অ্যাসাইটিস (পেট স্ফীত হওয়া) কি?
অ্যাসাইটিসের অর্থ পেটের উপরি ত্বক ও পেটের ভিতরের অঙ্গসমূহের মধ্যবর্তী স্থানে জল জমা। এই রোগ বিশেষত লিভারের সিরোসিসের (ক্ষত চিহ্নিত করা) সাথে জড়িত, যা লিভারের ভাইরাস সংক্রমণ বা মেদবহুল যকৃতের কারণে হয় এবং এর কারণ স্থূলত্ব, এবং ডায়াবেটিস। 80% রোগী যাদের সিরোসিস আছে তাদের অ্যাসাইটিসও দেখা দেয়। ভারতে, যেখানে লিভারের রোগের ব্যাপকতার বিষয়টি পরিষ্কার নয় কারণ সচেতনতার, অনুসন্ধানের, দক্ষতার অভাব, অ্যাসাইটিসের ব্যাপকতা এখানে 10–30% দেখা গেছে।
অ্যাসাইটিসের মূল লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
অ্যাসাইটিসের উপসর্গগুলি তার কারণ অনুযায়ী ধীর ও তাৎক্ষণিক হতে পারে। যদি জল জমার পরিমান কম হয় তবে বিশেষ কোন উপসর্গ নাও থাকতে পারে। যাইহোক, জল জমার পরিমান বেশী হলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গগুলো হল
- পেটে ফোলাভাব বা ফেঁপে ওঠা।
- বুকে জল জমা।
- ওজন বেড়ে যাওয়া।
- পেট ভার হয়ে থাকা।
- শরীর ফুলে যাওয়া।
- শরীর ভারী হয়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব বা বদহজম।
- বমি করা।
- হাঁটুর নীচ থেকে ফুলে যাওয়া।
- পাইলস।
যদি অ্যাসাইটিসের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয় তবে আরও অন্য যেসব রোগ হতে পারে:
- ব্যাক্টেরিয়াল পেরিটোনাইটিস।
- ডিলিউশনাল হাইপোনেট্রিমিয়া।
- হেপাটোরেনাল সিনড্রোম।
- আম্বিলিকাল হার্নিয়া।
এর মূল কারণগুলি কি কি?
অ্যাসাইটিস অনেকগুলি কারণের জন্য হতে পারে। এর মধ্যে সিরোসিস খুব সাধারণ কারণ, যা শরীরের রক্ত প্রবাহে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, ফলে লিভারের রক্তপ্রবাহী ধমনীতে চাপ সৃষ্টি হয়। যেহেতু কিডনির অতিরিক্ত লবণ শরীর থেকে বার করে দেবার পর্যাপ্ত ক্ষমতা নেই তাই শরীরে জল জমা হতে থাকে। সে কারণে অ্যাাসাইটিস হয় ও তার ফলে শরীরে অ্যালবুমিনের (রক্তের একটি প্রোটিন) মাত্রা কমে যায়। যেসব রোগে লিভারের ক্ষতি হয় তার ফলেও অ্যাসাইটিস দেখা দেয়।
উদাহরণগুলি হল:
- দীর্ঘকালীন হেপাটাইটিস বি অথবা সি সংক্রমণ।
- মদ্যপানে আসক্তি।
- কিছু বিশেষ ক্যান্সার: অ্যাপেন্ডিক্স, কোলন বা মলাশয়, ওভারিস বা ডিম্বাশয়, প্যাঙ্ক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়, এবং লিভার।
অন্যান্য কারণগুলি হল
- লিভারের শিরায় রক্ত জমাট বাঁঁধা।
- কনজেসটিভ হার্ট ফেলিওর।
- প্যাঙ্ক্রিয়াটাইটিস।
- থলির মতো হৃদযন্ত্রের যে আচ্ছাদন থাকে তা পুরু হয়ে যাওয়া ও তাতে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া।
কিভাবে এই রোগ নির্ণয় হয় ও কিভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়?
পেটের ফোলাভাবের পরিমাণ জানার জন্য প্রাথমিক ভাবে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়।
- ফ্লুয়িড স্যামপ্লিং বা তরলের নমুনা সংগ্রহ।
- তরলকে বাষ্পীভূত করে দেখা হয় যে কোন সংক্রমণ বা ক্যান্সারের জীবাণু আছে কিনা।
- প্যারাসেনটেসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে তরল নিষ্কাশন করা হয় পরীক্ষার জন্য।
প্রতিবিম্বকরণ
-
এম আর আই, সি টি, বা পেটের আল্ট্রাসাউন্ড।
লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা পরিমাপ করতে যে পরীক্ষাগুলি করা হয়
- 24 ঘন্টা সময়কালের জন্য প্রস্রাব সংগ্রহ করা।
- ইলেক্ট্রোলাইট স্ট্যাটাস বা অবস্থা।
- কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা।
- লিভারের কার্যকারিতা পরীক্ষা।
- ক্লটিং স্ট্যাটাস বা জমাট বাঁধার অবস্থা।
চিকিৎসা মূলত হয় ওষুধের ওপর নির্ভর করে যা শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করতে সাহায্য করে আর যদি দরকার হয় সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক্স দেওয়া হয়।
ডাক্তারেরা যেসব সার্জিক্যাল পদ্ধতির পরামর্শ দেন সেগুলো হল
- জমে থাকা জল বের করা।
- একটি বিশেষ ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপাটিক পর্টোসিস্টেমিক শান্ট লিভারে ঢোকানো হয় যাতে লিভারের ভিতরে রক্ত চলাচলে মেরামতি করা যায়।
জীবনযাপনে যেসব পরিবর্তন আনা দরকার
- মদ্যপান না করা কারণ এর ফলে লিভারের ক্ষতি হয়, পরিণতিতে অবস্থা আরও গুরুতর হয়। (আরও পড়ুন: মদ্যপান কিভাবে ত্যাগ করা যায়)
- খাবারে নুন কম খাওয়া (দিনে 1,500 মিলিগ্রামের বেশী সোডিয়াম না খাওয়া)। পটাশিয়াম যুক্ত নুনের বদলে অন্য নুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
- জল কম খাওয়া।
অ্যাসাইটিস কোন রোগ নয় কিন্তু একটা অবস্থা যা অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হয় ফলে শরীরের প্রভূত ক্ষতি হয়। যদি ওষুধ ঠিক করে খাওয়া হয় আর নিয়মিত জীবনযাপন করা হয়, তাহলে এই অবস্থা অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে।