টার্নার সিন্ড্রোম কি?
টার্নার সিন্ড্রোম হল একটা ক্রোমোজোমের রোগ, যেটা বিশেষত মহিলাদের আক্রান্ত করে। মানুষের প্রতিটা কোষে 23 জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে, যেগুলো লিঙ্গ নির্ণয় করে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে, এই ক্রোমোজোমের জোড়াকে XX বলে, এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে, এই জোড়াকে XY বলে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কোনো একটা X ক্রোমোজোমে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে টার্নার সিন্ড্রোমের সৃষ্টি হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
মহিলারা টার্নার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হলে নীচে দেওয়া উপসর্গগুলো উপস্থিত হয়:
- ছোট গলা।
- জন্মের সময় হাত ও পা ফুলে থাকা।
- নরম নখ, যেগুলো উপরের দিকে ঘুরে যায়।
- কানের গঠনে অস্বাভাবিকতা।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- দূর্বল হাড়ের গঠন।
- দৈহিক উচ্চতা কম হওয়া।
- হাইপোথাইরয়েডিজম।
- অনুন্নত ডিম্বাশয়ের কারণে বন্ধ্যাত্ব।
- মাসিক না হওয়া।
- আনুষঙ্গিক লিঙ্গগত বৈশিষ্টের কম বৃদ্ধি হওয়া।
- চাক্ষুষ-স্থানীয় সমন্বয়ে (জায়গার মধ্যে আপেক্ষিক অবস্থান বা দূরত্ব নির্ধারণ) সমস্যা।
টার্নার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের টাইপ 2 ডায়াবেটিস বা কার্ডিওভাস্কুলারের সমস্যা দেখা দেওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে।
এর প্রধান কারণগুলো কি কি?
যতদূর আগে বলা হয়েছে, মহিলাদের একজোড়া ক্রোমোজোম আছে যাকে সেক্স ক্রোমোজোম - XX বলা হয়। যখন এর মধ্যে একটা X ক্রোমোজোম স্বাভাবিক থাকে এবং অন্যটা হয় অনুপস্থিত থাকে বা গঠনগত অস্বাভাবিক হয় তখন তার ফলে টার্নার সিন্ড্রোম হয়। এই সেক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে অস্বাভাবিকতাই টার্নার সিন্ড্রোমের প্রাথমিক কারণ।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রে, টার্নার সিন্ড্রোম কোনো বংশগত ব্যাধি নয়। কিন্তু, বিরল ক্ষেত্রে, এই সিন্ড্রোম মা বাবার কাছ থেকে আসতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
জন্মের আগে বা জন্মের সময় শিশুর মধ্যে কিছু শারীরিক গঠনের অস্বাভাবিকতাকে দেখে এই সিন্ড্রোমের নির্ণয় করা হতে পারে।
টার্নার সিন্ড্রোমের নির্ণয়ের জন্য অনেকপ্রকার সনাক্তকরণ পরীক্ষা আছে। সেগুলো হল:
- অ্যামনিওসেন্টেসিস (আল্ট্রাসোনোগ্রাফির দ্বারা গর্ভের ভিতরে সুঁচের সাহায্যে নমুনা নিয়ে অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইডের পরীক্ষা)।
- শারীরিক পরীক্ষা।
- মনস্তত্ত্বিক সমন্বয়।
- রক্তপরীক্ষা।
- ক্রোমোজোমের পরীক্ষা।
- জিনগত পরীক্ষা।
বর্তমানে, টার্নার সিন্ড্রোমের জন্য কোনো পরিচিত প্রতিকার নেই। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হল উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং তার মধ্যে রয়েছে:
- হরমোনগত চিকিৎসা (ব্যাহত বৃদ্ধিকে পরাস্ত করতে সাধারণত শৈশবেই এটা করা হয়)।
- ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন থেরাপি (হাড়ের ক্ষতি আটকায় এবং যৌবনারম্ভের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে)।
- কাউন্সেলিং (উত্তম মনস্তত্ত্বিক সমন্বয় করে)।