ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিস (পলিঙ্গাইটিটিস সঙ্গে গ্রানুলোমাটোসিস) কি?
ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিস হল ভাস্কুলাইটিসের (রক্তবাহিকার প্রদাহ) অন্য একটি প্রকার। এটি পুরুষ ও মহিলা, উভয় লিঙ্গের মাঝবয়সী ব্যক্তিদের সমানভাবে আক্রান্ত করে এবং শিশুদের কখনও কখনও আক্রান্ত করে। এটি একটি অটোইমিউন অসুখ, যা উপরের শ্বাসনালীটিকে, ফুসফুস এবং কিডনিকে বেশিরভাগ আক্রান্ত করে। এই রোগে অন্যান্য যে অঙ্গগুলি প্রভাবিত হয়, তা হল হাড়ের সন্ধিস্থল, চোখ, ত্বক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড)।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:
- সাইনাসে প্রতিবন্ধকতা বা কনজেশন।
- গলা ব্যথা।
- কাশির সঙ্গে হেমোপটাইসিস (কফে রক্ত বের হওয়া)।
- সারা শরীরের পেশীতে ব্যথা এবং দুর্বলতা।
- বমিভাব।
- ক্ষুধামান্দ্য।
- কিডনির ত্রূটিপূর্ণ কাজকর্ম।
- মুত্রে রক্তের উপস্থিতি।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এই সমস্যার স্পষ্ট কারণ এখনও পর্যন্ত অজানা, যদিও নির্দিষ্ট কিছু কারণকে এই অবস্থার ঝুঁকি বৃদ্ধিকারক বলে মনে করা হয়। বারবার উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবডির উপস্থিতির কারণে ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিস হয়, যে অ্যান্টিবডি নিউট্রফিলিক পেপটাইড নামক উপাদানকে আক্রমণ করে। এই পেপটাইডগুলি এক ধরনের প্রোটিন। জিনগত সমস্যাও এই রোগ হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয় বলে মনে করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু সংক্রমণকেও ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিসের কারণ বলে সন্দেহ করা হয়, কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট সংক্রামক কারককে এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায়নি।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিস রোগ নির্ণয়ের জন্য বুকের এক্স-রে ও কিডনি, ফুসফুস, শ্বাসনালীর উপরিভাগের বায়োপসি এবং সেই সঙ্গে ব্রঙ্কোস্কোপি। মূত্র বিশ্লেষণ মুত্রে প্রোট্রিনের উপস্থিতি সনাক্ত করতে সাহায্য করে। অ্যানিমিয়া সনাক্ত করতে সম্পূর্ণ রক্ত গণনার (সিবিসি) ব্যবহার এবং সোডিয়ামের স্বল্পমাত্রা নির্ধারণ করতে সিরাম ইলেক্ট্রোলাইটের বিশ্লেষণ করা হয়। প্রায়ই ব্যবহার করা হয় কিন্তু অনির্দিষ্ট অন্যান্য ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া ফলাফলগুলি হল শ্বেত রক্তকণিকা এবং অণুচক্রিকা বা প্লেটলেটের (রক্তের মধ্যে থাকা কোষগুলি) সংখ্যাবৃদ্ধি, পাশাপাশি, বর্ধিত এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন বা থিতানোর হার (ইএসআর)।
সাইকোফসফেমাইড ও গ্লুকোকর্টিকয়েডের ব্যবহার ওয়েজনারের গ্র্যানুলোমাটোসিসের প্রাথমিক চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত। সাইকোফসফেমাইড ও প্রেডনিসলোনের সংমিশ্রণ উত্তম চিকিৎসা পেতে এবং রোগ নিবারণে সাফল্য পেতে সাহায্য করে। তবে, এই ওষুধগুলির মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেসমস্ত ব্যক্তিদের অবিলম্বে প্রাণসংশয়ের মতো অবস্থা নয়, তাদের ক্ষেত্রে মেথোট্রেক্সেট ও প্রেডনিসলোনের সংমিশ্রণ ব্যবহার হয় বর্তমানে। চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে কর্টিকোস্টেরয়েড উপযোগী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও, কর্টিকোস্টেরয়েডের খোরাকের মাত্রা ধীরে ধীরে কমানো প্রয়োজন, যেহেতু চিকিৎসা বজায় রাখার ক্ষেত্রে এর কোনও নির্দিষ্ট ভূমিকা নেই। এর সঙ্গে যুক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রফিল্যাক্সিস হিসেবে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর্স, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, সালফামেথোক্সাজোল এবং ট্রাইমেথোপ্রিম।