কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস কি?
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস হলো ত্বকের এক ধরণের সমস্যা যাতে বিশ্বের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হন। কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসে সাধারণত শরীরের কোন অংশে বা সারা শরীরে র্যাশ বা ফুসকুড়ি আর প্রচণ্ড চুলকুনি হয়। কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস এক একটা দেশে এক একরকম আকার নেয় সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসকারী লোকজন কি ধরণের কাজ করছেন, তাঁদের অভ্যাস ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কি রকম তার ওপর নির্ভর করে। এটি অ্যালার্জি অথবা অস্বস্তি সৃষ্টিকারী পদার্থের কারণে হয়। এই দুটির মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টিকারী পদার্থ বা ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের শিকারই বেশি (80%)।
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস হয়ে থাকে শরীরের যে জায়গাটা সরাসরি অ্যালার্জি বা অস্বস্তি সৃষ্টিকারী পদার্থের সংস্পর্শে এসেছে সেখানে। সংস্পর্শে আসার পর উপসর্গ ফুটে উঠতে কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লাগতে পারে আর সেরে উঠতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় নেয়। অ্যালার্জিজনিত কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের ক্ষেত্রে প্রধানত যে উপসর্গগুলি দেখা যায়:
ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলি চোখে পড়ে:
- সুঁচ ফোটানো বা প্রদাহের অনুভূতি
- লাল দগদগে হয়ে ওঠা বা ইরিথিমা
- ত্বকের ফোলাভাব ও খোসা ওঠা
কন্টাক্ট আর্টিকেরিয়া, যা হাইভস নামেও পরিচিত, একটি অল্প পরিচিত প্রকার।
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসের প্রধাণ কারণগুলি কি কি?
দৈনন্দিন আমরা যেসব কাজকর্ম করি , তার ফলে শরীরের ত্বকের একটি অংশে মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়লে ডার্মাটাইটিস হতে পারে। তাছাড়া , আর যে কারণগুলি দায়ী থাকে:
- সাবান , জামা-কাপড় কাচার পাউডার , অ্যাসিড ও ক্ষার জাতীয় পদার্থের সংস্পর্শে এলে ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস মারাত্মক আকার ধারণ করে।
- অ্যালার্জি-ঘটিত ধরণটি জিনঘটিত ব্যাপার বা পূর্বে কোন অ্যালার্জেনের বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী বস্তুর সংস্পর্শে এলেও এই ধরণের ডার্মাটাইটিস দেখা যায়। এই ডার্মাটাইটিস প্রসাধনী দ্রব্য , ওষুধ , নির্দিষ্ট কোনও ধরণের কাপড় , খাবার এবং রাবার ও বিষাক্ত আইভি লতার সংস্পর্শে এলেও হতে পারে।
- কোনও ধাতু , সুগন্ধী , ব্যাকটিরিয়ারোধী মলম এবং ফরমালডিহাইড , কোকামিডোপ্রোপাইল বিটাইন ও প্যারাফিনাইলেনডিয়ামাইনের মতো রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস হতে পারে।
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রোগ নির্ণয় করা হয় যে বিষয়গুলি থেকে:
- চিকিৎসাজনিত ইতিহাস: কখন ও কতক্ষণ ধরে বস্তুটির সংস্পর্শে এসেছিল জিজ্ঞাসা করেন চিকিৎসক।
- শারীরিক পরীক্ষা: ফুসকুড়ি বা ব়্যাশের উপসর্গ ও ধরণ দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
- ল্যাব টেস্ট বা পরীক্ষাগারে করা পরীক্ষা: সংক্রমণ হয়েছে কি না , তা জানার জন্য।
- কতটা সংবেদনশীল তা জানার জন্য প্যাচ টেস্ট করা হয়।
চিকিৎসাগুলি হল:
- প্রদাহ ও ফোলাভাব কমানোর জন্য সাময়িক বা টপিক্যাল স্টেরোয়েড দেওয়া হয়
- অ্যান্টি-হিস্টামিন- দেওয়া হয় চুলকানি কমানোর জন্য
- টপিক্যাল ইমিউনোমডুলেটরস প্রয়োগ- প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োগ করা হয়
- টপিক্যাল অ্যান্টিবায়োটিকস
- সিস্টেমেটিক স্টেরোয়েড- লোকাল বা স্থানীয় স্টেরোয়েড কাজ না করলে প্রদাহ রোধ করতে এর ব্যবহার করা হয়
- ফটোথেরাপি: আক্রান্ত স্থানটিকে একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর সংস্পর্শে আনা হয় প্রদাহ কমানোর জন্য
নিজের যত্ন নেবার ঊপায়গুলি হল:
- লক্ষণ তীব্র হলে , চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে কোল্ড কম্প্রেস বা ঠান্ডা জলের চাপান দেওয়া যেতে পারে।
- ময়শ্চারাইজার জাতীয় লোশন ও ক্রিম ব্যবহার করা যায় উপশম পেতে।
- যে কারণে চুলকানি বা অস্বস্তি হচ্ছে তার থেকে দূরে থাকা।
- সংক্রমিত জায়গা একেবারেই চুলকানো যাবে না।
- ত্বকের যে জায়গাটি সংক্রামিত হয়েছে সেখানটাকে ঠান্ডা জলে চুবিয়ে রাখলে চুলকুনি ও অস্বস্তি কমবে।
- হাতে গ্লভস পরা যায় বা সুতির কাপড় দিয়ে শরীরের স্থানগুলি ঢেকে রাখা যায় যাতে সমস্যা না হয়।
- ত্বক লালচে হয়ে ওঠে বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় এরকম অলঙ্কার পরিধান করা এড়িয়ে চলতে হবে।
জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনলেও উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি সেরে উঠা যায়:
- ধ্যান
- যোগাসন
- রিল্যাক্স্ বা বিশ্রাম করার নানা ব্যায়াম
স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী বেছে নিলে কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস সহজেই দূরে রাখা যায় , কারণ এই ধরণের জীবন-যাপন পদ্ধতি ওষুধের পরিবর্ত হিসেবে কাজ করে।
(আরও পড়ুন: ত্বক বা চামড়ার অসুখের কারণ ও চিকিৎসা)