাবে সওয়া যায়।
- কোর্টিকোস্টেরয়েড
কোর্টিকোস্টেরয়েড প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকলাপ কমানো এবং প্রদাহ কমানোর দ্বারা কাজ করে। গুরুতর উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য সাধারণতঃ এগুলির বিধান দেওয়া হয়। এগুলো দীর্ঘ-মেয়াদী ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট এবং ব্রণ, ওজন বাড়া, এবং মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তনের মত কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
- ইমিউনো-মডুলেটর্স
এগুলো শুধুমাত্র সেইসমস্ত ব্যক্তিদের জন্য বিধান দেওয়া হয় যাঁরা ওষুধের অন্য কোনও পদ্ধতির প্রতি সাড়া দেন না। ইমিউনো-মডুলেটরগুলি প্রতিরোধ ব্যবস্থা দমিয়ে রাখে এবং প্রদাহ কমায়। এই ওষুধগুলি সংক্রমণের একটা বাড়তি বিপদ এবং ত্বকের ক্যান্সারের সামান্য বর্ধিত বিপদ সহ উপস্থিত হয়। সেজন্য, এগুলো শুধুমাত্র যথাযথ মেডিক্যাল পরামর্শের পরে নেওয়া যেতে পারে।
- বায়োলজিকস
বায়োলজিকগুলোও প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিশানা করে এবং প্রদাহ কমাবার জন্য এর কার্যকলাপ দমিয়ে রাখে।
বৃহদন্ত্রের এলাকা যেখানে উপসর্গগুলি ঘটছে সেটার উপর ভিত্তি করে ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। ওষুধগুলি প্রয়োগ করা হতে পারে এভাবেঃ
- এনিমা (মলদ্বারের মধ্যে তরল ওষুধের প্রবল ধারা প্রয়োগ করার দ্বারা)।
- মলাশয়ে প্রদানের জন্য ফেনা।
- সাপোজিটোরি (মলদ্বারের মধ্যে একটা কঠিন এবং দ্রবণীয় ওষুধ ঢোকানো)
- আইভি বা ইন্ট্রাভেনাস (শিরার মাধ্যমে প্রয়োগ)।
- কিছু ওষুধ সেই সাথে মৌখিকভাবেও নেওয়া যেতে পারে।
মিশ্রণ থেরাপি
কার্যকর ফল পেতে এবং উপসর্গগুলিকে আরও ভালোভাবে সামলাতে যুগপৎ (একই সময়ে) দুটো থেরাপির ব্যবহার একটা মিশ্রণ থেরাপি হিসাবে পরিচিত। যাই হোক, কোনও মিশ্রণ থেরাপি ব্যাপকভাবে বিধান দেওয়া হয়না যেহেতু এটার সাথে যুক্ত কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং তা আগের ওষুধগুলোর কার্যকারিতা কমাতেও পারে।
অস্ত্রোপচার
- যেসমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ওষুধের থেরাপি কোনও উন্নতি দেখাচ্ছে না এবং জটিলতা শুরু হয়েছে, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। উপসর্গগুলি থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্তি পাওয়ার জন্য অস্ত্রোপচারে অন্তর্ভুক্ত মলদ্বারসহ সম্পূর্ণ কোলন বাদ দেওয়া। আলসারেটিভ কোলাইটিস-এর জন্য বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচার আছে। প্রথমটার অন্তর্ভুক্ত সম্পূর্ণ কোলন এবং মলদ্বারের অপসারণ, সেই সাথে, পেটে একটা ছিদ্র তৈরি করা যার মাধ্যমে বর্জ্যগুলি বার হয়ে একটা পাউচের (ছোট থলি) মধ্যে জমা হয়। এই পাউচটা পেটের চামড়ার সাথে একটা আঠালো পদার্থ (অ্যাডহেসিভ) ব্যবহার করে জুড়ে দেওয়া হয়।
- অপর অস্ত্রোপচারগত বিকল্পও কোলন বাদ দেয় কিন্তু একটা আভ্যন্তরীণ পাউচ তৈরি করার সাথে জড়িত যা পায়ু বা মলদ্বারে অবস্থিত পেশীগুলির বৃত্তের (স্ফিংটার) সাথে যুক্ত। উভয় প্রক্রিয়া থেকে আরোগ্যলাভ করতে 4-6 সপ্তাহ লাগতে পারে।
জীবনধারা সামলানো
আলসারেটিভ কোলাইটিস সামলাতে পুষ্টিবিধান গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় পরিবর্তনগুলি উপসর্গগুলি সামলানো এবং সেই সাথে হঠাৎ জ্বলে-ওঠা কমানোয় সাহায্য করতে পারে। কিছু প্রস্তাবিত খাদ্যসংক্রান্ত পরিবর্তনের মধ্যে আছেঃ
- সোডা এবং বুদ্বুদপূর্ণ (কার্বোনেটেড) পানীয়গুলো এড়িয়ে চলা।
- জল এবং ফলের রসের মত তরল বেশি করে পান করা।
- বেশি আঁশযুক্ত খাবার যেমন বাদাম এবং শাকসবজির খোসা এড়িয়ে চলা।
- মশলাদার খাবার এড়ানো।
- নিয়মিত ব্যথামুক্তির ওষুধ এড়ানো।
- বড় খাবারের বদলে সারাদিন ধরে ছোট ছোট খাবার খাওয়া।
অন্ত্র থেকে পরিপোষক পদার্থগুলির দুর্বল শোষণক্রিয়ার ক্ষেত্রে, কিছু সম্পূরক পদার্থ আছে যেগুলো ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে কেউ নিতে পারেন। উপসর্গগুলির উপর ভিত্তি করে, নিম্নোক্ত খাদ্যসংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া যেতে পারেঃ
- কম-লবণযুক্ত খাবার।
- কম-আঁশযুক্ত খাবার।
- কম-চর্বিযুক্ত খাবার।
- দুগ্ধ-শর্করা-মুক্ত খাবার।
- উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার।
একটা স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা কোনও ব্যক্তির উপসর্গগুলি অনুযায়ী পরিকল্পিত হয়েছে। সেজন্য, খাবারের ব্যাপারে কোনটা খাওয়া আবশ্যক বা কোনটা খাওয়া অবশ্যই উচিত নয় সেটা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
এটা সুপারিশ করা হচ্ছে যে আলসারেটিভ কোলাইটিসযুক্ত কোনও ব্যক্তি অবশ্যই প্রতি এক থেকে তিন বৎসরে একটা কোলনস্কপির মধ্য দিয়ে যাবেন (বছরে একবার বা প্রতি 3 বছরে একবার, যা ডাক্তারের দ্বারা পরামর্শ দেওয়া হবে)।