স্লিপ ডিসঅর্ডার বলতে কি বোঝায়?
ঘুমানোর সময় অস্বস্তি, ঘুমানোর ছন্দের পরিবর্তন, বা ঘুমের সময় বাধা সৃষ্টি ইত্যাদি পরিস্থিতিগুলি স্লিপ ডিসঅর্ডারের সাথে সম্পর্কিত। স্লিপ ডিসঅর্ডারের ফলে দিনের বেলা ঘুম পাওয়া ও রাতে ভালোভাবে ঘুমাতে না পারার প্রবণতা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে এই গুরুতর পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
স্লিপ ডিসঅর্ডার অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে প্রচুর উপসর্গ দেখাতে পারে; তবুও, এর সাথে জড়িত নিদিষ্ট কিছু সাধারণ উপসর্গ হল:
- ঘুম আসার সময় অসুবিধা সৃষ্টি।
- ঘন ঘন ঘুম ভাঙার পর পুনরায় ঘুমাতে অসুবিধার সম্মুখীন হওয়া।
- সারাদিন ধরে শরীরে ক্লান্তি ও ঘুমাচ্ছন্নতা।
- উদ্বিগ্নতা।
- মনোযোগের অভাব।
- বিরক্তবোধ।
- অবসাদ।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এর সাথে জড়িত যে বিভিন্ন গুরুতর রোগের কারণে স্লিপ ডিসঅর্ডার হতে পারে, সেগুলি হল:
- মানসিক অবস্থা
- উদবিগ্নতা
- অবসাদ
- বাইপোলার ডিসঅর্ডার
- অ্যালার্জির অবস্থা
- রাইনাইটিস- অ্যালার্জি বা সংক্রমণের ফলে নাকে সর্দি
- এডিনয়েডস - গলার লিম্ফনয়েড টিস্যু ফুলে যাওয়া
- অ্যালার্জি ঘটিত কাশি
- নকটুরিয়া ডায়াবেটিস বা মুত্রথলির সমস্যার কারণে (রাতে বেশি প্রস্রাব পাওয়া,যা ঘুমে অসুবিধা ঘটায়)।
- ব্যথা - আরথারাইটিস,ফাইব্রোম্যালিঙ্গা ইত্যাদির কারণে দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর ব্যথা।
- স্লিপ অ্যাপ্নিয়া (ঘুমানোর সময় শ্বাস প্রশ্বাসের গতি কমে আসা বা হঠাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া)।
কিভাবে এগুলি নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সাধারণত, সম্পুর্ণ চিকিত্সাগত ইতিহাস স্লিপ ডিসঅর্ডারের সাথে জড়িত অন্তর্নিহিত কারণগুলির ব্যাপারে ইঙ্গিত দেয়। শারীরিক রোগটির সাথে জড়িত কিছু তথ্য অনুসন্ধান, এবং সাথে শারীরিক পরীক্ষা নির্ণয়টি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এর সাথে জড়িত পরীক্ষাগুলি হল:
- রক্ত পরীক্ষা যেমন সম্পূর্ণ রক্ত গননা (সিবিসি), এরিথ্রোসাইট সেডিমেন্টেশন হার (ইএসআর), সি-রিয়াকটিভ প্রোটিন (সিআরপি), প্রস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) (পুরুষদের ক্ষেত্রে), রক্তে শর্করার মাত্রা ইত্যাদি উপস্থিত শারীরিক উপাদানগুলি নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- ইইজি (ইলেক্ট্রোয়েন্সফ্যালগ্রাফি) মস্তিষ্কের তড়িৎ সঞ্চালন ও মস্তিষ্কের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে।
- পলিসনোগ্রাফি (ঘুমের পর্যবেক্ষণ) ঘুমানোর সময় শরীরের কার্যকলাপ, মস্তিষ্কের,এবং অক্সিজেনের মাত্রা নির্ধারণে সাহায্য করে।
এর সাথে জড়িত রোগগুলির চিকিৎসা উপসর্গগুলি দূর করতে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও পদ্ধতিগুলি স্লিপ ডিসঅর্ডার উপশমে সাহায্য করে। এর সাথে জড়িত কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি হল:
- ওষুধগুলি হল - ঘুমের ওষুধ, উদ্বেগ কমানোর ওষুধ,অ্যালার্জি নাশক ওষুধ ইত্যাদি নির্দিষ্ট কিছু ওষুধগুলি ঘুমাতে সাহায্য করবে।
- পরামর্শদান - বিশেষত, মানসিক দুশ্চিন্তা বা মানসিক অসুস্থতার কারণবশত স্লিপ ডিসঅর্ডার হয়ে থাকলে পরামর্শদানের পাশাপাশি ওষুধগুলি এতে সাহায্য করবে।
- জীবনশৈলীর পরিবর্তন - নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন যেমন বেশি ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া উচিত এবং চিনি পরিমিত মাত্রায় গ্রহন ফলদায়ক হবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে জলের সীমিত পরিমাণ গ্রহন রাতে প্রস্রাবের বেগকে কমাতে সাহায্য করবে। সন্ধ্যে বা রাতে ক্যাফেইন ও মদ্যপানের মত পানীয় এড়িয়ে চললে তা অপরিহার্য হবে।