ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার (যোনি ক্যান্সার) কি?
ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার (যোনি ক্যান্সার) মহিলাদের জননতন্ত্রের একটি বিরল ধরনের ক্যান্সার, যা সব ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় শতকরা 0.2% এরও কম হয়। সাধারণত, এটি 60 বছর বয়সের উর্দ্ধে মহিলাদের মধ্যে দেখা যায় যখন যৌনমিলন বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্যান্সারটি ভ্যাজাইনা বা যোনির মধ্যে দেখা যায়, যখন স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান কোষের মধ্যে পরিবর্তন হয় এবং সেটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বড় হয়ে টিউমারের আকার নেয়। সবথেকে সাধারণ ধরন হল স্কুয়ামাস কোষ কার্সিনোমা। যেটি গ্রন্থিতে শুরু হয় সেটি অ্যাডেনোকার্সিনোমা নামে পরিচিত। কানেক্টিভ কার্সিনোমাটি প্রচণ্ড বিরল এবং সেটি সার্কোমা নামে পরিচিত।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
শুরুতেই উপসর্গগুলি লক্ষ্য করা যায়না, যদিও, একজন মানুষ যে লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি লক্ষ্য করতে পারেন সেগুলি হল:
- রজোবন্ধের সময় এবং পরে যোনি থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত।
- প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা।
- যৌনমিলন করার সময় যন্ত্রণা।
- পেলভিক অঞ্চলে যন্ত্রণা।
- যোনিতে মাংসপিণ্ড।
- বাজে ধরনের যোনি স্রাব বা রক্তের ছোপযুক্ত যোনি স্রাব।
- যোনিতে চুলকানি।
- পিঠে ব্যথা।
- পায়ে ব্যথা।
- পা ফুলে যাওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্য।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের (যোনি ক্যান্সার) সঠিক কারণ জানা যায়নি, কিন্তু কিছু ঝুঁকির কারণ আছে যার কারণে ক্যান্সারের বৃদ্ধি হতে পারে, যেমন
- বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর ঝুঁকিও বাড়ে, এটা সাধারণত 60 বছর বয়সের উর্দ্ধের মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি/HPV সংক্রমণ)।
- ডাইথাইলস্টিলবেস্টরাল (ডিইএস/DES): একটি ওষুধ যা প্রথম তিনমাস কালে গর্ভপাত রোধ করে।
- আগের কোনও রেডিয়েশন থেরাপি।
- সার্ভাইকাল ক্যান্সার।
- হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) সংক্রমণ।
- সিস্টেমিক লুপাস এরিথিমেটোসাস (এসএলই/SLE)।
- ধূমপান।
- অ্যালকোহল।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিত্সা করা হয়?
যখন উপরে উল্লিখিত কোনও উপসর্গ বা কারণ দেখা যায় তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সকে দেখানোই ভাল। চিকিত্সক সম্পূর্ণ চিকিত্সার ইতিহাস জিজ্ঞাসা করবেন এবং উপসর্গগুলিকে নিয়ে আলোচনা করবেন ও শারীরিক পরীক্ষা করবেন, যার মধ্যে রয়েছে পেলভিক পরীক্ষা এবং পিএপি স্মিয়ার পরীক্ষা। অন্যান্য যে পরীক্ষাগুলি করা হতে পারে সেগুলি হল:
- কল্পোস্কোপি: অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে পরীক্ষা করার জন্য যোনি থেকে একটা টিস্যুর নমুনা নেওয়া হয়।
- বায়োপসি: যখন অন্যান্য পরীক্ষাগুলি ক্যান্সারের ইঙ্গিত দেয়, তখন বায়োপসিই হল একমাত্র নির্ধারক পরীক্ষা যা এই নির্ণয়কে নিশ্চিত করতে পারে।
- বুকের এক্স-রে: ক্যান্সার, ফুসফুস অবধি ছড়িয়েছে কিনা তা দেখার জন্য এটা করা হয়।
- পেলভিস বা শ্রোণীর এবং তলপেটের আল্ট্রাসাউন্ড সোনোগ্রাফি (ইউএসজি/USG)।
- কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি/CT স্ক্যান)।
- ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই/MRI)।
- পসিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পিইটি স্ক্যান): রেডিওঅ্যাকক্টিভ সুগারের মাধ্যমে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সনাক্ত করার জন্য এটা করা হয়।
- সিস্টোস্কোপি: মূত্রস্থলী এবং মূত্রনালীর ভিতরে দেখার জন্য।
- ইউরেটেরস্কোপি: ইউরেটার্সের ভিতরে দেখার জন্য।
- প্রক্টোস্কোপি: রেক্টাম বা মলদ্বারের ভিতরে দেখার জন্য।
ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের (যোনি ক্যান্সার) চিকিৎসার জন্য তিন পর্যায়ের চিকিত্সা উপলব্ধ আছে।
সার্জারি:
- লেজার সার্জারি: লেজার বীমের সাহায্যে টিউমারটি কাটা হয়।
- ওয়াইড লোকাল এক্সিজন: ক্যান্সারের ক্ষতর পাশাপাশি তার চারপাশের কিছু সাস্থ্যবান টিস্যুও কেটে বাদ দেওয়া হয়।
- ভ্যাজাইনেক্টমি: যোনি বাদ দেওয়া হয়।
- সম্পূর্ণ হিস্টেরেক্টমি: এতে জরায়ু এবং জরায়ুর পথ উভয়ই বাদ দেওয়া হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি: উচ্চ শক্তিযুক্ত এক্স রে বা অন্য রেডিওঅ্যাকটিভ বস্তু ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি: ওষুধ ব্যবহার করে ক্যান্সারের কোষগুলিকে মেরে বা কোষগুলির বিভক্ত হওয়াকে থামিয়ে ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে আটকানো হয়।
বেশীরভাগ চিকিত্সারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যেমন, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রণা এবং অন্যান্য উপসর্গগুলিতে অস্বস্তি বোধ করা, বমি বমি ভাব, খিদে কমে যাওয়া, ডায়রিয়া, বমি হওয়া, চুল পড়া, মানসিক অবসাদ।