গর্ভাবস্থায় আর এইচ সংবেদনশীলতা কি?
রীস্যাস বা আর এইচ ফ্যাক্টর হল লোহিত রক্ত কণিকায় উপস্থিত অ্যান্টিজেন, যা্র ফলে রক্তের বিভাগ আর এইচ পজিটিভ হয়। আর এইচ ফ্যাক্টর বিহীন ব্যক্তিরা আর এইচ নেগেটিভ রক্তের বিভাগের আওতায় পড়েন। যখন আর এইচ-নেগেটিভ রক্ত, আর এইচ-পসিটিভ রক্তের সাথে মিশে যায়, তখন রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতিতে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, ফলে এই অ্যান্টিজেনের প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবডির সৃষ্টি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলি লোহিত রক্ত কণিকাকে নষ্ট করে দিতে পারে, যার ফলে আর এইচ সংবেদনশীলতা হয়ে থাকে। যদি গর্ভাবস্থায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে আর এইচ-নেগেটিভ মায়ের বাচ্চাটি আর এইচ-পসিটিভ হয়, তাহলে সেটি গর্ভাবস্থায় আর এইচ সংবেদনশীলতা নামে পরিচিত হয়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রথম গর্ভাবস্থাকালে, সাধারণত কোন প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না। যদি প্রথম গর্ভাবস্থায় 40 সপ্তাহের বেশি সময় পাড় হয়ে যায়, তাহলে খুব কম ক্ষেত্রে প্লেসেন্টা নষ্ট হয়ে যায় (প্লেসেন্টার ছেদন) ও যার ফলে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে।
যদিও, দ্বিতীয়বার গর্ভাবস্থাকালে, যদি আবার বাচ্চা আর এইচ-পসিটিভ হয়, তাহলে সদ্যজাত শিশুটি জন্ডিস, অ্যানিমিয়ার মতো রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, বা আকস্মিক মৃত্যু ও অনায়াসেই গর্ভপাত (অবস্থাটি ইরিথ্রোব্লাস্টোসিস্ট ফয়েটেলিস নামে পরিচিত) হতে পারে। এটি ঘটে কারণ মায়ের শরীর, শিশুর মধ্যে থাকা আর এইচ-পসিটিভ রক্তের কোষের জন্য অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
যখন প্রথম গর্ভাবস্থা্কালে আর এইচ-নেগেটিভ রক্তের মায়ের আর এইচ-পসিটিভ ভ্রূণের বিকাশ হয়, জন্মের সময় মায়ের সাথে বাচ্চার রক্ত মিশে যাওয়ার ফলে, মায়ের রক্ত আর এইচ অ্যান্টিজেন রূপে প্রকাশিত হয়। যাইহোক, দ্বিতীয় গর্ভাবস্থাকালে, যদি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, মায়ের শরীরে থাকা আর এইচ ফ্যাক্টর অ্যান্টিজেনগুলির প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি আগে থেকেই থাকে এবং তা ভ্রূণের লোহিত রক্ত কণিকাকে আক্রমণ করে, তাহলে সেক্ষেত্রে বড় ক্ষতি বা অনায়াস গর্ভপাত হতে পারে।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা কি?
একজন মহিলা ও তার সঙ্গীর আরএইচের অবস্থান জানার সাথে একটি পর্যাপ্ত চিকিৎসাগত ইতিহাস জেনে নেওয়া দরকার। যদি মহিলাটি আর এইচ নেগেটিভ ও তার সঙ্গী আর এইচ পজিটিভ হয়, তাহলে আর এইচের অসামঞ্জস্যতাজনিত পরীক্ষা করে দেখা হয়।
মায়ের রক্তে আর এইচ ফ্যাক্টরের প্রতিরোধে অ্যান্টিবডিগুলির উপস্থিতির সম্বন্ধে ধারনা পেতে সরাসরি কুম্বস পরীক্ষা করা হয়। এর ফল যদি পজিটিভ হয় তবে তা আর এইচের অসামঞ্জস্যতাকে নির্দেশ করে।
সাধারণত নবজাতককে আরএইচ অসামঞ্জস্যতার চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা নির্ভর করে কতটা গুরুতরভাবে রক্তক্ষয় হয়েছে তার উপর। স্বল্প রক্ত ক্ষয়ের জন্য 28তম সপ্তাহে বা শেষ তিনমাস কালের মধ্যে পুনঃমুল্যায়ন করা হতে পারে।
যদি অ্যানিমিয়া (রক্ত ক্ষয়) গুরুতর বা বিপদজনকভাবে হয়, সেক্ষত্রে সময়ের পূর্বে প্রসব করানো হতে পারে, ও রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে।