মেরুদন্ডে আঘাত কি?
মেরুদন্ডে আঘাত হল মেরুদন্ডে শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতা অথবা মেরুদন্ড থেকে উদ্ভূত স্নায়ুতে আঘাত। এই আঘাতের ধরণটি সাধারণত চেতনার পরিবর্তন, পেশী শক্তির পরিবর্তন, এবং অনেকসময়, প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতের কারণ হতে পারে। হঠাৎ পড়ে যাওয়া, দূর্ঘটনা বা মেরুদন্ডে সংক্রমণ মেরুদন্ডে আঘাতের কারণ হতে পারে।যদি আঘাত সামান্য হয়, আরোগ্য হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে, কিন্তু যদি আঘাত গুরুতর হয় তবে এটি স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
মেরুদন্ডে আঘাতের লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি আঘাতের স্থান এবং মাত্রার উপর নির্ভর করে তার সাথে কতটা গুরুতরভাবে আঘাত লেগেছে তার উপরও নির্ভর করে।
- প্যারাপ্লেজিয়া অথবা কোয়াড্রিপ্লেজিয়া - যেকোন একটি বা একসাথে চার হাতপায়েরই প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত।
- চেতনা হ্রাস বা চেতনার পরিবর্তন, বিশেষত স্পর্শ, গরম বা ঠান্ডার অনুভূতির ক্ষেত্রে।
- মূত্রাশয় বা অন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়া।
- চলাফেরা করতে না পারা।
- অভিব্যক্তি ব্যাক্ত করার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা চলে যাওয়া।
- ন কার্যকারিতার পরিবর্তন।
- কাশি এবং শ্বাস নিতে কষ্ট।
গুরুতর আঘাতের ইঙ্গিত দেয় যেসব লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি তার মধ্যে রয়েছে:
- তীব্র পিঠে ব্যথা যা ঘাড়ে এবং মাথায় প্রসারিত হয়।
- আক্রান্ত অংশে পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিস।
- সঠিক দেহভঙ্গী এবং হাঁটাচলায় সমস্যা।
- আঘাতের পর শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা সৃষ্টি।
- মূত্রাশয় বা অন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
মেরুদন্ডে আঘাতের উপসর্গ দেখা দেয় যখন মেরুদন্ডীয় স্তম্ভের হাড়ে ক্ষতিসাধন হয়, মেরুদন্ডের অভ্যন্তরীণ চাকতিতে অথবা মেরুদন্ডীয় স্তম্ভের সহায়ক পেশী এবং লিগামেন্ট বা সন্ধিবন্ধনীতে ক্ষতি হলে এটি দেখা দিতে পারে। এই কাঠামোতে আঘাতের কারণ শারীরিক আঘাত (হাড় ভেঙ্গে যাওয়া বা মেরুদন্ডের অস্থিসন্ধির স্থানচ্যুতি), আর্থারাইটিস, প্রদাহ, সংক্রমণ, ক্যান্সার বা চাকতির ক্ষয়ের কারণে ঘটতে পারে।
অস্থিভঙ্গের ঘটনা ছাড়াও মেরুদন্ডে আঘাতের ফলে ফোলাভাব, প্রদাহ, পুঁয জমা হওয়া এবং মেরুদন্ডের চারপাশে রক্তপাতের সম্ভবনা রয়েছে, যার ফলে মেরুদন্ডের সংকোচন ঘটতে পারে। এই আঘাতের ঘটনা হঠাৎ পড়ে যাওয়া, গাড়ি দুর্ঘটনা, শারীরিক অত্যাচার, খেলাধূলায় আহত হওয়া বা রোগের কারণে ঘটতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
মেরুদন্ডে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে সাধারণত জরুরী বিভাগে রাখা হয়, যেখানে সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করা হয়, এর সাথে, ব্যক্তিটির অভিব্যক্তি প্রকাশের মূল্যায়ন দ্বারা মেরুদন্ড কতটা আক্রান্ত হয়েছে এবং আঘাতের তীব্রতারও পরিমাপ করা হয়। চিকিৎসাগত ইতিহাস ছাড়া, নির্দিষ্ট কিছু ইমেজিং পদ্ধতি আঘাতের পরিমান নির্ধারণে সহায়তা করে। এই ইমেজিং পদ্ধতিগুলি হল:
- এক্স-রে - অস্থিভঙ্গ, ডিস্ক বা চাকতিতে হার্নিয়েশন ইত্যাদি পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।
- সিটি স্ক্যান - এক্স-রের পরে আরও ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখতে এবং হাড় এবং চাকতিগুলি সম্পর্কে ধারণা দিতে এবং মেরুদন্ডীয় স্তম্ভের হাড়ে সংক্রমণ বা ক্যান্সার পরীক্ষা করতেও সাহায্য করে।
- এমআরআই স্ক্যান - এটি সবচেয়ে উন্নত পদ্ধতি এবং সুবিধাজনক পরীক্ষা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, যেহেতু এটি হাড়, পেশী, সন্ধিবন্ধনী বা লিগামেন্ট, এবং মেরুদন্ডের চাকতিগুলির একটি পরিস্কার প্রতিচ্ছবি দেয়। এটি মেরুদন্ডের সংকোচনের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
মেরুদন্ডে আঘাতের চিকিৎসায় বিকলতা, ব্যথার উপসর্গ এবং অস্বস্তি হ্রাস করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ মেরুদন্ডের আঘাত সারিয়ে তোলার সীমিত উপায় রয়েছে।
তীব্র আঘাতের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল:
- মেরুদন্ডের স্নায়ুর চারপাশে ফোলাভাব এবং প্রদাহের জন্য ওষুধ প্রয়োগ।
- মেরুদন্ডীয় স্তম্ভের হাড়কে স্থিতিশীল করতে দীর্ঘদিনের বিছানার বিশ্রাম।
- মেরুদন্ডীয় স্তম্ভের সন্ধিবন্ধনী বা লিগামেন্ট এবং হাড়ের আঘাত সারাতে অস্ত্রোপচার করা হয়।
দীর্ঘস্থায়ী আঘাতের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি:
- ওষুধ - ব্যথা কমাতে, পেশী শিথিল করতে এবং মূত্রাশয় বা অন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের ব্যবহার করা হয়।
- শারীরিক থেরাপি - এটি পুনর্বাসনমূলক থেরাপি নামেও পরিচিত, এটি আঘাতের প্রভাব এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলির কমে যাওয়া কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করা হয়। একাধিক আধুনিক পদ্ধতি এতে ব্যবহার করা হয়, যেগুলি হল
- বৈদ্যুতিক স্নায়ু উদ্দীপক।
- রোবোটিক চলাফেরার প্রশিক্ষণ।
- আধুনিক বৈদ্যুতিক হুইলচেয়ারের ব্যবহার।