মেনোপজের পর অষ্টিওপোরোসিস কি?
অষ্টিওপোরোসিস এমন একটি রোগ যাতে শরীরের হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে তা চিড় ধরা প্রবণ হয়ে পড়ে। মেনোপজ অর্থাৎ ঋতুবন্ধতা মহিলাদের মধ্যে সাধারণত 45-52 বছর বয়সের মধ্যে হয় এবং নানান হরমোনাল পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম শোষণের মতো শরীরে বেশকিছু প্রভাব পড়ে। মেনোপজের পর, হাড়কে সুরক্ষাদানকারী ইস্ট্রোজেনের কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহিলারা অষ্টিওপোরোসিস প্রবণ হয়ে পড়েন।
এর প্রধান লক্ষণ উপসর্গগুলি কি কি?
রোগটি বিশেষত লুকিয়েই থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হাড় ভাঙা বা হাড়ে চিড় ধরা হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে অথবা অন্যান্য উদ্দেশে করা এক্স-রে বা বডি স্ক্যানে তা ধরা পড়ছে। আরও খারাপ ব্যাপার হল, সুক্ষ চিড় ধরা নজরে নাও আসতে পারে। এর একটি বিশেষ উদাহরণ হল ভার্টিব্রাল ফ্র্যাকচার, যাতে পিঠে মৃদু ব্যথা ছাড়া বেশি কিছু অনুভূত হয় না আর নড়াচড়া করলেই তা ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য আঘাতেও ফ্র্যাকচার হতে পারে। একে ফ্র্যাজিলিটি ফ্র্যাকচার বলা হয়। বয়সকালে, মেরুদণ্ডে একাধিক ফাটলের ফলে রোগীর উচ্চতায় হ্রাস ঘটতে পারে। এছাড়া, হাড়ে দুর্বলতার ফলে দুর্বল দেহভঙ্গির জন্য মহিলাদের মধ্যে কুঁজ বা কাইফোসিস দেখতে পাওয়া যায়।
এর প্রধান কারণ কি?
মেনোপজের আগে ওভারি বা ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হওয়া হরমোন হাড়ের গঠন ও পুনরায় শোষণে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু বয়সের সঙ্গে ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা ও হরমোন কমতে থাকে। ডিম্বাশয়ের হরমোনের স্বল্প মাত্রার কারণে শরীরে হাড়ের পুনঃশোষণের হার বেড়ে যায় আর উল্টোদিকে হাড়ের অবক্ষেপণের মাত্রা অপেক্ষাকৃতভাবে মন্থর হয়ে পড়ায় হাড় দুর্বল হয়ে যায়। এভাবে হাড়ের ভঙ্গুরতা বেড়ে যায় এবং মেনোপজের পর প্রথম কয়েক বছরে হাড়ের জোর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যায়।
যেসমস্ত রোগীরা দেহভঙ্গি ও ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারার কারণে অত্যধিক পড়ে যান, তাঁদের হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেশি থাকে। শারীরিক কাজকর্মের অভাবও হাড় ভঙ্গুরতার ঝুঁকি নিয়ে আসে। মদ্যপান ও ধূমপান অতিরিক্ত ঝুঁকির কারণ।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিবর্তিত মাত্রা, অ্যানিমিয়া, থাইরয়েডের ত্রুটিপূর্ণ কাজকর্ম, ভিটামিন ডি’র অভাব এবং লিভারের ওপর মদ্যপানের কুপ্রভাব থেকে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। সেজন্য, থাইরয়েডের কার্যকারিতা পরীক্ষা এবং রক্তরসে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা মূল্যায়নের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হতে পারে। রোগীর দেহে হাড় ভাঙার সন্দেহ হলে এক্স-রে বাধ্যতামূলক। 1.5 ইঞ্চির বেশি উচ্চতা হ্রাস পেলে এক্স-রে ইমেজিং পরীক্ষার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
বোন ডেনসিটি স্ক্যান বা ডিইএক্সএ স্ক্যান নামে পরিচিত ইমেজিং অধ্যয়নের সাহায্যে অস্টিওপোরোসিস এবং তার তীব্রতা রয়েছে এমন হাড়গুলিকে সনাক্ত করা হয়।
এর চিকিৎসায় রয়েছে, হাড় মজবুত করার জন্য ক্যালিসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট এবং হাড়ের অবক্ষেপণের হার কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়। যদিও, হরমোন প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয় না। হাড়ে খনিজ উপাদানের ঘনত্বের অনবরত তদারকি করতে হয় এবং পড়ে গিয়ে অথবা আঘাত পেয়ে হাড় ভাঙার ঘটনা এড়াতে রোগীকে দৈনন্দিন জীবনে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।