ট্যাকিকার্ডিয়া (দ্রুত হৃদস্পন্দন) কি?
বিশ্রামে থাকাকালীন হৃদপিন্ড প্রতি মিনিটে 70 থেকে 90 বার সমান হারে স্পন্দিত হয়। যখন হৃদপিন্ড প্রতি মিনিটে 100 বারের বেশি স্পন্দিত হয়, তখন একে ট্যাকিকার্ডিয়া বলা হয়। এটি অ্যারিথমিয়ার অন্যতম সাধারণ রূপ। ট্যাকিকার্ডিয়া শারীরিক (শারীরিক পরিশ্রমের কারণে অথবা গর্ভাবস্থায় দেখা দিতে পারে) অথবা কিছু রোগের অবস্থার কারণে হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
ট্যাকিকার্ডিয়ার অর্থ হল হৃদপিন্ড খুব জোরে স্পন্দিত হওয়া এবং কার্যকরভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে না পারা। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং যার ফলে নিচে দেওয়া উপসর্গগুলি দেখা দিতে পারে:
- ডিস্পোনিয়া (শ্বাসকষ্ট)।
- বুক ধড়ফড় করা (নিজের হৃদস্পন্দন টের পাওয়া)।
- বুকে ব্যথা।
- মাথা-হালকা বোধ হওয়া।
- রক্তচাপ কমে যাওয়ার ফলে সাময়িক সংজ্ঞাহীনতা।
এর মূল কারণগুলি কি কি?
হৃদযন্ত্রে, একপ্রকার বৈদ্যুতিক তরঙ্গ উৎপন্ন হয় যার ফলে হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন হয়ে থাকে। যখন এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন ঘটে তখন ট্যাকিকার্ডিয়া দেখা দেয়। এই পরিবর্তনের কারণগুলি হল:
শারীরবৃত্তীয়
- শরীরচর্চা।
- দৌড়ানো।
- উদ্বেগ।
- গর্ভাবস্থা।
রোগবিদ্যাগত
- হৃদযন্ত্রের পেশীতে ক্ষতিসাধন হওয়া।
- জন্মগত হৃদরোগ।
- রক্তাল্পতা।
- উচ্চ রক্তচাপ।
- ধূমপান।
- জ্বর।
- কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
- ওষুধের অপব্যবহার।
- ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা।
- হাইপারথাইরয়েডিজম।
হৃদস্পন্দনের মাত্রা অনুযায়ী, ট্যাকিকার্ডিয়া বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন:
- এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন - দ্রুত, অসম-হারে হৃদযন্ত্রের উপরের অংশের (এট্রিয়া) সংকোচন।
- এট্রিয়াল ফ্লাটার - হৃদযন্ত্রের উপরের অংশের (এট্রিয়া) দ্রুত হারে প্রতিনিয়ত স্পন্দিত হওয়া।
- সুপ্রাভেন্টিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া - ভেন্ট্রিকেলসের (হৃদযন্ত্রের নিচের অংশ) ঠিক উপরে বর্ধিত হারে হৃদস্পন্দন শুরু হওয়া।
- ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন - অনিয়মিত, দ্রুত এবং হৃদয়ের ভেন্ট্রিকেলসগুলির বিশৃঙ্খল স্পন্দন।
- ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়া - নিয়মিত, দ্রুত স্পন্দন যা হৃদযন্ত্রের ভেন্ট্রিকেলসগুলিতে শুরু হয়।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
একটি শারীরিক পরীক্ষা (যাতে নাড়ির গতি মাপা হয়) যা সাধারণত ট্যাকিকার্ডিয়া হয়েছে কিনা তা স্থির করে, কিন্তু এতে রোগের কারণ জানা যায় না। তাই, ট্যাকিকার্ডিয়ার কারণ নির্ণয় করতে একটি সম্পূর্ণ চিকিৎসাগত ইতিহাস এবং কিছু অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়। এইসকল অনুসন্ধানের মধ্যে রয়েছে:
- ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি) - হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ মাপতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের পেশীগুলির সমস্যা সম্বন্ধে জানতেও সাহায্য করে।
- ইলেক্ট্রোফিজিওলজি - হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে।
- ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম - হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতে সাহায্য করে।
- সিটি এবং এমআরআই স্ক্যান - হৃদযন্ত্রের গঠন এবং এর ক্ষতির পরিমাণ জানতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস টেস্ট - শারীরিক পরিশ্রমের সময় হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা জানতে সাহায্য করে।
ট্যাকিকার্ডিয়া যদি শারীরিক বা মানসিক চাপের কারণে হয়ে থাকে, তাহলে তা নিজে থেকেই সেরে যায়। যাইহোক, কখনো কখনো এই বেড়ে যাওয়া হৃদপিন্ডের স্পন্দনের হার স্বাভাবিক করতে কিছু চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।
- ওষুধপত্র - অ্যান্টি-অ্যারিথমেটিক ওষুধগুলি মৌখিকভাবে (খেয়ে) বা ইনজেকশনের মাধ্যমে ট্যাকিকার্ডিয়াকে হ্রাস করতে সহায়তা করে।
- শক থেরাপি বা কার্ডিওভার্সন - একটি বাহ্যিক ডিফিব্রিলেটর হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
- পেসমেকার - পেসমেকার হল একটি কৃত্রিম বৈদ্যুতিক স্পন্দন সৃষ্টিকারী যন্ত্র যা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।