গ্রেভস ডিজিজ কি?
গ্রেভস ডিজিজ হল একটা অবস্থা যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে এবং থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এটা হল একটা অটোইমিউন অবস্থা যেখানে অ্যান্টিবডিকে থাইরয়েড-স্টিমুলেটিং ইমিউনোগ্লোবুলিন্স (টিএসআই) বলা হয়, যেটা স্বাভাবিকভাবে বাইরের পদার্থগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে, থাইরয়েড গ্রন্থিগুলির কোষগুলিতে কাজ করে এবং থাইরয়েড হরমোনের নির্গমন বাড়িয়ে দেয়। থাইরয়েড গ্রন্থির আকার প্রজাপতির মতো হয় এবং আপনার গলার সামনের দিকের নিচের অংশে অবস্থিত থাকে। থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা মুক্ত হওয়া হরমোনগুলি কর্মশক্তি দিতে এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির যথাযথ ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয়।
ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রেভস ডিজিজের ঘটার সম্ভাবনা পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যে বেশি হয়।
এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
আপনি উপসর্গগুলি আস্তে আস্তে বুঝতে পারতে পারেন, বা তা হঠাৎ করে দেখা দিতে পারে। গ্রেভস ডিজিজের সাধারণভাবে দেখা যাওয়া উপসর্গগুলি হল:
- চোখ বেড়িয়ে আসা।
- অনিচ্ছাকৃত ওজন কমে যাওয়া।
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
- বিরক্তি ভাব।
- ঘাবড়ে যাওয়া।
- হাত কাঁপা।
- গরম সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
- ফোলা গলা।
- পাতলা মল।
- ঘুম না আসা।
- চুল পড়ে যাওয়া।
যদি ইমিউন সিস্টেম চোখের কোষের ক্ষতি করে তবে এই নীচে দেওয়া উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
- চোখের আশেপাশে ফুলে যাওয়া।
- শুষ্ক চোখ।
- লালচে ভাব এবং ব্যথা (আরও পড়ুন: লাল চোখের চিকিৎসা)।
- জ্বালা ভাব।
- ঠিক করে দেখতে না পাওয়া।
খুব অল্প ক্ষেত্রে, হাঁটুর নীচে এবং মাঝে মাঝে পায়ের পাতার ত্বকের উপর মোটা, লাল দাগ দেখা যায়।
এর প্রধান কারণগুলি কি কি?
এটা একটা অটোইমিউন রোগ যার কারণে আমাদের রক্তের অ্যান্টিবডিগুলি থাইরয়েড কোষে আবদ্ধ থাকে এবং অত্যধিক থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন করে। এই অবস্থা মূলত 30 থেকে 50 বছর বয়সী মহিলাদের আক্রান্ত করে। এই অবস্থার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
গ্রেভস ডিজিজ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ানোর কারণগুলি হল:
- গ্রেভস ডিজিজ হওয়ার পরিবারিক ইতিহাস থাকা।
- ধূমাপান করা।
- গর্ভবতী হওয়া।
- চাপে থাকা।
- টাইপ 1 ডায়াবেটিস মেলিটাস থাকা।
- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস থাকা।
এটি কীভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
আপনার ডাক্তার গলায় কোন ফোলা আছে কিনা তা সনাক্ত করতে প্রাথমিকভাবে একটি শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং আপনার শরীরের থাইরয়েড হরমোন (টি 3, টি 4, এবং টিএসএইচ) এবং অ্যান্টিবডির (টিএসআই) স্তর সনাক্ত করতে রক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন। থাইরয়েড গ্রন্থি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতটা আইয়োডিন গ্রহণ করে তা খুঁজে বের করতে ডাক্তার রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন আপটেক পরীক্ষা (আরএআইইউ) নামক একটি ইমেজিং পরীক্ষা করারও পরামর্শ দিতে পারেন।
গ্রেভস ডিজিজের জন্য উপলব্ধ চিকিৎসাগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-থাইরয়েড ড্রাগস, রেডিওআয়োডিন থেরাপি, এবং থাইরয়েড সার্জারির মত ব্যবস্থাগুলি। আপনার ডাক্তার আপনার অবস্থার উপর ভিত্তি করে একটি উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনার নির্বাচন করবেন। যখন আপনি গর্ভবতী হন, বা আপনার অ্যালার্জিগত প্রতিক্রিয়া থাকে, বা অ্যান্টি-থাইরয়েড ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে বা আপনার গ্রন্থি খুব বড় হয়ে যায় তখন থাইরয়েডের সার্জারিই হল শেষ উপায়।
আমাদের শরীরের থাইরয়েডের মাত্রার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে তা অবস্থাটির চিকিৎসার আরও ভাল পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।