ফাইব্রোমায়ালজিয়া কি?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা, যার ফলে শরীরের সমস্ত পেশী আক্রান্ত হয়। যাঁদের এই রোগ নেই তাঁদের তুলনায় যেসব ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত, তাঁরা সাধারণত যন্ত্রণার প্রতি বেশি সংবেদনশীল হন। ভারতের জনসংখ্যার 0.5 থেকে 2 শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। এটি মহিলাদের মধ্যেই সাধারণত লক্ষ্য করা যায়; পুরুষদের তুলনায় প্রায় 3-7 গুন্ বেশি।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
যেসব উপসর্গগুলি বেশিরভাগ হয়, সেগুলি হলো :
- যন্ত্রণা, সারা শরীরে ব্যথাভাব এবং শরীর আড়ষ্ঠ (শরীরকে নড়ানো বা বাঁকা করা যায় না) হয়ে যায়, বিশেষ করে নির্দিষ্ট কিছু জায়গাতে
- আলস্য ভাব
- ভালো করে ঘুমোতে না পারা
- প্রচণ্ড মাথাব্যথা বা যন্ত্রণা
- প্রচণ্ড মাসিকের ব্যথা
- হাত পা অসাড় হয়ে যাওয়া এবং ঝিঁঝিঁ ভাব
- স্মৃতিশক্তির সমস্যা
- বিষন্ন বোধ করা বা ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া (আরও পড়ুন: বিষণ্নতার উপসর্গ)
পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই সবচেয়ে বেশি এই অবস্থার সম্মুখীন হন এবং আক্রান্ত মহিলাদের সকালে ক্লান্তি ভাব, সারা শরীরে যন্ত্রণা, এবং অস্বস্তিকর পেটের সমস্যা, এই সব উপসর্গগুলি উপলব্ধি করেন।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
এই অবস্থাটির সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি, যদিও বলা হয় যে জিগনগত কারণে এই রোগটি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের তুলনায় বেশি এবং দ্রুত যন্ত্রণার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারেন। এই অবস্থার প্রধান কারণগুলি হলো:
- হরমোন পরিবর্তন
- মানসিক চাপের ভিন্ন মাত্রা
- জলবায়ু পরিবর্তন
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
এই রোগ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত চিকিৎসা ইতিহাসের তথ্য নেওয়া হয়, রোগীকে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে, অবস্থা কতটা গুরুতর, যন্ত্রণার স্থানগুলি, কি থেকে হচ্ছে এবং আরও অন্যান্য ব্যাপার। উপসর্গগুলি বেশিরভাগ সময় এই অবস্থার একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরে। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা সাধারণত দরকার হয় না ,যদি না শরীরের ব্যথা বা অলস ভাব অন্য কোনও কারণে হয়ে থাকে। এই অবস্থা বোঝার জন্য রোগীর অনেক বছর সময় লেগে যেতে পারে। ইমেজিং, বিশেষ করে এক্স-রে করা হতে পারে অন্য কোনও রোগের সম্ভাবনা এড়াতে।
সাধারণত, চিকিৎসার মধ্যে ওষুধ এবং ওষুধ ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতির মিশ্রণ রয়েছে:
- যন্ত্রণা বা ব্যথা কমানোর ওষুধ
- পেশী শক্তির জন্য প্রতিদিন ব্যায়াম করা
- ভালোভাবে ঘুমোনোর পদ্ধতি
- যোগব্যায়াম অথবা ধ্যানের মাধ্যমে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা
- কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির মাধ্যমে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
নিজ যত্ন নেওয়ার টিপস:
- ব্যায়াম এবং নিজেকে বিভিন্ন শারীরিক কাজকর্মের মধ্যে ব্যস্ত রাখলে, তা এই রোগের উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- নিজের যত্ন রাখার ক্লাস দৈনন্দিন কাজকর্মের মাধ্যমে দৈনন্দিন অসুবিধাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।
যেহেতু এটি একটি সারা জীবনব্য়াপী গুরুতর অবস্থা, তাই উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার পদ্ধতিগুলি সাধারণত জীবনযাত্রার মান উন্নত করে। এই অবস্থা সংক্রান্ত যে কোনও জিজ্ঞাসা নিয়ে ডাক্তারের কথা যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং তাঁর পরমার্শ নিলে, আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়ার অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য হয়।