লামবার্ট-ইটঅনমায়েস্থেনিক সিনড্রোম কি?

লামবার্ট-ইটঅনমায়েস্থেনিক সিনড্রোম (এলইএমএস) হল একপ্রকার অটোইমিউন ডিজিজ (যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধকারী ব্যবস্থা নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেই আক্রমণ করে) যা ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশীগুলির ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে পেলভিক বা শ্রোণী ও উরুর অংশে। দেখা গিয়েছে, প্রায় 60 শতাংশ ক্ষেত্রেই এই রোগ ফুসফুসের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত। মূলত বয়স্ক এবং যাদের ধূমপানের ইতিহাস রয়েছে, তাদের মধ্যে এটি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এলইএমএস-এর ঘটনা খুবই সাধারণ পেশী-সংক্রান্ত অটোইমিউন রোগ মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিসের চেয়ে 46 গুণ কম দেখা য়ায়। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে সাধারণত এই রোগ (60%-75%) বেশি দেখা যায়।

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

এলইএমএস-এর প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পায়ের উপরিভাগ ও পাছার চারপাশের অঞ্চলের পেশীর দুর্বলতা। একটি বা দু’টি পায়েরই নড়াচড়া করার ক্ষমতা চলে যাওয়া এর আরেকটি সাধারণ উপসর্গ। কাঁধ ও হাতের পেশীতেও প্রভাব পড়তে পারে এই অবস্থায়। এলইএমএস ও মায়েস্থেনিয়া গ্রেভিসের লক্ষণগুলি অনেকটাই একরকম, যেমন চোখের পেশীর দুর্বলতা এবং কথা বলা, খাওয়া ও ঢোক গেলার প্রয়োজনীয় পেশীগুলির দুর্বলতা, কিন্তু এর তীব্রতা মৃদু হয় । কিছু রোগীর আবার মুখ শুকিয়ে যাওয়া, যৌনকামনা কমে যাওয়া, কম ঘাম হওয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো উপসর্গও উপলব্ধি করেন।

এর প্রধান কারণগুলি কি কি?

এই রোগটি দু’টি ধরন রয়েছে:

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্মল সেল লাং ক্যান্সার ( একপ্রকার ফুসফুসের ক্যান্সার) এই রোগটির জন্য দায়ী থাকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা সুস্থ টিস্যুগুলিকে ভুলবশত বহিরাগত জীবদেহ ভেবে বসে এবং তাতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

কিভাবে এর নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা হয়?

এই রোগটি প্রধানত চিহ্নিত করা হয় চিকিৎসাজনিত শারীরিক পরীক্ষা, পেশীর ইলেক্ট্রোফিজিওলজিক টেস্ট (যদি দরকার হয়) ও অ্যান্টিবডির টেস্টের মাধ্যমে। পেশীর ইলেক্ট্রিক্যাল সক্রিয়তা পরীক্ষার জন্য ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি করা হতে পারে। স্মল সেল লাং ক্যান্সারের রোগীদের মধ্যে যেহেতু অ্যান্টি-ভিজিসিসি অ্যান্টিবডি উপস্থিত থাকে, এলইএমএস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই অ্যান্টিবডির পরীক্ষাও করা হতে পারে। স্মল সেল লাং ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের পাশাপাশি কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি (সিটি) বা পজিট্রন এমিসন টোমোগ্রাফি (পিইটি)-র মতো বুকের পরীক্ষাগুলি করানোর পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক।

রোগীর বয়স, সামগ্রিক শারীরিক অবস্থা ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ক্যান্সারের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে ভিন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এলইএমএস -এর চিকিৎসা ভিন্ন হয়। বর্তমানে এটি নিরাময়ের কোনও উপায় জানা নেই। বিভিন্ন কোলিনার্জিক ওষুধ ও অ্যান্টিকোলিনেস্টেরেজ এর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এই রোগের উৎপত্তির অন্তর্নিহিত কারণগুলির চিকিৎসার মাধ্যমে এলইএমএস নিরাময় সম্ভব হতে পারে। উৎপত্তির প্রকৃত কারণ জানা গেলে এর চিকিৎসা করা সহজ হয়। যথাযথ চিকিৎসা না হলে জটিলতা বাড়তে এবং উপসর্গ গুরুতর পর্যায়ে চলে যেতে পারে।

Read more...
Read on app