প্রাথমিক ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি বা প্রাইমারি ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি কি?
প্রাইমারি ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (পিআইডি) রোগ অনেকগুলি বংশগত রোগের সমষ্টি, যা ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থাপনার এক বা একাধিক উপাদানের অনুপস্থিতি বা অনুপযুক্ত কাজের জন্য হয়। রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা শ্বেত রক্তকনিকা বা সাদা রক্ত কোষ দ্বারা তৈরি। আমাদের শরীর অণুজীবের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে নিজেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে। পিআইডির রোগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবডি অনুপস্থিত থাকে আর নাহলে উপস্থিত থাকলেও শরীরকে রক্ষা করতে কার্যকরভাবে কাজ করে না। পিআইডি শরীরের শ্বাসতন্ত্র, খাদ্যনালী, মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড অথবা শরীরের অন্যান্য তন্ত্রকে আক্রান্ত করতে পারে। বর্তমানে গড়ে 150 ধরনেরও বেশি পিআইডি আছে আর তার সঙ্গে তালিকায় ক্রমাগত নতুন ধরন যোগ হয়েই চলেছে।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
পিআইডি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি উপলব্ধি করতে পারেন:
- বারবার সংক্রমণ হওয়া, যা নিরাময় করা কঠিন।
- প্লীহার বৃদ্ধি।
- চামড়া অথবা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বারবার ফোঁড়া অথবা পুঁজ জমা হওয়া।
- ওজন হ্রাস।
- মস্তিষ্ক ঝিল্লির (মেনিনজাইটিস) প্রদাহ বা ফুলে ওঠা।
- বারবার নিউমোনিয়া হওয়া।
- লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠা।
এর প্রধান কারণ কি?
পিআইডি জিনগত ও বংশগত ত্রুটির কারণে হয় এবং সংক্রামক নয়। নানান জিনগত পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় আর তা সবই এই পিআইডি-র মধ্যে পড়ে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
পিআইডি সনাক্ত করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষাগুলি হল:
- অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকার মাত্রা চিহ্নিত করতে রক্ত পরীক্ষা।
- যেসব বাবা-মায়ের ইতিমধ্যেই পিআইডিতে আক্রান্ত সন্তান রয়েছে এবং পরবর্তী সন্তান ধারণের আগে নিজেদের পরীক্ষা করাতে চান, তাঁদের জন্য প্রিন্যাটাল টেস্ট রয়েছে। এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় ভ্রূণ পিআইডি আক্রান্ত কি না।
- ত্রুটিপূর্ণ জিন চিহ্নিত করতে জিনগত পরীক্ষা।
রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার ত্রুটির প্রকারভেদের উপর চিকিৎসাপদ্ধতি নির্ভর করে এবং তা হলো:
- অস্থি মজ্জা, থাইমাস অথবা স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন।
- ইমিউনোমডিউলেশন, যেমন-ইন্টারফেরন গামার সাহায্যে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করা।
- সংক্রমণ রোধ ও চিকিৎসা এবং রোগের অবস্থা পরিচালনায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার।
- অটোইমিউন রোগের ব্যবস্থাপনা, যদি থেকে থাকে।
- অ্যান্টিবডি প্রতিস্থাপন থেরাপি।