গর্ভাবস্থায় পেলভিকের ব্যাথা কি?
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার মধ্যে অনেকগুলি শারীরিক পরিবর্তন হয়, এক্ষেত্রে পেলভিকে ব্যাথা কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বাচ্চার বৃদ্ধির ফলে শরীরের মধ্যে স্থান বড় হয় এবং তার ফলে এই অস্বস্তিদায়ক ব্যাথা হয়। তবে কখনও কখনও এটি কোনও বেঠিক ঘটনার লক্ষণ হতে পারে। কখন চিকিৎসাগত সাহায্য প্রয়োজন, তা শরীর এবং তার লক্ষণগুলির বহিঃপ্রকাশ দেখে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
বিভিন্ন কারণের জন্য গর্ভাবস্থায় পেলভিক ব্যাথার অনুভুতি হয়। গর্ভবতী মহিলা ব্যাথা অনুভব করতে পারেন বিশেষত সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়, হেঁটে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময়, ঘুমন্ত অবস্থায় একপাশ থেকে অন্য পাশে ফেরার সময় ও নিচু হওয়ার সময়। গর্ভাবস্থায় পেলভিক ব্যাথার কিছু বিশেষ লক্ষণগুলি হলো:
- পিঠের নীচের অংশে ব্যাথা - একপাশে বা দুপাশে।
- পেরিনিয়াল ব্যাথা - মলদ্বার ও যোনির মধ্যবর্তী অংশে ব্যাথা।
- পিউবিক অঞ্চলের ওপরে তলপেটের নীচে ব্যাথা।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণের জন্য পেলভিকে ব্যাথা হতে পারে। সাধারণত এর প্রধান কারণ হল শরীরের ভিতরে বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য তৈরি হওয়া জায়গা এবং অন্যান্য কার্যকরী অঙ্গগুলির সমন্বয় সাধনের কারণে সৃষ্ট ব্যথা।এখানে গর্ভাবস্থার সময় পেলেভিকে অস্বস্তি ও ব্যাথার অন্যান্য কিছু কারণ রয়েছে:
- ওভারিতে সিষ্ট মূলত বেদনাদায়ক, বিশেষত তারা যদি আকারে বড় হয় বা ফেটে যায়। যদি আপনার ওভারিয়ান সিষ্ট হওয়ার পূর্ব ইতিহাস থাকে, তাহলে এই পর্যায়ে আপনাকে বিশেষভাবে যত্নশীল হতে হবে।
- শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে এবং গর্ভাশয়ের দিকের পরিবর্তনের সময় তার চারপাশের লিগমেণ্টগুলিকে প্রসারিত করার ফলে গর্ভাশয়ের লিগমেণ্টে ব্যাথা হতে পারে।
- সাধারণত বাচ্চার বেড়ে ওঠার কারণে তলপেটে চাপের সৃষ্টি হয় এবং কখনও কখনও তা ব্যাথার কারণ হতে পারে।
- সাধারণ বা স্বাভাবিকভাবে পেলভিক অঞ্চলে ব্যাথার বা অস্বস্তি বোধের জন্য পূর্বকালীন সংকোচন, নকল সংকোচন বা ব্র্যাকস্টন হিকস সংকোচনকে দায়ী করা হয়।
- গর্ভাবস্থায় ব্যাথা বৃদ্ধির জন্য মুত্রনালিতে সংক্রমণ ও কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা খুব সাধারণ ঘটনা , যা কখনও কখনও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।
- অন্যান্য গুরুতর সমস্যার মধ্যে রয়েছে এক্টোপিক গর্ভাবস্থা, গর্ভপাত, প্রাক-মেয়াদী প্রসব, গর্ভাশয়ে ফাইব্রয়েডস, কিডনিতে পাথর, অ্যাপেনডিসাইটিস ও প্ল্যাসেন্টাল অ্যাবরাপশন (এমন অবস্থা যেখানে ডিম্বকবাহী গর্ভপত্র সময়ের আগেই গর্ভাশয়ের থেকে আলাদা হয়ে যায়)।
কিভাবে এর নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
কোন অস্বাভাবিক অস্বস্তি অনুভব করলেই তাড়াতাড়ি তার নির্ণয় করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।এটা হতে পারে যে শিশুর জন্ম না হওয়া পর্যন্ত ব্যাথা পুরোপুরিভাবে কমবে না তবে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে। চিকিৎসক সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং ব্যাথার মূল কারণ খুঁজে বের করার জন্য আলট্রাসাউন্ড করার অনুরধ করেন।
চিকিৎসক গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন পেলভিক ব্যাথায় ভুক্তভুগি রোগীদের পেটকে উন্নত গর্ভাবস্থার সময় অবলম্বন দেওয়ার জন্য বেল্ট বা ক্রাচেস ব্যবহার করতে বলেন। তাদের পেলেভিক পেশী ও তার আশেপাশের এলাকার পেশীকে শক্তিশালী করার জন্য বা হিপ এবং জয়েন্টগুলির চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য কিছু সহজ ব্যায়ামের পরামর্শ ও থেরাপির সাহায্য নিতে বলা হয়। পেলভিকে ব্যাথা কমাতে কার্যকরী আরও কিছু সহজ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, সঠিক শোয়ার অবস্থা খুঁজে বার করা, আরামদায়ক জুতো পড়া,পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া,পর্যাপ্ত ব্যয়াম করা এবং কাজের মধ্যে থাকা, নিচু হওয়া এড়িয়ে চলা, যৌনমিলনের সময় সঠিক অবস্থান গ্রহন করা, সিঁড়ি দিয়ে চলার সময় সতর্কতা পালন ও তলপেটে ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্যকারী আইস প্যাক ব্যবহার করা।