খিঁচুনি কাকে বলে?
সিজারকে সাধারণত মূর্ছা বা খিঁচুনি বলা হয়, মস্তিষ্কে আকস্মিকভাবে একাধিক অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক প্রবাহের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তনের প্রকাশ হয় খিঁচুনির মাধ্যমে।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
ফোকাল সিজার এবং জেনারালাইজড সিজার, খিঁচুনির এই দুটি মূল প্রকারভেদের উপসর্গগুলি নিচে উল্লেখ করা হল:
ফোকাল সিজার উৎপন্ন হয় মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে। এর উপসর্গগুলি হল:
- শরীরের যেকোন অংশের আকস্মিক বিচলন।
- সচেতনতার পরিবর্তনের ফলে চলন ও ক্রিয়াকলাপের বদল।
- আক্রান্ত ব্যক্তির আলোর জ্যোতি দেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে।
- বাস্তবে উপস্থিত নয় এমন শব্দ, গন্ধ বা স্বাদের অনুভূতি।
জেনারালাইজড সিজারের উপসর্গগুলি হল:
- এবসেন্স সিজার : শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এই সময় শিশুদের দেখে মনে হতে পারে তারা কোন শূন্যস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে, অথবা অল্পসময়ের জন্য সচেতনতার অভাব ও শরীরের সূক্ষ্ম নড়াচড়া দেখা যেতে পারে।
- টোনিক সিজার: পেশীর কাঠিন্য যা আক্রান্তের পতনের কারণ হতে পারে। সাধারণত পিঠ, হাত ও পায়ের পেশী এতে প্রভাবিত হয়।
- ক্লোনিক সিজার: ঝাঁকুনিযুক্ত পেশীর চলন, সাধারণত মুখ, ঘাড় ও হাতের পেশিতে দেখতে পাওয়া যায়।
- টোনিক-ক্লোনিক সিজার: আক্রান্ত টোনিক ও ক্লোনিক সিজারের উপসর্গগুলি সম্মিলিতভাবে অনুভব করতে পারে।
- মায়োক্লোনিক সিজার: পেশীর কম্পনের পাশাপাশি ছোট ঝাঁকুনিযুক্ত চলন।
- এটোনিক সিজার: পেশীর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়ার ফলে আক্রান্ত পড়ে যেতে পারে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
অধিকাংশ স্নায়বিক সমস্যার মত খিঁচুনিরও কোন নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই। তবে, এর সবথেকে পরিচিত কারণটি হল মৃগীরোগ। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জিনগত কারণ: জিনের পরিবর্তন ও জিনগত উত্তরাধিকার খিঁচুনি সৃষ্টির ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় আঘাত, স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যা, মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এলজাইমার্স রোগ।
- সংক্রমণ।
- হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাসের (এইচআইভি) সংক্রমণ।
- মদ্যপান ও মাদক সেবন।
- ঘুমের অভাব, জ্বর।
- এন্টিডিপ্রেসেন্ট, এনালজেসিক, ডাইইউরেটিক প্রভৃতি ওষুধের প্রভাবে।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসার ইতিহাস সংগ্রহের পাশাপাশি কয়েকটি নির্দিষ্ট পরীক্ষা খিঁচুনি নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- সংক্রমণ, জিনগত সমস্যা, হরমোন বা ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যের অভাব সন্ধান করতে রক্তপরীক্ষা করা হয়।
- লাম্বার পাংচার।
- ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম।
- নিউরোলজিক্যাল ফাংশন টেস্ট (স্নায়বিক ক্রিয়ার পরীক্ষা)।
- ম্যাগনেটিক রেসোনান্স ইমেজিং (এমআরআই)।
- পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রাফি (পিইটি) স্ক্যান।
কিছুক্ষেত্রে খিঁচুনি মাত্র একবারই ঘটতে পারে, এবং এর কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
যদি বারবার খিঁচুনির ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় তবে চিকিৎসক অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক (মৃগী রোধের) ওষুধ দিতে পারেন। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন বেশি তেলযুক্ত, কম শর্করাযুক্ত, কিটোজেনিক খাদ্যাভ্যাস খিঁচুনির চিকিৎসায় সাহায্য করে।