মেজ সিনড্রোম কাকে বলে?
মেজ সিনড্রোম হল একপ্রকার ডিসটোনিয়া, এক ধরণের স্নায়বিক রোগ যাতে চোয়াল,জিভ এবং চোখের আশেপাশের পেশীর অনিচ্ছাকৃত সংকোচন বা বিচলন (ব্লেফারোস্প্যাজম) দেখতে পাওয়া যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গ কি কি?
মেজ সিনড্রোমের প্রধান লক্ষণ হল ডিসটোনিয়া (ওরোম্যান্ডিবুলার) এবং ব্লেফারোস্প্যাজম, এগুলিই এই রোগের মূল উপসর্গ।
- ওরোম্যান্ডিবুলার ডিসটোনিয়া - এই ধরণের ডিসটোনিয়ায় জিহ্বাসহ চোয়ালের পেশীগুলির অনিচ্ছাকৃত এবং প্রবল সংকোচন দেখতে পাওয়া যায়। এর ফলে কথা বলা বা খাওয়ার মতো স্বাভাবিক কাজগুলি করা কষ্টকর হয়ে ওঠে।
- ব্লেফারোস্প্যাজম - ব্লেফারোস্প্যাজম হল বারবার অনিচ্ছাকৃত ভাবে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বাতাস ও উজ্জ্বল আলোর মত বাহ্যিক উদ্দীপনার কারণে চোখে অতিরিক্ত অস্বস্তি হয়। এই সমস্যাটি ক্রমবর্ধমান যার ফলে পেশীর টান ও সংকোচনের হার বাড়তে থাকে এবং একসময় রোগীর পক্ষে চোখ খুলে রাখাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। ব্লেফারোস্প্যাজম সাধারণত প্রথমে শুধু একটি চোখকে (ইউনিল্যাটেরাল) এবং পরে অপর চোখটিকে (বাইল্যাটেরাল) আক্রমণ করে।
এর প্রধান কারণগুলি কি?
মেজ সিনড্রোমের কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই। যে যে কারণ সম্ভবত এই রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয় সেগুলি হল:
- বেসাল গ্যাংলিয়ার নেটওয়ার্কের ত্রুটি - মস্তিষ্কের বেসাল গ্যাংলিয়া নামক অঞ্চলের যে কোষগুলি চোখের পলক ফেলাসহ বিভিন্ন অনৈচ্ছিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মধ্যে ত্রুটি দেখা দিলে মেজ সিনড্রোম হতে পারে।
- পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - পারকিনসন্স রোগের জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মেজ সিনড্রোম বিকশিত হতে পারে।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
মেজ সিনড্রোম অত্যন্ত বিরল একটি রোগ হওয়ার ফলে এর কোন নির্দিষ্ট নির্ণায়ক নেই। তবে একজন স্নায়ুবিশেষজ্ঞ রোগীর শরীরে উপস্থিত উপসর্গ বিশ্লেষণ করে রোগটিকে মেজ সিনড্রোম হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেন।
এন্টিস্প্যাজম বা সংকোচনরোধী ওষুধের ব্যবহার এই সমস্যায় সাহায্য করতে পারে।
ক্লোনাজিপাম, ট্রাইহেক্সিফেনীডাইল, ডায়াজীপাম এবং ব্যাকলোফেন প্রভৃতি ওষুধ মেজ সিনড্রোম বা ব্লেফারোস্প্যাজমের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এদের ফলাফল ক্ষণস্থায়ী বা অসন্তোষজনক। ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণাতে ব্লেফারোস্প্যাজমের চিকিৎসায় বটুলীনম নামক ওষুধের কথা বলা হয়েছে যেটি এই সমস্যার সবথেকে প্রচলিত ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। যদিও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে বোটক্স চিকিৎসায় আশানুরূপ উন্নতি দেখা যায়না।