মেনিনজাইটিস কাকে বলে?
মস্তিস্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের চারপাশে ঘিরে থাকা যে টিস্যু স্তরের আবরণগুলি এদের সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে সেটি হল মেনিনজেস। এই টিস্যু স্তর ও তার চারিপাশের তরলে সংক্রমণ ঘটলে মস্তিষ্কের প্রদাহ ও ফোলাভাব দেখা দেয়। সময়মত ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা না হলে এই সমস্যার ফলে প্রাণহানি হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের পরিচিত উপসর্গগুলি হল ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বর এবং বিভ্রান্তির পাশাপাশি বমিভাব, বমি ও মাথা যন্ত্রণা।
- অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, বিরক্তি এবং ক্ষুধার হ্রাস।
- অসুখ আরো অগ্রসর হলে অর্ধচেতনা, মস্তিষ্কের ক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়া ও সিজারের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস একটি সংক্রামক ও গুরুতর প্রকৃতির মেনিনজাইটিস। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে পরের দিকের উপসর্গ হিসাবে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়। এই রোগের সাথে যুক্ত কিছু দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ হল ব্রেন ড্যামেজ বা মস্তিষ্কের ক্ষতি, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি লোপ।
- ভাইরাল মেনিনজাইটিসের ফলে প্রাণহানি এবং সংক্রামক হওয়ার ঘটনা অতি বিরল, তবে এর ফলে মাথা যন্ত্রণা ও স্মৃতিশক্তির সমস্যার মত কিছু দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
- ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিস রোগটি বিরল।দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ, যেমন ক্যান্সার বা এইডস রোগীদের মধ্যে এটি দেখা যেতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
মেনিনজাইটিস রোগটি সংক্রামক অথবা অসংক্রামক হতে পারে ।
সংক্রামক মেনিনজাইটিস ঘটায় কিছু জীবাণু যারা রক্তপরিবহনের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে মস্তিস্ক বা সুষুম্নাকান্ডে পৌঁছে যায়। এইসব জীবাণু মেনিনজেস ও চারিপাশের তরলে সংক্রমণ ঘটালে সেখানে প্রদাহ ও ফোলাভাব সৃষ্টি হয়। মেনিনজাইটিসের জন্য দায়ী জীবাণুগুলি হল:
- ব্যাকটেরিয়া - সট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি, নিসারিয়া মেনিনজাইটিডিস।
- ভাইরাস - ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, মিসলস (হাম) ভাইরাস, এইচআইভি এবং একোভাইরাস।
- ফাঙ্গি বা ছত্রাক - ক্যান্ডিডা এলবিক্যান্স, ক্রিপ্টোকক্কাস নিওফর্মানস এবং হিস্টোপ্লাজমা।
অসংক্রামক মেনিনজাইটিসের কারণগুলি হল:
- ক্যান্সার।
- রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া।
- ড্রাগ এলার্জি।
- মাথার আঘাত বা মস্তিষ্কে এবসেস (সীমাবদ্ধ প্রদাহ)।
- লুপাস।
এই রোগ কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
দ্রুত চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসা করা হলে এই রোগটির ফলে মৃত্যু ও মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।
মেনিনজাইটিস নির্ণয় করার জন্য নিম্নোক্ত পরীক্ষাগুলি করা অবশ্য প্রয়োজনীয়:
- লাম্বার পাংচার - ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস নিশ্চিত নির্ণয়ের জন্য মস্তিষ্কসুষুম্না তরল সংগ্রহ করে মাইক্রোবিয়াল কালচার, সিবিসি, প্রোটিন ও গ্লুকোজ মাত্রা এবং সি-রিআক্টিভ প্রোটিন (ইনফেকশন মার্কার) প্রভৃতি পরীক্ষা করা হয়।
- শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি।
- মাথার সিটি স্ক্যান।
- মেনিনজাইটিসের ফুসকুড়ির পজিটিভ গ্লাস টেস্ট।
মেনিনজাইটিসের চিকিৎসায় যে পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়:
- ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসে ইনট্রাভেনাস এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় যা শরীর থেকে সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া অপসারণে সাহায্য করে।
- ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিসের চিকিৎসায় এন্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার হয়।
- ভাইরাল মেনিনজাইটিসে ইনট্রাভেনাস এন্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সাধারণত নিজে থেকেই এটির নিরাময় হয়ে যায়।
- মেনিঙ্গকক্কাল ভ্যাকসিন এবং হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েনজি টাইপ বি ভ্যাকসিনের মত কিছু টীকা মেনিনজাইটিস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
- সুষ্ঠ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মেনিনজাইটিসের প্রাদুর্ভাব আছে এরকম অঞ্চলে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় টীকা নেওয়ার মাধ্যমে এই রোগটিকে এড়ানো সম্ভব।