ফ্যামিলিয়াল হাইপোফসফাটেমিয়া - Familial Hypophosphatemia in Bengali

Dr. Ayush PandeyMBBS,PG Diploma

December 01, 2018

March 06, 2020

ফ্যামিলিয়াল হাইপোফসফাটেমিয়া
ফ্যামিলিয়াল হাইপোফসফাটেমিয়া

ফ্যামিলিয়াল হাইপোফসফেটেমিয়া কি?

ফ্যামিলিয়াল হাইপোফসফেটেমিয়া হলো এমন একটি জিনঘটিত অসুখ যা সাধারণত দেখা যায় না, এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর দেহে রক্তে ফসফেটের মাত্রা হ্রাস পায় এবং কিডনিতে ভিটামিন ডি-এর বিপাক ক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসে। এই রোগের ফলে হাড়ে বিকৃতি আসে যেমন অস্টিওম্যালেসিয়া, রিকেট, হাড়ের প্লেটে ত্রুটির মতো নানান সমস্যা ফুটে ওঠে রোগীর দেহে।

এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?

সাধারণত, অল্পবয়সীদেরই এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। জন্মের পর 18 মাস বয়স থেকে শরীরে লক্ষণ ফুটে উঠতে শুরু করে। তবে, বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যেসব উপসর্গগুলি লক্ষ্যণীয়:

শিশুদের মধ্যে:

  • মাথার আকারে অস্বাভাবিকতা
  • সময়ের আগে খুলির হাড়ের সমন্বয় ঘটা

বাচ্চাদের মধ্যে:

  • পা-এর গড়ন ধনুকের আকৃতি নেওয়া বা হাঁটু ভিতর দিকে বেঁকে যাওয়া
  • বয়সের তুলনায় শরীরে গঠন ছোট আকার নেওয়া
  • কোনও রকম দৈহিক কাজ করলে শরীরে ব্যথা অনুভব করা

প্রাপ্তবয়ষ্কদের মধ্যে:

  • অস্টিওম্যালেসিয়া বা হাড় দুর্বল হওয়ার কারণে ব্যথা অনুভব
  • হাড়ে চিড় ধরার ঝুঁকি বৃদ্ধি
  • আর্থ্রাইটিস বা গেঁটেবাতের ঝুঁকি
  • টেন্ডন অর্থাৎ পেশীতন্তুর মধ্যে খনিজ পদার্থ জমতে থাকা

এর প্রধান কারণ কি?

শরীরে এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয় জিনের মিউটেশন অর্থাৎ পরিব্যক্তির কারণে, আর তার ফলে শরীরে অবস্থিত বিভিন্ন জিনের বিকৃতি ঘটে। জিনের বিকৃতির এই সমস্যা পরিবারের উত্তরসূরিদের মধ্যে, মানে পিতামাতার থেকে সন্তানদের মধ্যে বাহিত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সাধারণত মিউটেশন যেখানে দেখা যায়, সেখানেই পিএইচইএক্স জিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই জিন আমাদের শরীরে ফসফেট স্থানান্তরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। জিনগুলি শরীরের বিভিন্ন প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করে, আর এই প্রোটিনগুলি ফসফেটকে পুনরায় শোষণ করার জন্য দায়ী থাকে। জিনের এই বিকৃতির জন্য শরীরের অবস্থিত প্রোটিনের কার্যকারিতায় অস্বাভাবিকতার কারণে রক্তে ফসফেটের ঘাটতি দেখা দেয়। নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমরের কারণে এই ধরণের সমস্যা শরীরে দেখা দেওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।

এছাড়া, আর যে কারণ দায়ী থাকে:

  • অটোসোমাল ডমিন্যান্ট টাইপ (এই ধরণের মিউটেশনে ক্রোমোজোমের পরিবর্তন হয়)
  • এক্সযুক্ত হাইপোফসফেটেমিয়া (রিকেট রোগের আরও মারাত্মক অবস্থা)
  • অটোসোমাল রিসিসিভ টাইপ (দুই ধরণের অস্বাভাবিক রকমের জিনের উপস্থিতি থেকে সমস্যা)

কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা হয়?

এই ধরণের রোগ নির্ধারণের জন্য খুঁটিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। সেই সঙ্গে নানারকম ল্যাবরেটরি পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া দরকারি। ভিটামিন ডি ও ফসফেটের মাত্রা জানার জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষার সাহায্য নিতে হয়। প্যারাথাইরোড হরমোন ও ক্যালসিয়ামের মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখতে হয়, কারণ এসব ক্ষেত্রে এই দু’টির মাত্রার ভারসাম্য ঠিক থাকে না। এক্স-রে, এমআরআই ও পজিট্রন এমিসন টোমোগ্রাফি (পিইটি) স্ক্যানের মাধ্যমে হাড়ের বিকৃতি নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি:

  • ফসফেট সমৃদ্ধ সম্পূরক লবণ গ্রহণ
  • ভিটামিন ডি (সক্রিয় রূপ) আহরণ
  • এক্স ক্রোমোজোমযুক্ত হাইপোফসফেটেমিয়ার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ব্যবহার করা হয়।

ভিটামিন ডি এবং ফসফেটে একসঙ্গে নেওয়ার কারণে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অন্যান্য জটিলতা যাতে না দেখা দেয়, সেজন্য শরীরে খনিজের মাত্রা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।এই ধরণের সমস্যায় সহায়ক চিকিৎসা অবশ্যই অপরিহার্য। আর সেই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত পরামর্শ দেন চিকিৎসক, যাতে রোগীর ঠিকমতো যত্ন নেওয়া হয়।



তথ্যসূত্র

  1. National Organization for Rare Disorders. Familial Hypophosphatemia. USA. [internet].
  2. Linglart A, Biosse-Duplan M, Briot K, Chaussain C, Esterle L, Guillaume-Czitrom S, Kamenicky P, Nevoux J, Prié D, Rothenbuhler A, Wicart P, Harvengt P. Therapeutic management of hypophosphatemic rickets from infancy to adulthood. Endocr Connect. 2014 Mar 15;3(1):R13-30. PMID: 24550322
  3. Varsha S. Jagtap, Vijaya Sarathi, Anurag R. Lila, Tushar Bandgar, Padmavathy Menon, Nalini S. Shah. Hypophosphatemic rickets. Indian J Endocrinol Metab. 2012 Mar-Apr; 16(2): 177–182. PMID: 22470852
  4. National Center for Advancing Translational Sciences [internet]: US Department of Health and Human Services; Hypophosphatemic rickets
  5. Clinical Trials. Milk Products in the Treatment of Hypophosphatemic Rickets. U.S. National Library of Medicine. [internet].