লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা যকৃৎ প্রতিস্থাপন কি?
লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা যকৃৎ প্রতিস্থাপন হলো একধরনের অস্ত্রোপচার, যেখানে রোগীর ক্ষতিগ্রস্ত লিভার বা যকৃৎ ওষুধ অথবা থেরাপির সাহায্যে নিরাময় সম্ভব হয় না বলে, তা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া হয় এবং তার পরিবর্তে সুস্থ লিভার বসানো হয়।
এটি কেন করা হয়?
এমন অনেক লক্ষণ রয়েছে যা লিভারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিকলতার ইঙ্গিতবাহক এবং এরজন্য ব্যক্তির জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। লিভার ফেইলিওরের কারণে হতে পারে এমন প্রাথমিক ও বৈশিষ্ট্যসূচক নয় লক্ষণগুলি হল
- বমি বমি ভাব।
- ডায়রিয়া বা পেট খারাপ।
- ক্লান্তি।
- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া।
- সবসময় পেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া (আরও পড়ুন: পেট ব্যথার কারণ)।
- তলপেট এবং পা ফুলে যাওয়া।
বৈশিষ্ট্যসূচক লক্ষণগুলি হল
- অন্ত্রে রক্তপাত - লিভারের কাজ হল রক্তপ্রবাহ থেকে কার্যকরীভাবে অ্যামোনিয়া এবং বিলিরুবিন অপসারণ করা। লিভার ফেইলিওর ক্ষেত্রে, যকৃতের রক্তবাহিকার ঝিল্লিগুলি পাতলা হয়ে যায় এবং এই অঙ্গ অধঃপতিত পদার্থের অপসারণে ব্যর্থ হয় আর তার ফলে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়। যকৃতের পাতলা এবং ছোট শিরা অথবা ভ্যারিকেজ (শিরা প্রসারিত হওয়া বা ফুলে ওঠা) রক্তপ্রবাহের চাপ বহন করতে না পেরে ফেটে যায় এবং অন্ত্রের নালীতে রক্তক্ষরণ আরম্ভ হয়। গ্যাসট্রোইন্টেস্টিনাল রক্তক্ষরণ গুরুতর এবং প্রাণঘাতী হতে পারে।
- তরল প্রতিধারণ - লিভারের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারিতা হল নির্দিষ্ট কিছু ধরণের তরলকে পুনঃশোষন করে রক্তপ্রবাহে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া। লিভারের অসুস্থতায় বা বিকলতায় অ্যালবুমিন ও অন্যান্য প্রোটিনের উৎপাদন কমে যায়। তার ফলে অভিস্রবণ চাপ বিঘ্নিত হয়, যা রক্তপ্রবাহ থেকে তরলের ঘাটতি হওয়াকে প্রতিরোধ করে। তারপর এই তরল মুক্ত হয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হওয়ার ফলে হাইড্রোথোরাক্স ও পেডাল ওডেমা অর্থাৎ বুক কিংবা পায়ে জল জমে। এটা প্রাণঘাতী না হলেও শরীর থেকে একে নিষ্কাশন করার প্রয়োজন রয়েছে।
- জন্ডিস - লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট হলে লিভার রক্তপ্রবাহ থেকে নির্দিষ্ট কিছু বিপাকীয় বস্তু নিষ্কাশিত করতে পারে না। বিলিরুবিন এমন একটি যৌগ যেটি হিমোগ্লোবিন ভেঙে তৈরি হয় এবং যখন বিলিরুবিনের মাত্রা বাড়ে, তখন শরীর হলুদ হয়ে উঠতে শুরু করে। এই অবস্থাকেই সাধারণত জন্ডিস বলা হয়। এছাড়াও প্রচণ্ড জ্বর এবং বমিভাব দেখা দিতে পারে।
এটি কাদের প্রয়োজন?
যকৃৎ প্রতিস্থাপন শুধুকেবলমাত্র লিভারের বিকলতা উন্ন-পর্যায়ে চলে গেলে করা হয়, তখন তা আর ওষুধের সাহায্যে নিরাময় সম্ভব হয় না। লিভারের ফেইলিওরের সাধারণ কারণগুলি নিচে বর্ণনা করা হল:
- সিরোসিস - এই ক্ষেত্রে বিবিধ অসুখের জন্য লিভারের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে এবং সিরোসিসের কারণে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না।
- বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া - সদ্যজাত এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এই বিরল অসুস্থতাটি লক্ষ্য করা যায়, যেখানে লিভার এবং ক্ষুদ্রান্তের মাঝে পিত্তনালী অবরুদ্ধ বা অনুপস্থিত থাকে, এক্ষেত্রে অবিলম্বে লিভার প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য অবস্থা
এটি কিভাবে সম্পন্ন করা হয়?
লিভার প্রতিস্থাপন পদ্ধতির জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
অবস্থা এবং রোগীর লিভারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিকলতার পর্যায় অনুযায়ী লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপনের জন্য সুস্থ লিভার সাধারণত অর্গান বা অঙ্গ ব্যাঙ্কগুলি থেকে পাওয়া যায়, যেখানে মৃত্যুর পর নথিভুক্ত দাতাদের লিভার সংরক্ষণ করা থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ মানুষ অথবা আত্মীয়রা তাদের লিভারের কিছুটা অংশ দান করেন অর্থের বিনিময় অথবা চিন্তার কারণে।
প্রথমে ওই নষ্ট হয়ে যাওয়া লিভারটিকে রোগী/গ্রহীতার দেহ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যখন যন্ত্রের সাহায্যে রক্তপ্রবাহ স্থিতিশীল হয়, তখন দাতার থেকে পাওয়া সুস্থ লিভারটিকে গ্রহীতার শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি সংকটময় এবং অত্যন্ত যন্তের প্রয়োজন হয় এবং 5-6 ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। রোগীকে নির্দিষ্ট কিছু ধরণের ওষুধের সহায়তা দিতে হয়, যাতে গ্রহীতার শরীর অন্যের শরীরের অঙ্গকে গ্রহণ করতে পারে।
এই ধরনের প্রতিস্থাপনে সাফল্যের হার অনেক বেশি, কিন্তু এরপর রোগীর যথাযথ পরিচর্যা এবং যত্ন প্রয়োজন।