হিমোফিলিয়া কি?
হিমোফিলিয়া একটি বিরল, জিনের দশা, যা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না। আর এর ফলে প্রচুর রক্তপাত হয়ে যায়, এমনকি সামান্য আঘাতেও এবং কখনও কোনও আঘাত ছাড়াই ভিতরে রক্তপাত হতে পারে। একে ব্লিডার’স ডিজিজও বলা হয়।
এর প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলো কি কি?
হিমোফিলিয়া স্বাভাবিকভাবে রক্ত তঞ্চনে বাধা দেয়। আঘাত লাগার পর অন্যান্যদের তুলনায় হিমোফিলিয়া রোগীদের দীর্ঘক্ষণ রক্তপাত হতে পারে আর অত্যধিক রক্তপাতের কারণে অনেকসময় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে, যদি তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না করা হয়।
- বাইরের রক্তপাতের লক্ষণ
- মুখে রক্তপাত
- সামান্য কেটে গেলেও প্রচুর রক্তপাত
- নাক দিয়ে রক্তপাত
- ভিতরের রক্তপাতের লক্ষণ
- প্রস্রাব ও মলের সাথে রক্ত (আরও পড়ুন: প্রস্রাবে রক্তের কারণ)
- শরীরের বড়ো পেশীর থেকে রক্তপাতের কারণে দীর্ঘ কালশিটে দাগ
- কোনও আঘাত ছাড়াই জোড় বা গাঁট থেকে রক্তপাত
- সামান্য ধাক্কাতে মস্তিষ্কে রক্তপাত অথবা গুরুতর আঘাত
এর প্রধান কারনগুলো কি কি?
হিমোফিলিয়া আক্রান্তদের শরীরে থ্রম্বোপ্লাস্টিন নামক অভাব দেখা দেয়, যার ফলে এই সমস্ত ব্যক্তিদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। সমস্যাটি এক্স-যুক্ত জিন বাহিত হওয়ায় বেশি মাত্রায় ছেলেরাই আক্রান্ত হয়। একটি হিমোফিলিক মেয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জন্মের আগেই মারা যায়।
হিমোফিলিয়া দু’ধরনের হয়:
- হিমোফিলিয়া A
- এর বৈশিষ্ট হলো অ্যান্টিহিমোফিলিক গ্লোবুলিন (ফ্যাক্টর VII)-এর অভাব।
- হিমোফিলিয়ার সমস্যায় প্রায় চার-পাঁচটি এই ধরনের অন্তর্গত
- এটি বেশি গুরুতর।
- সেইজন্য, একটা ছোটো ক্ষত থেকেও দীর্ঘক্ষণ ধরে রক্তপাত হতে পারে।
- হিমোফিলিয়া B
- এটা ক্রিসমাস অসুখ নামেও পরিচিত।
- প্লাজমা থ্রম্বোপ্লাস্টিন কম্পোনেন্ট দোষে হয় (পিটিসি বা ফ্যাক্টর IX)।
এটি কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
জিনগত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয় এবং তারপর জেনেটিক কাউন্সিলিং করা হয়। জেনেটিক কারণে হয় বলে হিমোফিলিয়া সারানো যায় না। যেহেতু, প্রধান লক্ষ্য হলো, জোড় থেকে রক্ত পড়া ও এর জটিলতা রোধ করা, তাই গুরুতর রকমের হিমোফিলিয়া A ও B রয়েছে, এরকম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে জরুরিকালীন চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া দরকার। ধারাবাহিক রক্তপাতের সমস্যায় হিমোফিলিয়া আক্রান্তদের ফ্যাক্টর VII ও ফ্যাক্টর IX রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি প্রয়োজন।
- রক্ত ও প্লাজমা দাতাদের উন্নতমানের স্ক্রিনিংয়ের ফলাফল নিরাপদ প্লাজমা-আহরক ফ্যাক্টর VII ও ফ্যাক্টর IX কনসেনট্রেটস।
- হিমোফিলিয়া A আক্রান্তদের ক্ষেত্রে রক্ত পরিব্যাপ্তি বা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের জন্য হাতে যে বিকল্প রয়েছে তা বাছার জন্য় ভাইরাল নিরাপত্তা প্রাথমিক মাণদণ্ড হওয়া উচিত।
- মৃদু থেকে মাঝারি হিমোফিলিয়া A আক্রান্তদের জন্য যখনই উপযুক্ত মনে হবে ডিডিএভিপি ব্যবহার করা উচিত।
- হিমোফিলিয়া B আক্রান্তদের জন্য় রক্ত তঞ্চনের সহায়তায় বিশুদ্ধ ফ্যাক্টর IX কনসেনট্রেটস ব্যবহার করা উচিত। অন্যান্য ক্ষেত্রে, প্রোথ্রম্বিন কমপ্লেক্স কনসেনট্রেটস ব্যবহার বিবেচনায় আনা যেতে পারে।
- অপারেশনের সময় এবং অপারেশনের পর অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় থেরাপিউটিক সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে, তবেই হিমোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদেরদের অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক, ব্লাড ব্যাঙ্ক অথবা ওষুধের দোকান, সার্জনের, এবং কোয়াগুলেশন ল্যাবোরেটরি কর্মীর নিবিড় সহযোগিতা দরকার।
(আরও পড়ুন: রক্ত জমাট বাঁধা অসুখের ধরণ)