আলঝেইমার রোগ কাকে বলে?
আলঝেইমার রোগ (এ ডি) একটি ডিজেনারেটিভ রোগ, যেটি প্রকৃতিগতভাবে অপরিবর্তনীয় ও প্রগতিশীল। এটা একপ্রকারের ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া), একটি যৌথ পরিভাষা যা সেইসমস্ত অবস্থার সাথে জড়িত যা মস্তিস্কের ক্রিয়াকলাপের স্থায়ী হানির সাথে যুক্ত, শেষ পর্যন্ত যার ফলে প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজকর্ম করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ভারতবর্ষে ডিমেনশিয়ার শিকার ৪ লক্ষের চেয়ে বেশী। এটি একটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যা।
আলঝেইমার রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
প্রাথমিক পর্যায়ে আলঝেইমার সুত্রপাত হয় 30 ও মধ্য-60 বছর বয়সের মধ্যিখানে, এবং বিলম্বে সুত্রপাত হলে তা হয় মধ্য-60-এ। যত এই রোগটি বাড়তে থাকে, মস্তিস্কে হানিও বাড়তে থাকে, এই রোগের গতিবিধি বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়।
এই রোগটি তিনটি স্তরের মধ্য দিয়ে এগোতে থাকেঃ
- মৃদু
এতে একজন ব্যাক্তি স্বাভাবিক কাজকর্ম করেন কিন্তু কিছু কিছু স্মৃতি তার মুছে যায়, যেমন কোনো জায়গা বা কোনো পরিচিত শব্দ ভুলে যাওয়া। অন্য উপসর্গের মধ্যে আছে ঠিক নাম মনে না করতে পারা, সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া, কোনো জিনিস হারিয়ে ফেলা বা অন্য জায়গায় রেখে দেওয়া ও কোনো পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা গ্রহনে অসুবিধা।
- মাঝারি
লম্বা সময় ধরে থাকে এবং সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া বা নিজের পরিচয় সম্বন্ধে ভুলে যাওয়া, সবসময় দ্বিধার মধ্যে থাকা ও সামাজিক সম্পর্কগুলি থেকে সরে আসা, কোনো কোনো ব্যাক্তির ক্ষেত্রে মল মুত্রের বেগ নিয়ন্ত্রন করতে অসুবিধা ,এবং বাস্তবের সাথে সম্পর্ক হারিয়ে যাওয়া।
- তীব্র
আশেপাশের পরিবেশগত উদ্দীপনায় ও সাধারন বাক্যালাপে সাড়া না দেওয়া, তার সাথে সম্পূর্ন অন্যদের উপর নির্ভরশীলতা।
আলঝেইমার'স ডিজিজের (আলঝেইমার রোগের) মুখ্য কারনগুলি কি কি?
এর কারন এখনও জানা যায় নি; বিজ্ঞানীরা আলঝেইমার'স ডিজিজ / আলঝেইমার রোগ-এ আক্রান্তদের মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন-এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। এই অতিরিক্ত প্রোটিন মস্তিষ্কের কোষগুলির স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায় এবং কারোর কারোর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তথ্যানুসারে, বয়স বৃদ্ধির সাথে এ্ই রোগটির প্রকোপ বাড়ে। বয়স বৃদ্ধি জনিত পরিবর্তনের ফলে স্নায়ুর ক্ষতি ( যেমন মস্তিষ্কে কোনো অংশের সংকোচন, ফুলে যাওয়া এবং ফ্রি র্যাডিকাল সৃষ্টি) এবং আলঝেইমার রোগের বৃদ্ধির আসল কারন অনুসন্ধান চলছে নানা রকম গবেষণার মাধ্যমে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেখা দিলে সেটি হয় মূলত জিনগত কারণে এবং সাধারণত এটি বিরল প্রকারের, অন্যদিকে বিলম্বে সুত্রপাতের ধরণটি জিনগত, জীবনশৈলী ও পরিবেশের কারণের উপর নির্ভর করে ও এই প্রকারটি বেশী দেখা যায়।
আলঝেইমার রোগ কীভাবে সনাক্ত করা হয় ও এর চিকিৎসা কী?
আলঝেইমার রোগ সনাক্ত করা হয় অনেকগুলি পরীক্ষার মাধ্যমে যেগুলি নির্ধারণ করে একটি মানুষের মানসিক দক্ষতা ও সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য মস্তিষ্কগত দক্ষতাগুলি। এরমধ্যে আছেঃ
- চিকিৎসাগত ইতিহাস ও তার সাথে আচরণ ও ব্যাক্তি্ত্বে পরিবর্তন।
- মুত্র রক্ত ও সুষুম্না কান্ডের মধ্যস্থ তরলের পরীক্ষা
- মস্তিষ্কের স্ক্যান (সিটি স্ক্যান বা এম আর আই)।
এখনও পর্যন্ত এই রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয় নি তবে স্মৃতি লোপ পাওয়া বা ডিমনেশিয়ার উপসর্গগুলি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রন করা যায়। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে এই রোগের আক্রমণের গতিকে ধীর করতে বা সম্পূর্ণ নিরাময় করতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন এর মূল কারনগুলিকে সামনে রেখে।
এর চিকিৎসা সম্ভব যে পদ্ধতিগুলিতেঃ
- আলঝেইমার সাথে সম্পর্কযুক্ত রোগের চিকিৎসা যেমন হৃদরোগ ও টাইপ 2 ডায়াবেটিস।
- উন্নত চিন্তাভাবনার জন্য জ্ঞানদানকারী প্রশিক্ষণ এবং উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, রাগ ও বিষন্নতা নিয়ন্ত্রণ করা।
- বিশেষ ধরণের খাদ্য তালিকা যেমন ভূমধ্যপসাগরীয় ধরণের খাবারদাবার বা ডায়েটারি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপারটেনসন (ডিএএসএইচ) যেটাতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে।
- শরীরচর্চা।
- অ্যারোমাথেরাপি।
- নাচ ও গানের সাথে নিজেকে যুক্ত করা।
- পশুর সহায়তায় চিকিৎসা।
- আরামদায়ক মালিস।
- মাল্টি-সেনসরি স্টিমুলেশন।
সর্বোচ্চ ফল পেতে গেলে চিকিৎসা প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখতে হবে এবং অভিজ্ঞ ব্যাক্তির দ্বারা চিকিৎসা করাতে হবে।