রেয়ে'স সিনড্রোম কি?
রেয়ে’স সিন্ড্রোম (আরএস) হলো এমন একটি অবস্থা যা বিশেষত শিশুদের মধ্যে দেখা যায় এবং এর প্রভাবে শিশুদের লিভারের ক্ষতি, মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়ার মতো বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খুব কম দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
আরএসের লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কিছুদিনের মধ্যেই ভাইরাল সংক্রমণের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে (ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর বা চিকেনপক্স), যাতে প্রাথমিকভাবে দেখতে পাওয়া উপসর্গগুলি হল:
- ক্লান্ত হয়ে পরা।
- বার বার বমি করা।
- কোন কাজে উৎসাহ বা আগ্রহের ঘাটতি।
- দ্রুত বা গভীরভাবে নিশ্বাস নেওয়া।
- হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়া বা হঠাৎ কোন রোগ হওয়া।
রোগটির আরও খারাপ পরিস্থিতির ফলে গুরুতরভাবে যে উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলি হল:
- আক্রমনাত্বক আচরন করা।
- বার বার বিরক্তবোধ করা।
- অতিরিক্ত উদবিগ্ন হয়ে ওঠা।
- দৃষ্টিভ্রমের সাথে বিভ্রান্তশীল হয়ে ওঠা।
- চেতনা হারানো বা অবচেতন হয়ে পড়া ও কোমায় চলে যাওয়া।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
আরএসের ফলে মাইটোকন্ড্রিয়ায় (শরীরে প্রতিটি কোষে শক্তি উৎপাদন ইউনিটের উপস্থিতি) একটি ছোট গঠনগত ত্রুটি দেখতে পাওয়া যায় যা লিভারের ওপরে প্রভাব ফেলে ও শক্তি উতপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ও শরীরে অনেক বিষাক্ত পদার্থ সৃষ্টি করে। এগুলি শরীরে অনেক ক্ষতি করে ও মস্তিষ্কে ফোলাভাবের সৃষ্টি করে। আরএসের প্রধান কারণ অজানা থাকলেও এর সাথে জড়িত কিছু অবস্থা হল:
- ভাইরাসের সংক্রমণ (সাধারণত ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর, বা চিকেনপক্স) হওয়া।
- অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের প্রয়োগ বা ব্যবহার।
কিভাবে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসক উপসর্গগুলির বিশদ বিবরণ নেওয়ার পর কিছু শারীরিক পরীক্ষা করবেন। এছাড়াও যে অন্যান্য পরীক্ষাগুলির পরামর্শ দিতে পারেন সেগুলি হল:
- নির্দিষ্ট কিছু রক্তপরীক্ষা, যেমন:
- অ্যাস্পারেট অ্যামিনোট্রান্সফারেস (এএসটি) এবং অ্যালানিন অ্যামিনোট্রান্সফারেস (এএলটি) পরীক্ষা।
- সিরাম ইলেক্ট্রোলাইটিস পরীক্ষা।
- রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা।
- সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুয়িড (সিএফএস) নিরীক্ষণ।
- মস্তিষ্ক ও লিভারের কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) স্ক্যান।
- যকৃতের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি।
- লিভারের বায়প্সি।
- লেম্বার পাঙ্কচার।
রেয়ে’স সিন্ড্রোমের ব্যবস্থাপনা:
যখন একটি শিশুর শরীরে আরএস নির্ণিত হয়, তখন দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভরতি করে বিশেষ যত্ন ও সিবার প্রয়োজন হয়। রক্তের চাপ, নারিস্পন্দন, নিশ্বাসের হাড় ও শরীরের তাপমাত্রার মতো বিশেষ লক্ষণগুলি পরিদর্শন করা জরুরী। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ হল শ্বসন ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া, মস্তিষ্কের ক্ষতি ও ফুলে যাওয়াকে প্রতিহত করে উপসর্গগুলি কমানো ও শরীরের সমস্ত কার্যকারিতাগুলি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসা। কিছু ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসার সাথে জড়িত প্রয়োজনীয় ওষুধগুলি হল:
- ইলেক্ট্রোলাইটস এবং তরল - নুন, খনিজ ও পুষ্টির নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রিত মাত্রার জন্য প্রয়োজন।
- মূত্রবৃদ্ধির ওষুধ- যা শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত জলের পরিমানকে কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে মস্তিষ্কের ফোলাভাব কমে যাবে।
- অ্যামোনিয়া পরিশোধন- শরীরে অ্যামোনিয়ার মাত্রাকে কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগ নিয়ন্ত্রনে অ্যান্টিকনভালসন্টসের ব্যবহার।