ডাইভার্টিকিউলিটিস কি?
ডাইভার্টিকিউলিটিস একটি চিকিৎসাগত অবস্থা যাতে বৃহদান্ত্র (অন্ত্র) প্রভাবিত হয়। এই রোগে, বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে ছোট ছোট পিন্ড তৈরী হয়। এই ডাইভার্টিকুলাগুলিতে প্রদাহের সৃষ্টি হলে তখন একে ডাইভার্টিকিউলিটিস বলে। সাধারণত, যখন এই ডাইভার্টিকুলাগুলি তৈরী হতে থাকে তখন কোন উপসর্গ বোঝা যায় না। যাইহোক, কিন্তু যখন এতে সংক্রমণ বা উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, তখন প্রচন্ড যন্ত্রনা অনুভূত হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আহারে সঠিক মাত্রায় ফাইবার বা তন্তুজাতীয় উপাদান না থাকলে এই রোগ হয়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ডাইভার্টিকিউলিটিস রোগের উপসর্গগুলি হল:
- পেটে ভীষণ যন্ত্রনা, বিশেষত বাম দিকে
- 38 ডিগ্রী সেলসিয়াস (104 ডিগ্রী ফারেনহাইট) বা তার বেশী জ্বর
- বারবার মলত্যাগ
- বমি
- ক্লান্তিবোধ করা
- মলে রক্তের উপস্থিতি
এই রোগের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ডাইভার্টিকিউলিটিস রোগ কম ফাইবারসমৃদ্ধ খাদ্য আহার করলে এবং বার্ধ্যকের কারণে হয়ে থাকে। এটি জিনগত কারণেও হতে পারে। বৃহদান্ত্রের প্রাচীরের দুর্বল এলাকাগুলিতে যে ছোটছোট পিন্ড তৈরী হয় যাকে ডাইভার্টিকুলা বলে সেগুলিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে থাকে। ধীরে ধীরে এতে সংক্রমণ ঘটে, আর তা ফোঁড়াতে পরিণত হয়।
এই রোগের সঠিক কারণ যদিও এখনও জানা যায় নি, তবে দেখা গেছে যাদের ওজন বেশী, দীর্ঘদিন ধরে কোনো যন্ত্রণানাশক ওষুধ সেবন করে গেছেন এবং যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাত আছে তাদেরই এই রোগ হয়।
এই রোগ কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
ডাইভার্টিকিউলিটিস রোগের প্রধান লক্ষণ ভীষণ পেটের যন্ত্রনা। চিকিৎসক মলদ্বার পরীক্ষা করার সাথে সাথে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা নিয়েও প্রশ্ন করে থাকেন। রক্তে সংক্রমণ আছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়। কোলোনোস্কোপি করে ডাক্তার অন্ত্রের ভেতর অংশ দেখে নেন। এক্স-রে করার আগে, চিকিৎসক মলদ্বার দিয়ে অন্ত্রকে একধরণের রঞ্জকপদার্থ (বেরিয়াম) দিয়ে ধুয়ে নেন। বৃহদন্ত্রের বহির্গাত্রে ফোঁড়া হয়েছে কিনা সেটা সিটি স্ক্যান করে দেখা হয়। মল পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তাতে রক্ত আছে কিনা।
ডাইভার্টিকিউলিটিস একরকমের চিকিৎসাগত আপৎকালীন অবস্থার মধ্যে পড়ে এবং এতে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া হয় সংক্রমণ কমানোর জন্য, আর তার সাথে যন্ত্রণানাশক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। শিরার মাধ্যমে তরল পদার্থ পাঠানো হয়ে থাকে যাতে অন্ত্র আরাম পায়। অন্ত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে, অস্ত্রোপচার করা হয় যাকে কোলসটমি বলে যার মাধ্যমে অন্ত্রের সুস্থ অংশটি পেটের মধ্যে ছিদ্র করে বাইরে নিয়ে আসা হয় ও একটি ছোট থলির সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয় মল সংগ্রহ করার জন্য। এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা যা 6 থেকে 12 মাস অবধি রাখা যেতে পারে।
কিছু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে যেমন নিয়মিতভাবে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া, প্রয়োজন মতো জলীয় পদার্থ পান করা এবং নিয়মিত শরীর চর্চা করলে অন্ত্রের ক্রিয়া উন্নত করা যায়।