খিদে না থাকা বা ক্ষুধামান্দ্য কি?
খাবার ইচ্ছে কমে যাওয়াকে ক্ষুধামান্দ্য বলে। যাঁরা ক্ষুধামান্দ্যে ভুগছেন তাঁরা খাবার খাওয়ার বহু ঘন্টা পরেও ক্ষুধা অনুভব নাও করতে পারেন, খাবারের কথা ভেবে বা খাবার দেখে অসুস্থ বোধ এবং ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। বেশ কিছু কারণ - শারীরিক এবং মানসিক - দুই কারণেরই ক্ষুধামান্দ্য অনুভূত হতে পারে। যখন এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, তখন এই অবস্থাকে অ্যানোরেক্সিয়া বা ক্ষুধাহীনতা বলে।
এর সঙ্গে যুক্ত প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ক্ষুধামান্দ্যের লক্ষণগুলি মোটামুটি স্পষ্ট। খাবারের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা দেখা দেয়, যার ফলে খাবারের কথা ভাবলে বা খাবার দেখলে বমিভাব, খিদে আর ওজন কমে যেতে পারে। কেউ কেউ আবার জোর করে খাবার খেলে খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই বমি করে ফেলেন। ক্ষুধামান্দ্য দীর্ঘদিন ক্ষুধামান্দ্যের ধরে চললে, আপনার মাথা ঘুরতে পারে এবং আপনি বিচলিত, দুর্বল বোধ করতে পারেন, বুকে চাপ অনুভূত হতে পারে আর শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা ও তাপমাত্রার পরিবর্তন অসহনীয় মনে হতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
বিভিন্ন অসুস্থতাজনিত কারণের জন্য খিদে না থাকার সমস্য়া হতে পারে। সেটা তীব্র মাথাযন্ত্রণার মতো সাধারণও হতে পারে বা ক্যান্সারের মতো চরম অসুখও হতে পারে। অ্যাকিউট বা তীব্র এবং ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের রোগ থেকেই ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। অসুস্থতা অথবা আঘাতের কারণে যন্ত্রণার থেকে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। খিদে না থাকার সম্ভাব্য কারণগুলি হল:
- মাইগ্রেন।
- স্নায়ুর ক্ষতি।
- অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা।
- ক্লান্তি।
- গর্ভাবস্থা।
- হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা।
- ঋতুস্রাবের পূর্বের লক্ষণ।
- সর্দি।
- মদ এবং মাদক ছেড়ে দেওয়া।
- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া।
- উদ্বিগ্নতা, মানসিক অবসাদ এবং ধকল।
- অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা অথবা বুলিমিয়া।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
উপসর্গ, চিকিৎসার ইতিহাস আর শারীরিক পরীক্ষার গবেষণা প্রাথমিক নির্ণয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। এটি চিকিৎসককে অসুস্থতার সম্ভাব্য কিছু কারণ মূল্যায়ন এবং সেই অনুযায়ী অন্যান্য পরীক্ষার পরামর্শ দিতে সহায়তা করবে। থাইরয়েডের সমস্যা, এইচআইভি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্য রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। হৃদরোগের জন্য ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), পেটের সিটি স্ক্যান এবং গ্যাস্ট্রিক পরীক্ষারও পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা করাই হলো প্রধান পদক্ষেপ। পাশাপাশি অবস্থার উপর নির্ভর করে ওষুধ থেরাপি ছাড়াও ডাক্তার বেদনানাশক ব্যবহারের নির্দেশও দিতে পারেন, যদি প্রয়োজন হয়। ব্যায়াম, বিশ্রাম, যথাযথ আহার এবং কাউন্সেলিং সহ জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনার পরামর্শও দেওয়া হতে পারে। ক্ষুধাবর্ধক এবং খাবারের স্বাদ পরিবর্তন করা হল খিদে বাড়ানোর কিছু কৌশল।