সারকোডসিস কাকে বলে?
সারকোডসিস হল একটি অসুখ যাতে শরীরের, বিশেষত ফুসফুস ও লসিকা গ্রন্থির, টিস্যুগুলিতে প্রদাহের ফলে লাল ও স্ফীত নডিউল (গ্রানুলোমা) সৃষ্টি হয়। যেকোন বয়সে সারকোডসিস হতে পারে; তবে 20-40 বছর বয়সীদের উপর এর প্রভাবের সম্ভাবনা সবথেকে বেশি হয়। কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এর ফলে পালমোনারি ফাইব্রোসিসও হতে পারে।
যদিও এতে শরীরে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি (গ্রানুলোমা) দেখা যায়, সারকোডসিস রোগটি ক্যান্সার নয় এবং 1-3 বছরের মধ্যে রোগী এই সমস্যার থেকে মুক্তি পায়। বিভিন্ন ওষুধ এর উপসর্গগুলি কমাতে অথবা অনাক্রম্য তন্ত্রকে চেপে রাখতে সাহায্য করে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গটি হল শ্বাসকষ্ট, যার পরে আকস্মিক ফুসকুড়ির আক্রমণ দেখা দেয়। সারকোডসিসের অন্য পরিচিত উপসর্গগুলি হল মুখে ও হাতে লাল গোটার সৃষ্টি, চোখের প্রদাহ, ওজন হ্রাস, রাতে ঘাম হওয়া এবং ক্লান্তি।
এই রোগের অন্যান্য উপসর্গগুলি নিচে দেওয়া হল:
- বুকে ব্যথা।
- শ্বাসকষ্ট।
- ক্লান্তি।
- মুখ ফুলে যাওয়া।
- আর্থ্রাইটিস।
- পায়ে যন্ত্রণাদায়ক পিণ্ডের সৃষ্টি।
- বগল, ঘাড় ও কুঁচকির গ্ল্যান্ড (গ্রন্থি) ফুলে যায় ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
- অ্যারিদমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন)।
- কিডনিতে পাথর।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
জীবাণু ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার লড়াইয়ের ফলস্বরূপ এই সমস্যাটির সৃষ্টি হয়। এর ফলে টিস্যুর স্ফীতি ও লালভাব দেখা দেয়। ক্রমশ যখন সুস্থ টিস্যু ও অঙ্গগুলিও আক্রান্ত হতে শুরু করে এবং আরো গ্রানুলোমার সৃষ্টি হয়, তত সারকোডসিস অসুখটি আরো গুরুতর চেহারা নেয়, এটি অটোইমিউন রোগের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য।
মনে করা হয় যে পরিবেশগত ও জিনগত কিছু উপাদান মূলত এই সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী। সুতরাং এই রোগটি সংক্রামক প্রকৃতির নয়।
কিভাবে এটি নির্ণয় করা হবে এবং এর চিকিৎসা কি?
রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং বুকের এক্স-রের উপর এই রোগটির নির্ণয়করণ নির্ভর করে। এই প্রক্রিয়াগুলো অন্যান্য অনুরূপ রোগ, যেমন যক্ষ্মা, ছত্রাক সংক্রমণ, রিউমাটিক জ্বর ও লসিকার ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাতিল করতে সাহায্য করে।
ফুসফুসের সারকোডসিস (পালমোনারি সারকোডসিস) শনাক্তকরণের জন্য ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করা যেতে পারে।
প্রদাহের নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রানুলোমার চিকিৎসার জন্য প্রেডনিজোন জাতীয় কর্টিকোস্টেরয়েড বিশেষ কার্যকরী। আরেকটি বিকল্প উপায় হল শরীরের ক্ষতিগ্রস্থ অঙ্গগুলিকে সক্রিয় রাখা এবং উপসর্গগুলির চিকিৎসা করা। তবে সমস্যাটি নিজে থেকেও কমে যেতে পারে। সুতরাং চিকিৎসক থেরাপি শুরুর কোন নির্দিষ্ট সময় নাও বলতে পারেন।
উপরোক্ত ঘটনাগুলি সত্ত্বেও সারকোডসিস আক্রান্ত রোগীর উচিত অসুখটির পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসার নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত দেখা করা। কর্টিকোস্টেরয়েড প্রয়োগের বেশ কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে বলে জানা যায় যার মধ্যে কয়েকটি হল মেজাজের পরিবর্তন, তরলের সঞ্চয়, রক্তে উচ্চ মাত্রায় সুগার, প্রভৃতি। এদের দীর্ঘকালীন ব্যবহার হাড়ের সামর্থ্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে এবং আলসারের সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং ওষুধগুলোর সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়ার জন্য চিকিৎসক-নির্দেশিত পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত।