রেস্পিরেটরি ডিপ্রেশন (শ্বাসযন্ত্রের ডিপ্রেশন) কি?
রেস্পিরেটরি ডিপ্রেশন যা হাইপোভেন্টিলেশন নামেও পরিচিত, হলো একটি শ্বাসের রোগ যা ধীর গতিতে এবং অকার্যকর শ্বাসপ্রশ্বাসের কারণে শরীরে উচ্চ মাত্রায় কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং প্রচণ্ড কম পরিমাণ অক্সিজেনের উপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
এটির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
এই অবস্থার লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি রোগের প্রবলতার উপর নির্ভর করে বদলে যায়। এই রোগের হালকা থেকে মাঝারি অবস্থা পর্যন্ত যে সাধারণ উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলি হলো:
- হাঁপিয়ে যাওয়া বা শ্বাস উঠে যাওয়া।
- অবসাদ বা ক্লান্তি।
- সারাদিন ধরে ঘুম পাওয়া।
- আস্তে এবং অগভীর শ্বাস নেওয়া (দ্রুত শ্বাস নেওয়া খুব কম দেখা যায়)।
- ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা।
যেহেতু কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে অবস্থা গুরুতর হয়ে যায় সেক্ষেত্রে নিচে উল্লেখ করা উপসর্গগুলি দেখা যেতে পারে:
- মাথা যন্ত্রনা।
- বিভ্রান্তি।
- ঠোঁট, হাতের আঙুল বা পায়ের আঙুল নীলচে হয়ে যাওয়া।
- সিজার্স।
এর প্রধান কারণ কি কি?
রেস্পিরেটরি ডিপ্রেশন প্রধানত এই কারণগুলির জন্য হয়
- ওজন বেশি হওয়া বা খুব মোটা, যেক্ষেত্রে শ্বাস নিতে অতিরিক্ত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
- ঘুমের সময় শ্বাসনালি সঙ্কুচিতহয়ে যায়, যা অব্সট্রাক্টিভ স্লীপ এপনয়েয়া নামেও পরিচিত।
- বুকের দেওয়াল সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট বিকৃতি, যা সঠিকভাবে শ্বাস নেওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে।
- ফুসফুসের নির্দিষ্ট কিছু দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক রোগ যার ফলে শ্বাসনালি আটকে যায় [যেমন, ক্রনিক অব্সট্রাক্টিভ পালমনারি ডিজিজ (সিওপিডি ), সিসটিক ফাইব্রসিস]
- মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে সাধারণ কার্যকলাপের উপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ না রাখতে পারা, যেমন শ্বাস নেওয়া।
- যে পেশীগুলি শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে সেই পেশীগুলি দুর্বল হয়ে যাওয়া যার ফলে নিউরোমাসকুলার রোগ হয়।
- কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন ওপিওয়েডস, সিডেটিভস্, বার্বিতুরেটস, বেনযোডাইয়াজেপিন্স, বা অতি মাত্রায় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিষণ্নতার জন্য ওষুধ।
- অত্যাধিক মদ্যপান করা।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
চিকিত্সক উপসর্গগুলির সম্পূর্ণ ইতিহাস নেয় এবং তার সঙ্গে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করে; তারপর নিচে উল্লেখ করা পরীক্ষাগুলি করার পরামর্শ দিতে পারে কারণ নির্ণয় করার জন্য:
- রক্ত পরীক্ষা
- রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দেখার জন্য পালস অক্সিমেট্রি পরীক্ষা।
- রক্তে অক্সিজেন বহনকারী কোষের মাত্রা দেখার জন্য হেমাটোক্রিট এবং হেমোগ্লোবিনের বিবেচনা করা।
- কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অক্সিজেন মাত্রা দেখার জন্য এবং তার সঙ্গে রক্তের অ্যাসিড/বেস ভারসাম্য দেখার জন্য রক্ত গ্যাস পরীক্ষা।
- কোনও রকম অস্বাভাবিকতা আছে কি না তা দেখার জন্য বুকের এক্স-রে।
- ফুসফুসের কার্যকলাপের পরীক্ষা।
- ঘুম-সম্পর্কিত কোনও রোগ (স্লীপএপনয়েয়া) আছে কি না তা দেখার জন্য ঘুমের অধ্যয়ন।
রেস্পিরেটরি ডিপ্রেশনের পরিচালনার জন্য হাইপোভেন্টিলেশনের কারণের চিকিত্সা করতে হবে। কিছু থেরাপি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- যে ব্যক্তিদের ওজন বেশি বা খুব মোটা তাদের ওজন কমাতে হবে।
- বুকের কোনও বিকৃতি বা ত্রুটি থাকলে তা অস্ত্রপচারের মধ্যমে চিকিত্সা করতে হবে।
- সঠিক শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন থেরাপি।
- ক্রনিক ফুসফুসের রোগের চিকিত্সা।
- শ্বাসনালি খোলার জন্য ওষুধ।
- যেসব ওষুধের কারণে সমস্যা হচ্ছে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া।
- ক্রমাগত পসিটিভ এয়ারওয়ে চাপ (সিপিএপি) বা বাইলেভেল পসিটিভ এয়ারওয়ে চাপ (বিআইপিএপি) মেশিন ব্যবহার করা হয় শ্বাসনালির সুস্পষ্টতা বজায় রাখার জন্য।