জিঙ্কের অভাব কাকে বলে?
জিঙ্ক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ যা আমরা খাদ্য এবং খাদ্যে বরাদ্দ সম্পূরক থেকে সংগ্রহ করি। প্রোটিন ও ডিএনএ সংশ্লেষণ, গর্ভাবস্থা ও শৈশবকালীন বৃদ্ধি ও বিকাশ, উপযুক্ত স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি, ক্ষতের নিরাময় এবং রোগ প্রতিরোধের মতো একাধিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপে জিঙ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক শরীরে গ্রহণ করা প্রয়োজন কারণ মানুষের দেহে এর কোন সঞ্চয় ব্যবস্থা নেই। শরীরে জিঙ্ক গ্রহণ ও জিঙ্কের উপস্থিতি কমে যাওয়ার সমস্যাকে জিঙ্কের অভাব বলে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
জিঙ্কের অভাবজনিত সবথেকে পরিচিত উপসর্গগুলি হল:
- খিদে কমে যাওয়া।
- বিলম্বিত বৃদ্ধি।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
এই সমস্যার বিরল ও গুরুতর উপসর্গগুলি হল:
- ডায়রিয়া বা অতিসার।
- চুল পড়া।
- যৌন অক্ষমতা।
- বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি।
- ত্বক ও চোখের ক্ষত।
- পুরুষদের মধ্যে হাইপোগোনাডিজম।
ক্ষত সারতে বেশি সময় লাগা, ওজন হ্রাস, লেথার্জি বা অতিরিক্ত আলস্য, স্বাদের অনুভূতি কমে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গও জিঙ্কের অভাবে ঘটতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
জিঙ্কের অভাব ঘটার প্রধান কারণগুলি হল:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক গ্রহণ না করা।
- ত্রুটিপূর্ণ শোষণ।
- শরীরে জিঙ্কের চাহিদা বৃদ্ধি।
- শরীর থেকে অতিরিক্ত জিঙ্ক বেরিয়ে যাওয়া।
নীচে দেওয়া বিষয়গুলি জিঙ্কের অভাবের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:
- অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ।
- মদ্যপান।
- পৌষ্টিক তন্ত্রের বিভিন্ন রোগ যা খাদ্য থেকে জিঙ্কের শোষণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যেমন ক্রোন'স ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ট্রপিক্যাল স্প্রূ ইত্যাদি।
- গর্ভাবস্থা ও দুগ্ধক্ষরণ যার ফলে শরীরে জিঙ্কের চাহিদা বেড়ে যায়।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে উপস্থিত জিঙ্কের মাত্রা দেখে শরীরে জিঙ্কের গুরুতর অভাব নির্ণয় করা হয়। এলকালাইন ফসফাটেজ এঞ্জাইম ও এলবুমিনের মাত্রাও এই নির্ণয়করণে সাহায্য করে।
জিঙ্কের অভাবের মূল চিকিৎসা হল কমে যাওয়া জিঙ্কের সরবরাহ করা। সমস্যাটির অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ডোজের জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
জিঙ্কের অভাবের ফলে ত্বকে সৃষ্ট ক্ষতগুলির চিকিৎসায় ময়শ্চারাইজার এবং টপিক্যাল স্টেরয়েড ব্যবহার করা যায়না।
এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকরী উপায় হল জিঙ্কযুক্ত খাদ্য বেশি খাওয়া। ঝিনুক (অয়েস্টার), ছাগলের মাংস, পোলট্রি, বাদাম, বিন, দানাশস্য এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যের মত খাদ্যগুলিতে জিঙ্কের পর্যাপ্ত মাত্রা উপস্থিত থাকে যা খেলে শরীরে জিঙ্কের চাহিদা পূরণ হয়।