চোখ ফোলা - Swollen Eyes in Bengali

চোখ স্বাস্থ্যকর রাখা এবং চোখের ফোলা রোধ করা বা চোখের অসুখ থেকে চোখকে বাঁচাতে কিছু পদক্ষেপের কথা জানান হল:

• সদ্যোজাত, শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের জন্য
  বিভিন্ন চোখের অসুখের উপসর্গ জেনে রাখলে এবং নিয়মিত চোখের দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা করানো হলে মা-বাবাদের পক্ষে তাঁদের সন্তানদের চোখের সমস্যার কথা জানা এবং তার সমস্যা সমাধান সহজ হবে। যদি তোমার বয়স তেরো থেকে উনিশের মধ্যে হয় তাহলে তোমার বয়সে চোখের কী কী সমস্যা হতে পারে সে ব্যাপারে জেনে রাখ যাতে বাকি জীবন তোমার চোখের স্বাস্থ্য খুব ভাল থাকে। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি কর এবং চোখের সমস্যার উপসর্গ সম্পর্কে জেনে রাখ যাতে চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পার।
• সদ্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
  সদ্য প্রাপ্তবয়স্কদের চোখের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে যাতে জীবনের বাকি অংশে চোখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। যদি চোখ ফোলা জাতীয় উপসর্গ তাঁদের মধ্যে না দেখা যায় তবুও চোখের সমস্যার ঝুঁকি সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরি। উপযুক্ত যন্ত্রপাতির সাহায্যে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা এবং চোখের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করলে চোখের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে তা সাহায্য করা।
• 40 থেকে 60 বছর বয়স্ক
  এই বয়স কালেই মূলত বহুবিধ চোখের রোগ শুরু হয়। যে সব প্রাপ্তবয়স্কের চোখের কোনও সমস্যা বা রোগ নেই তাঁদেরও চোখের প্রাথমিক (বেসলাইন) পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যদি প্রাথমিক (বেসলাইন) পরীক্ষা তাড়াতাড়ি শুরু করা যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করা যেতে পারে। এই কারণে 40 বছর বয়সেই চোখের পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে দ্রুত চিকিৎসা সম্ভব হয়।
• 60 -এর ওপরে প্রাপ্তবয়স্করা
  আপনার দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হোক বা না হোক কোনও চক্ষু চিকিৎসককে দিয়ে আপনার চোখ পরীক্ষা করা প্রয়োজন। নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান এবং দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখার জন্য ববস্থা নিন।

চোখ ফুলে যাওয়ার চিকিৎসা নিম্নলিখিত পদক্ষেপের ওপর ভিত্তি করে করা হয়।

যদি কোনও পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে বা অজ্ঞাত কারণে  চোখের পাতা ফুলে থাকে তাহলে নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসৃত হয়:

• চোখের ফোলা থেকে আরাম পেতে ঠান্ডা সেঁক নিলে ফোলা কমে।
• অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ নিলে চুলকানি এবং ফোলা কমে। 
• ঠান্ডা সেঁক নিয়ে ফোলা না কমলে চোখের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা করে ওষুধ দিতে হবে। চোখের ফোলা নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধের দোকান থেকে সরাসরি অ্যালার্জি প্রতিরোধী ওষুধ, ডিকনজেস্ট্যান্ট আই ড্রপ এবং চোখকে তৈলাক্ত রাখতে কৃত্রিম পিচ্ছিলকারক, আর্টিফিশিয়াল টিয়ার কিনে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।

আপনার চিকিৎসক আপনাকে নিম্নলিখিত ওষুধগুলি গ্রহণের পরামর্শ দিতে পারেন:

• অ্যালার্জি প্রতিরোধী, অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ।
• ঘুম পাবে না এমন মুখে খাওয়ার অ্যালার্জি প্রতিরোধী ওষুধ।
• চোখের ড্রপ যাতে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, অ্যান্টিবায়োটিক, কর্টকোস্টেরয়েড, NSAID  বা ডিকনজেস্ট্যান্ট আছে।

নিম্নলিখিত কারণের জন্য চোখ ফুলে যাওয়ার চিকিৎসা:

যখন নিম্নলিখিত কোনও কারণের জন্য চোখ ফুলে  যায়, তখন অসুখের চিকিৎসা করলে ফোলাও কমে যায়। চোখ ফুলে যাওয়ার কারণ এবং তার চিকিৎসার কিছু কারণ এখানে বিধৃত হল:  

