লিম্ফোমা কাকে বলে?
লিম্ফোমা একপ্রকার ক্যান্সার যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল কোষের মৃত্যু না হওয়া সত্ত্বেও লিম্ফোসাইটের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। এর ফলস্বরূপ শরীরে অত্যধিক সংখ্যায় লিম্ফোসাইট সঞ্চিত হয়।
এই রোগের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি?
লিম্ফোমার কিছু প্রাথমিক উপসর্গ আছে যা সহজেই চোখ এড়িয়ে যেতে পারে বা স্বাস্থ্যের সাধারণ সমস্যা ভেবে অবহেলা করা হতে পারে। এই উপসর্গগুলো নিচে দেওয়া হল:
- ঘাড়, কুচকি বা বগলের লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি।
- অনিয়মিত ও বারবার জ্বর হওয়া।
- রাতে ঘাম হওয়া।
- হঠাৎ এবং অকারণ ওজন হ্রাস।
- খিদে কমে যাওয়া।
- চুল পড়া।
প্রাথমিক ভাবে অবহেলা করা হলে এই রোগের পরবর্তী পর্যায়ে আরো গুরুতর ও নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। সেগুলি হল
- হাড়ের যন্ত্রণা।
- শ্বাসের সমস্যা।
- দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি ও অবসন্নতা।
- পূর্ব লিখিত উপসর্গগুলোর ব্যাপ্তি ও তীব্রতা বৃদ্ধি।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
লিম্ফোসাইট নামক যে শ্বেত রক্তকণিকা বহিরাগত বিপদের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে তারা যখন বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত সংখ্যায় শরীরে তৈরি হতে শুরু করে তখন লিম্ফোমা রোগটির সৃষ্টি হয়।
লিম্ফোসাইটের এই অত্যধিক বৃদ্ধির কোন নির্দিষ্ট কারণ এখনো অবধি জানা নেই, তার জন্য গবেষণা চলছে। বয়স বা লিঙ্গের মতো কিছু বিষয়কে এই ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হয়, যদিও এখনও অবধি এই তথ্য প্রমাণিত হয়নি।
লিম্ফোমার সঙ্গে নিশ্চিতভাবে যুক্ত যে বিষয়গুলি এড়িয়ে চলা উচিত তারা হল স্থূলতা, কার্সিনোজেন (যেসব উপাদান ক্যান্সার ঘটায়), মদ্য, ধূমপান, তেজস্ক্রিয় পদার্থ ও তামাক।
এটি কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিত্সা করা হয়?
লিম্ফ ক্যান্সারের উপসর্গ শরীরে দেখা গেলে চিকিৎসক বা হেমাটোপ্যাথলজিস্ট বায়োপ্সির নির্দেশ দেন যার সাহায্যে রোগটি নির্ণয় করা যায় এবং জানা যায় শরীরে কোন প্রকারের কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটেছে।
লিম্ফোমা কোষ খুঁজে পাওয়া গেলে পরবর্তী পর্যায়ে আরও কিছু পরীক্ষা করা হয়, যেমন বুকের এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা, কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) বা ম্যাগনেটিক রেসোনান্স ইমেজিং (এম আর আই) যার সাহায্যে দেহের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে জানা যায়।
ক্যান্সার কোন স্টেজে আছে তার উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে।
রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের সবথেকে প্রচলিত চিকিৎসা ওষুধপ্রয়োগ; যদিও পরবর্তী পর্যায়ে কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন ব্যবহৃত হয়। রিটুকসীম্যাব জাতীয় কিছু ওষুধ যারা ক্যান্সার আক্রান্ত B-কোষগুলিকে আক্রমণ করে তারাও এই পর্যায়ের চিকিৎসায় সাহায্য করে। বিশেষ ক্ষেত্রে যখন হাই ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পূর্ন অনুপস্থিতি) দেখতে পাওয়া যায় তখন চিকিৎসক অস্থিমজ্জা অথবা স্টেমসেল প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন যাতে শরীরে নতুন ও সুস্থ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে।