জায়ান্ট সেল আর্টারাইটিস কি?
জায়ান্ট সেল আর্টারাইটিস (জিসিএ) হলো একটি প্রদাহ জনিত অবস্থা, যা প্রধানত দেহের উপরিভাগ ও মস্তিষ্কের ধমনীর ক্ষতি করে। সাধারণভাবে যে আর্টারিগুলোর ক্ষতি হয় (টেম্পরাল আর্টারি), তা মাথার পাশে থাকে, একে টেম্পোরাল আর্টারাইটিস বা ক্রেনিয়াল আর্টারাইটিস বলে। এর ফলে, প্রধানত মাথাব্যথার আর ঝাপসা বা ডাবল ভিশনের সমস্যা হয়। স্ট্রোক, অন্ধত্ব অথবা অন্যান্য জটিলতার ঝুঁকি কমানোর জন্য অবিলম্বে চিকিৎসা করা আবশ্যক।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
যেসব ব্যক্তি জিসিএ রোগে আক্রান্ত, তাঁরা নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির মধ্যে কিছু বা প্রায় সবই উপলব্ধি করতে পারেন:
- কপালে ব্যথাভাব আর প্রচণ্ড যন্ত্রণা (সেইসঙ্গে রক্তবাহিকা মোটা হয়ে ওঠে) আর চুল আঁচড়ানো বা কামানোর সময় খুলির চামড়ায় ব্যথা অনুভব।
- ক্লান্তি
- শ্রবণ সমস্যা
- নিতম্ব, পা, হাত আর কাঁধের পেশীতে ব্যথাভাব,যন্ত্রণা ও আড়ষ্ঠতা, বিশেষ করে সকালবেলা অনুভব হয়
- রাতে ঘাম দেওয়া অথবা জ্বরের পাশাপাশি ফ্লু’র মতো লক্ষণ
- ওজন হ্রাস
- মাথাব্যথা
- ক্লডিকেশন (চিবোনোর সময় চোয়ালে বা জীভে ব্যথার অনুভূতি)
- বড়ো ধমনীগুলি আক্রান্ত হওয়ার কারণে পায়ের ডিমে ব্যথা অনুভব হওয়ার কারণে হাঁটাচলায় সমস্যা
- হঠাৎ আর মূলত আংশিক (কখনও পুরোপুরি) ভাবে দৃষ্টি হারানো, যা বিরল আর প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত সাময়িক হয়, কিন্তু যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে স্থায়ী ভাবে দৃষ্টি হারিয়ে যেতে পারে
- ডাবল ভিশন বা একই জিনিস দু’টি দেখা
- কদাচিৎ, স্ট্রোক অথবা মিনি-স্ট্রোক
- মানসিক অবসাদ
প্রধান উপসর্গ, যা তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের দৃষ্টিতে আনা উচিত, তা হলো:
- দেখতে অসুবিধা হওয়া
- চোয়াল অথবা জীভে ব্যথা
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
জিসিএ রোগের নির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা। তবে, কিছু এমন কারণ রয়েছে, যা জিসিএ হওয়ার জন্য দায়ী বলে ধরা হয়, তা হলো:
- বয়স বাড়া
- জেনেটিক্স বা জিনগত
- নির্দিষ্ট কিছু ভাইরাল অথবা ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ
- কার্ডিওভাসকুলার রোগের ইতিহাস থাকা
- অটোইমিউনিটি, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা শরীরকেই আক্রমণ করে বসে আর তার ফলে আর্টারি বা ধমনীতে প্রদাহ হয়
এটি নির্ণয় এবং চিকিৎসা কিভাবে করা হয়?
রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে, ডাক্তার এই নিম্নলিখিত উপদেশ দিতে পারেন:
- বিশদে মেডিক্যাল ইতিহাস দেখা, তারপর শারীরিক পরীক্ষা করা
- আক্রান্ত টিস্যুর বায়োপ্সি (ছোটো নমুনা সংগ্রহ করা হয় সার্জারির মাধ্যমে)
- এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন রেট (ইএসআর) দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়
- ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স অ্যাঞ্জিওগ্রাফি (এমআরএ)
- ডপলার আলট্রাসাউন্ড
- পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পিইটি)
জিসিএ-এর চিকিৎসা না করা হলে অন্ধত্ব এবং স্ট্রোক (চোখে আর মাথায় ঠিকমতো রক্ত প্রবাহিত না হওয়ার কারণে)-এর মতো গুরুতর জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে, তাই অবিলম্বে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। জিসিএ-এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিম্নরূপ:
- প্রেডনিসোন, একটি কর্টিকস্টেরয়েড হলো চিকিৎসার প্রধান উপায়।
- দেখতে সমস্যা হওয়ার ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন 100mg রোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- দীর্ঘসময় প্রেডনিসোন ব্যবহারের ফলে দেখা দেওয়া পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কমাতে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টও দেওয়া হয় ।
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনালে গুরুতর ক্ষতি হলে প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটর (ওমিপ্রাযোল) ব্যবহারের উপদেশ দেওয়া হয়।