• গ্রেভ’স ডিজিজ
  • রোগ প্রতিরোধের সহজাত ক্ষমতা বিরোধী (ইমিউনিটি সাপ্রেসিং) স্টেরয়েড ওষুধ দেওয়া হয় যাতে ফোলা এবং চোখের মধ্যে অস্বস্তির ভাব কমে।
  • চোখের ক্ষতি যাতে আর না বাড়ে তা দেখার জন্য অস্ত্রোপচার বা রেডিয়েশন থেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
  • চোখের জ্বালা কমাতে রোদচশমা (সানগ্লাসেস) বা চোখের ড্রপ-এর পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
•     ক্যালিজিওন
  • 10  থেকে 15 মিনিট চোখের পাতায় গরম জলের সেঁক।
  • স্টেরয়েড ইনজেকশন।
  • যদি ক্যালিজিওন বাড়তে থাকে তাহলে অস্ত্রোপচার করে তা বাদ দিতে হতে পারে।
• স্টাই
  • আক্রান্ত চোখে অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগাতে হবে।
  • অস্ত্রোপচার করে পুঁজ বার করে দিতে হবে।
• কনজাংটিভাইটিস
  • ব্যাকটিরিয়া জনিত কারণে কনজাংটিভাইটিস হলে চোখে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ খুব উপকারী হয়।
  • চোখে আরাম দেওয়ার জন্য চোখের ড্রপ।
  • চোখ ঠান্ডা রাখার প্যাড।

জীবনশৈলীর ব্যবস্থাপনা (লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট)

যদি দেখেন চোখ ফুলেছে তাহলে আপনি কী করবেন? অধিকাংশ সময়ে চোখের চারপাশ ফুলে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যে কমে যায়। তবে আপনি চোখের ফোলা কমাতে নিম্নলিখিত কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন:

• মাঝে মাঝেই  চোখ ধুয়ে ফেলার অভ্যাস করুন
  যদি দেখেন চোখ ফোলার সঙ্গে সেখান থেকে  রস গড়াচ্ছে তাহলে চোখ ধয়ে ফেলুন। ঠান্ডা জল ব্যবহার করুন; অ্যালার্জির ক্ষেত্রে তা অনেক আরামদায়ক হয়।
• কনট্যাক্ট লেন্স সরিয়ে ফেলুন
  যদি আপনি কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন এবং দেখেন চোখ বা চোখের পাতা ফুলেছে তাহলে অবিলম্বে লেন্স খুলে ফেলুন।
• ঠান্ডা সেঁক নিন
  শুয়ে পড়ুন এবং আপনার চোখের ওপর বরফের প্যাক বা জলে ভেজা কাপড় দিয়ে সেঁক নিন।

 যদি চোখের ফোলা 24 থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে না কমে  এবং তার সঙ্গে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা যায় তাহলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন:

• যদি এমন অনুভুতি হয় যে মনে হয় চোখের মধ্যে কিছু ঢুকে রয়েছে।
• চোখে ব্যাথা।
• দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়া।
• চোখের সামনে কিছু ভাসতে দেখা (দৃষ্টির মধ্যে স্পট)।.
• ঝাপসা দৃষ্টি।

যদি আপনার চোখ ফুলে যায় বা না ও ফুলে যায় তবু চোখ পরীক্ষা করা ভাল, তার ফলে চোখের স্বাস্থ্য দীর্ঘদিন ভাল রাখা নিশ্চিত করা যায়। চোখের পরীক্ষায় বেশ কিছু অসুখ ধরা পড়তে পারে:

• ডায়বিটিস।
• ক্যারোটিড ধমনীর অসুখ (ক্যারোটিড ধমনীতে প্লাক জমে যাওয়া)।
• লিম্ফোমা ( এক প্রকারের ক্যান্সার, যা লিম্ফোসাইট, রোগ প্রতিরোধের সহজাত কোশ (ইমিউনিটি সেল), থেকে শুরু হয়।
• উচ্চ রক্তচাপ।
• মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস  (  এমন এক অবস্থা যখন রোগ প্রতিরোধ তন্ত্র স্নায়ুর বহিরাবরণকে আক্রমণ করে বলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়) ।