ত্বকের অ্যালার্জি কি?
শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা যখন অনিষ্টকারী নয় এমন উপাদানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জানায়, তখন অ্যালার্জি হয়। সাধারণত, দেহের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা আমাদের ক্ষতিকারক অসুখের হাত থেকে রক্ষা করে, তবে যাঁদের ত্বকের অ্যালার্জি রয়েছে তাঁদের দেহের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা অতিরিক্ত সংবেদনশীল। এগজিমা, আমবাত, কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস এবং অ্যাঞ্জিওডেমা, সবই সাধারণ অ্যালার্জিজনিত ত্বকের প্রতিক্রিয়া।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গ কি?
নিম্নলিখিত তালিকাটি সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গের:
এগজিমা এবং আমবাত হলো সাধারণ ধরনের ত্বকের অ্যালার্জি এবং এদের উপসর্গ দেখেই দু’টির মধ্যে পার্থক্য করা যায়। এগজিমা সাধারণত মুখের চামড়ায় চুলকুনি, লালচে অথবা শুষ্কভাব হিসাবে দেখা দেয়, এর থেকে তরল বের হতে পারে এবং আঁচড়ে দিলে উঠেও আসে। হাইভ বা আমবাত শরীরের যে কোনও জায়গায় চুলকুনি, লালচে ও সাদা রঙয়ের, ফোঁড়ার মতো উঠতে পারে আর কয়েক মিনিট অথবা সপ্তাহের মধ্যে মিলিয়ে যায়। অ্যাঞ্জিওডেমা (তরল জমা হওয়ার ফলে ফোলাভাব) মুখমণ্ডলে চোখ, গাল অথবা ঠোঁটের চারপাশে হয়। এছাড়া, অ্যালার্জির জন্য দায়ী উপাদান অর্থাৎ অ্যালার্জেনের সরাসরি সংস্পর্শের প্রতিক্রিয়ায় চামড়ায় চুলকুনি ও লালচে ভাবের ফলে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হয়।
এর প্রধান কারণ কি?
নিম্নলিখিত কোনও একটি অ্যালার্জেনের সংস্পর্শ থেকে সাধারণত অ্যালার্জি হয়:
- ল্যাটেক্স।
- বিছুটি লতা।
- ঠাণ্ডা ও গরম তাপমাত্রা।
- পরাগ বা রেণু।
- বাদাম, খোলাযুক্ত জলজ প্রাণীর মতো খাদ্য উপাদান।
- জল।
- পোকা-মাকড়।
- ওষুধ।
- রোদ।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডাক্তার আপনার চিকিৎসাজনিত ও পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন এবং শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন। অ্যালার্জির কারণ নির্ধারণের জন্য চিকিৎসক স্কিন টেস্ট, প্যাচ টেস্ট অথবা রক্ত পরীক্ষা করানোরও পরামর্শ দিতে পারেন। রোগ নির্ণয় সুনিশ্চিত করতে স্কিন প্রিক টেস্ট অথবা ইন্ট্রাডার্মাল টেস্ট করা হতে পারে। আরেকটি নির্ণায়ক টেস্ট হলো ফিজিসিয়ান-সুপারভাইজড চ্যালেঞ্জ টেস্ট, এক্ষেত্রে আপনি শ্বাসের মাধ্যমে অথবা মুখ দিয়ে সামান্য পরিমাণ অ্যালার্জেন গ্রহণ করবেন।
অ্যালার্জির চিকিৎসার পূর্বানুমান চিকিৎসাজনিত ইতিহাস, অ্যালার্জেন টেস্টের ফলাফল, উপসর্গের প্রবলতার ওপর নির্ভর করে। ন্যাসাল স্যালাইন রিন্স প্রক্রিয়া হাওয়াবাহিত অ্যালার্জেনের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসক ন্যাসাল কর্টিকোস্টেরয়েড, মাস্ট সেল ইনহিবিটর, ডিকনজেস্টেন্ট, এপিনেফ্রাইনের মতো ওষুধ নেওয়ারও পরমার্শ দিতে পারেন। উপসর্গ উপশমে স্টেরয়েডযুক্ত ট্রপিকাল ক্রিম, ওরাল অ্যান্টিহিস্টামাইন এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতে পারে।
তবে, চামড়ায় দেখা দেওয়া ফুসকুড়ি চুলকানো এড়ানো উচিত, কারণ এতে অবস্থা আরও বিগড়ে যেতে পারে। বরং অস্বস্তি থেকে আরাম পেতে সুতির নরম কাপড় দিয়ে ফুসকুড়ির জায়গাটা হাল্কা করে ঘঁষে নিন। উষ্ণ গরম জলে স্নান, চামড়ার আক্রান্ত স্থানটি ভিজিয়ে রাখা, ব্লিচের সংস্পর্শ এড়ানো, কড়া ডিটারজেন্ট অথবা সাবান ত্বকের অ্যালার্জির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।