লেপটোসপাইরোসিস (ইঁদুর জ্বর) - Leptospirosis in Bengali

Dr. Ayush PandeyMBBS,PG Diploma

May 09, 2019

March 06, 2020

লেপটোসপাইরোসিস
লেপটোসপাইরোসিস

লেপ্টোস্পাইরোসিস বা ইঁদুর জ্বর কাকে বলে?

লেপ্টোস্পাইরোসিস হল এক প্রকার সংক্রমণ যা লেপ্টোস্পাইরা নামক একটি স্পাইরাল আকৃতির ব্যাকটেরিয়াম (স্পাইরোচেট)-এর দ্বারা হয়। এই সংক্রমণের ফলে বিভিন্ন প্রকৃতির বহু উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায় যা অন্যান্য সংক্রমণের উপসর্গগুলোর সঙ্গে সাদৃশ্য বহন করে। সুতরাং এই রোগের নিশ্চিত নির্ণয়করণের জন্য মূত্র বা রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য জটিলতাগুলো হল কিডনির ক্ষতি, শ্বাসের সমস্যা, লিভার ফেলিওর এবং মেনিনজাইটিস (মস্তিষ্কের রক্ষাকারী আবরণ মেনিনজেস-এর ফুলে যাওয়া)।

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি?

লেপ্টোস্পাইরোসিস রোগে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখতে পাওয়া যায়:

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশের মধ্যে দুই দিন থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবধান থাকতে পারে, যে সময়ে প্রাথমিক উপসর্গ থাকে জ্বর। লেপ্টোস্পাইরোসিসের দুটি লক্ষ্যণীয় পর্ব দেখা যায়:

  • পর্ব 1: জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, বমি ও পেশীর যন্ত্রণা।
  • পর্ব 2: মেনিনজাইটিসের পাশাপাশি কিডনি বা লিভারের ক্ষতি, আইরিস- ফুলে যাওয়া বা প্রদাহ বা স্নায়ুরোগ।

অন্তঃস্বত্তাদের জন্য লেপ্টোস্পাইরোসিস মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে, এর ফলে গর্ভপাতেরও সম্ভাবনা থাকে।

এর প্রধান কারণ কি?

আক্রান্ত পশুর মূত্র থেকে এর সংক্রমণ ঘটে। কুকুর, গবাদি, ঘোড়া, বেড়াল ও অন্যান্য গৃহপালিত পশুর মূত্রে এই রোগের ব্যাকটেরিয়াম পাওয়া যায়। এমনকি ইঁদুরদের মধ্যেও লেপ্টোস্পাইরা থাকে। এই মূত্রের সঙ্গে যেকোন প্রকার সরাসরি সংস্পর্শ বা তার দ্বারা দূষিত খাদ্য বা জলগ্রহণের মাধ্যমে এই সংক্রমণ ছড়াতে পারে। চোখ বা নাক অথবা ত্বকের ক্ষতের মিউকোসাল স্তরের মধ্যে দিয়ে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে। মানুষের পক্ষে এই রোগের বাহক হওয়া বিরল ঘটনা, সুতরাং মানুষ থেকে মানুষে এটি সংক্রমিত হয় না।

এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিত্‍সা করা হয়?

এই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দেহ তরল থেকে ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে তার কালচারের মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা যেতে পারে। প্রথমদিকে সাধারণত মস্তিষ্কসুষুম্না তরল বা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (মস্তিস্ক ও সুষুম্নাকান্ডকে ঘিরে যে তরল থাকে) পরীক্ষা করা হয়ে থাকে, পরবর্তী পর্যায়ে রোগ-নির্ণয়ের জন্য ইউরিন কালচারের সাহায্য নেওয়া হয়। রক্ত ও ইমিউন সিস্টেমের কোষ ও এর জন্য পরীক্ষা করা যেতে পারে।

পেনিসিলিন, ডক্সিসাইক্লিন, সট্রেপ্টোমাইসিন ও এরিথ্রোমাইসিন-এর মত কিছু এন্টিবায়োটিক এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকরী। শ্বাসের সমস্যার ক্ষেত্রে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বিশেষ সাহায্য করে। লিভার ও কিডনি ফেলিওর -এর ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের সাথে পেরিটোনিয়াল ডায়ালিসিস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

প্রতিরোধ:

  • আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
  • গৃহপালিত পশুকে পরিষ্কার করার সময় সুরক্ষাকারী পোশাক পরতে হবে।
  • পশুর মূত্র দ্বারা দূষিত জল পান করা বা তাতে স্নান করা বন্ধ করলে এই সংক্রমণের সম্ভাবনা কমানো যায়।



তথ্যসূত্র

  1. Center for Disease Control and Prevention [internet], Atlanta (GA): US Department of Health and Human Services; Leptospirosis
  2. Center for Disease Control and Prevention [internet], Atlanta (GA): US Department of Health and Human Services; Signs and Symptoms
  3. National Organization for Rare Disorders. Leptospirosis. [Internet]
  4. Paul N. Levett. Leptospirosis. Clin Microbiol Rev. 2001 Apr; 14(2): 296–326. PMID: 11292640
  5. World Health Organization, Department of Reproductive Health and Research. Leptospirosis. Fifth edition; World Health Organization; 2010.